বগুড়া: বগুড়া উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত জেলা। রকমারি ফসল ফলানোর দিক থেকে সারাদেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিত রয়েছে।
বগুড়ায় এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে প্রথম দফায় বন্যার পানি বাড়লেও প্রকৃতির কাছে হার মানেনি এ জেলার কৃষকরা। প্রথম দফায় বাড়ার পর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে জমিতে নেমে পড়েন তারা। জমিতে নতুন করে ফসল ফলান।
কৃষকরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চোখের সামনেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সবমিলিয়ে সোনারঙা ধানে কৃষকের চোখে-মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
রোববার (২০ নভেম্বর) বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কেবলই সোনারঙা ধানের সমারোহ দৃশ্যমান। ধান গাছের ডগায় থোকায় থোকায় পুষ্ট ধান ঝুলছে। ধানের শীষে সোনারঙা ধারণ করেছে। অনেক ধান পুষ্ট হলেও এখনো কাঁচা রয়েছে। আর যেসব খেতের ধানে শীষ পরিপুষ্ট হচ্ছে তা পরিচর্যায় ও উপযুক্তগুলো কাটা-মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। ধান নিয়ে গ্রামীণ জনপদগুলোয় কৃষকদের এক ধরনের কর্মযজ্ঞতা চলছে।
শাজাহানপুর, সদর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার তরিকুল ইসলাম, ময়েজ উদ্দিন, তারাজুল ইসলাম, হোসেন আলীসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, বংশপরমম্পরায় তারা কৃষক। কৃষিকাজই তাদের প্রধান কর্ম। বিগত মৌসুমে ধানের দাম ভালো পেয়েছেন তারা। তাই এবারো তারা পর্যাপ্ত শ্রম দিয়েছেন চাষের কাজে। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা এবার গেল বারের তুলনায় রোপা-আমন মৌসুমে অনেক বেশি জমিতে ধান লাগিয়েছেন। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমনের জমি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
সোনাতলা উপজেলার হান্নান শেখ, শাজাহান মোল্লাসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, গেল বছরের মতো এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তাদের ওপর দিয়ে কিছুটা ধকল গেছে। তবে তেমন একটা ধকল পোহাতে হয়নি। এখানকার কৃষক কোন অবস্থাতেই দমেনি। হাত গুটিয়ে বসে না থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়া মাত্র যা ছিল তাই নিয়ে জমিতে নেমে পড়েন।
তারা জানান, ইতোমধ্যেই তারা রোপা-আমনে মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। বাজারে প্রতি মণ ধান ১২শ থেকে ১৪শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
ধানের এমন দাম তাদের মতো কৃষকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলেছেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।
নন্দীগ্রাম উপজেলার কৃষক ইমতিয়াজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এবার বোরো মৌসুমে তিনি প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। গেল সপ্তাহ থেকে জমির ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। রংপুর জেলার একদল শ্রমিক প্রতিবছর তার জমির ফসল কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে থাকেন। শ্রমিক দলের ৯ সদস্যের দলটি ইতোমধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মোট আবাদের প্রায় ১১ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি জানান, শ্রমিকের এ দলটি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরো জমির ধান কাটা সম্পন্ন করে এ এলাকার অন্যদের জমির কাজে হাত দেবেন। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াইয়ে খরচ হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
ফসলি মাঠের দূরত্বের ওপর ভিত্তি করেও ধান কাটা-মাড়াইয়ের চুক্তি হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। চাষ করা ধানের মধ্যে রয়েছে মিনিকেট, স্বর্ণা, কাটারিভোগ, রঞ্জিত, ব্রি ধান-১১, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫৮, ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৭, বিনা-৭ জাতের ধান অন্যতম।
তিনি জানান, বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট চাষাবাদের ৩১ শকতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলন হয়েছে ১৮-২০ মণ হারে।
বগুড়ার কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল সময়ের ব্যবধানে তরতর করে বেড়ে উঠেছে। যত্ন ও পরিচর্যায় কোনো খামতি রাখেননি কৃষকরা। এ বছর রোগ বালাইয়ের আক্রমণ অনেক কম ছিল। এখন ব্যাপক হারে ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ চলছে।
সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি কৃষক। কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন কৃষি ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২২
কেইউএ/এএটি