১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
১৪তম কিস্তির লিংক
___________________________________
যে অদৃশ্য কুঠুরির ভেতর এই নিউমেটিক টিউব চলে যাচ্ছে সেখানে ঠিক কী হয় তা পুঙ্খানুপুঙ্খ জানে না উইনস্টন। তবে এ সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা সে রাখে। দ্য টাইমসের কোনও একটি সংখ্যায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়ে গেলে সাথে সাথেই তা সংগ্রহ করে নেওয়া হয়। এরপর দ্রুত ওই বিশেষ সংখ্যাটি পুনঃমুদ্রণ করে আর মূল সংখ্যার সকল কপি ধ্বংস করা হয়। ফাইলে পুরনো কপির বদলে স্থান করে নেয় নতুন কপি।
বদলে ফেলার এই চর্চার প্রয়োগ যে কেবলই সংবাদপত্রের সংখ্যায়, তা নয়, পুস্তক, সাময়িকী, প্রচারপত্র, প্যাম্ফেলেট, পোস্টার, লিফলেট, চলচ্চিত্র, শব্দবার্তা, কার্টুন, ছবি থেকে শুরু করে যে কোনও সাহিত্যকর্ম বা প্রামাণ্য দলিল পর্যন্ত—যা কিছু রাজনৈতিক বা আদর্শিকভাবে গুরুত্ব বহন করে—তার সব কিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। এভাবেই দিনের পর দিন বলা যায় মিনিটের পর মিনিটেই অতীতকে করে তোলা হচ্ছে পাকাপোক্তভাবে নির্ভুল। এভাবেই পার্টির প্রতিটি অনুমান দালিলিক প্রমাণসহ হয়ে উঠছে ভ্রান্তিহীন। তা হোক কোনও সংবাদ, অথবা কোনও মতের প্রকাশ, সময়ের প্রয়োজনের সঙ্গে যার মিল নেই তার নথিটি থাকারও অবকাশ নেই। সকল ইতিহাসই আদতে একটি পাণ্ডুলিপি যা ঘষে পরিষ্কার করা হয়েছে নয়ত ঠিক যখনই প্রয়োজন হয়েছে লিখে ফেলা হয়েছে নতুন করে।
কাজ যখন শেষ তখন তার মধ্যে কোনও ভ্রান্তি ছিল—এমনটা প্রমাণের এতটুকু সুযোগ রাখা হয়নি। রেকর্ডস বিভাগের সবচেয়ে বড় অংশটি—উইনস্টন যে অংশে কাজ করে তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বড়। সেখানে কেবল তাদেরই গতায়ত—যারা এই ভুল ধরার কাজে আর বাতিল করা হয়েছে এবং ধ্বংস করা হবে—এমন বই, খবরের কাগজ এবং অন্যান্য নথি সংগ্রহের কাজে ন্যস্ত। দ্য টাইমসের যে সব সংখ্যায় রাজনীতির নতুন মেরুকরণ কিংবা বিগ ব্রাদারের ভুল ভবিষ্যবচনে বারবার পুনর্লেখন হয়েছে সেগুলো তার পুরনো তারিখ নিয়েই ফাইলভুক্ত হয়ে আছে। এই কপির বাইরে ওই সংখ্যার আর একটি কপিরও অস্তিত্ব রাখা হয়নি, যা এই অসামঞ্জস্যতার প্রমাণ হিসেবে খাড়া হতে পারে। বইগুলোও বারবার জব্দ করা হয়েছে, নতুন করে লেখা হয়েছে এবং অকপটে তা ফের বাজারে ছাড়া হয়েছে একটিবারের জন্যেও কোথাও স্বীকার করে নেওয়া হয়নি, বলা হয়নি যে এতে কিছু পরিবর্তন আনা হলো।
এমনকি লিখিত যেসব নির্দেশনা উইনস্টনের হাতে আসে, কাজ শেষ হওয়া মাত্র যেগুলোর অস্তিত্ব সে নিজেই বিলীন করে দেয়, তাতেও কোনও দিন বলা হয়নি যে ওটি ছিল নিজেদের ভুল, বরং বলা হয়েছে যা লেখা হয়েছে তা ভুল, মুদ্রণপ্রমাদ কিংবা ভ্রান্ত উদ্ধৃতি যা শুদ্ধতার খাতিরেই নতুন করে লেখা প্রয়োজন।
আসলে, প্রাচুর্য মন্ত্রণালয়ের নথিতে যখন পরিসংখ্যানগুলো পাল্টে দিচ্ছিল, তখন উইনস্টনের কাছেও বিষয়টি প্রতারণা বলে মনে হচ্ছিল না। একটি ফালতু জিনিস দিয়ে আরেকটি ফালতু জিনিসের প্রতিস্থাপন ছাড়া এটি আর কিছুই নয়। যা কিছুই হচ্ছে তার অধিকাংশেরই সঙ্গে বাস্তব জগতের কোনও কিছুর সম্পর্ক নেই। সবকিছুই যেন কেবলই মিথ্যা, কেবলই জালিয়াতি। পরিসংখ্যানগুলো তার মূল সংখ্যায় যেমন তামাশা, শুদ্ধিকরণের পরও একই তামাশা। চাইলেই এগুলো মাথা থেকে সরানো যাবে না। যেমন ধরুন প্রাচুর্য মন্ত্রণালয় তার পূর্ব ধারণা দিল সিকি বছরে ১৪৫ মিলিয়ন জোড়া জুতো তৈরি হবে। কিন্তু বাস্তবে তা গিয়ে দাঁড়ালো ৬২ মিলিয়ন জোড়ায়। এখন উইনস্টন পূর্ব ধারণার সংশোধনীতে লিখে দিল ৫৭ মিলিয়ন জোড়া। যাতে দাবি করা যায়, কোটা যা ছিলো তার চেয়ে বেশিই তৈরি হয়েছে। যাই বলুন না কেন, ৬২ মিলিয়নের হিসাবটি না ১৪৫ মিলিয়ন হিসাবের ধারে কাছের, না ৫৭ মিলিয়নের। আর এটা ভাবলেও অবাস্তব হবে না যে, আদৌ কোনও জুতোই প্রস্তুত হয়নি।
তবে অতীব বাস্তব যে, কেউ কখনওই জানবে না, সত্যিকারে কতগুলো জুতো প্রস্তুত হয়েছে, আর কেউ তা জানতে চাইবেও না। সবাই কেবল এটাই জানবে অতি বৃহৎ সংখ্যায় জুতো প্রস্তুত হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত চিত্র হতে পারে ওসেনিয়ার অর্ধেক লোকই নগ্নপায়ে পথ চলছে। নথিভুক্ত সকল তথ্যেরই একই দশা, হোক সে ছোট কিংবা বড়। সবকিছুই মিলিয়ে যাচ্ছে এক ছায়া-পৃথিবীর দিকে, আর তাতে শেষাবধি বছরের তারিখটা পর্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
হলের চারিদিকে একবার তাকিয়ে নিল উইনস্টন। উল্টোদিকের একই আকৃতির আরেকটি খুপড়িতে ছোট সুক্ষ্ম চেহারার কালো থুতনিওলায়া মানুষটি, নাম টিলোটসন, অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। হাঁটুর ওপর ভাঁজ করা একটি সংবাদপত্র আর মুখটা স্পিকরাইটের মাউথপিসের সঙ্গে লাগোয়া। টেলিস্ক্রিনের সঙ্গে তার গোপন কথা চলছে এমন একটা আবহ তৈরি করে নিয়েছে চারিদিকে। এরই মাঝে চশমার ভেতর দিয়ে উইনস্টনের দিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হানলো সে।
১৬তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (১৫) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।