১৯৮৪ (নাইনটিন এইটি ফোর)—বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, সাহিত্য সমালোচক ও সাংবাদিক জর্জ অরওয়েলের অমর গ্রন্থ। ১৯৪৯ সালে তার মৃত্যুর এক বছর আগে উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
১৯তম কিস্তির লিংক
___________________________________
হাতলবিহীন চীনা পাত্রে ওদের জিন এলো। ভিড় ঠেলে ওরা গিয়ে খাবার নিয়ে বসল ধাতব পাতের পাটাতনের টেবিলে, যার এক কোণায় কারও ফেলে যাওয়া থকথকে স্ট্যু পড়ে আছে, দেখে মনে হবে কেউ বমি করে রেখেছে।
জিনের পাত্রই প্রথম তুলে নিল উইনস্টন। একদণ্ড দম নিয়ে শরীরটাকে শক্ত করে নিল, আর তেল-স্বাদের তরলটুকু ঢেলে দিল গলদেশের গভীরে। চোখ দিয়ে বেরিয়ে আসা পানি মুছতে মুছতে তার মনে হলো ভীষণ ক্ষুধার্ত সে। চামচ ডুবিয়ে স্ট্যু তুলে গলায় ঢালতে লাগল। তরল স্যুপের মধ্যে গোলাপি মত দেখতে যে ছোট ছোট পিচ্ছিল টুকরোগুলো দেখা যাচ্ছে ওগুলো মাংসে তৈরি। স্ট্যুর পেয়ালা পুরোটা শেষ করার আগে দুজনের মুখে রা’ শব্দটিও ছিল না।
উইনস্টনের বাঁয়ে একটু পেছনের দিকের একটি টেবিলে একজন টানা বকবক করে যাচ্ছিল। হাঁসের প্যাক-প্যাক শব্দের মত ছিল সে উচ্চারণ। গোটা কক্ষে যে হৈচৈ চলছে তা ছাপিয়েও কানে লাগছিল তার শব্দ।
‘অভিধানের কাজ কেমন এগুচ্ছে?’—শোরগোলের মাঝে একটু জোর শব্দেই জানতে চাইল উইনস্টন।
‘ধীরে ধীরে’—বলল সাইম। ‘বিশেষণ নিয়ে কাজ করছি, ভালোই লাগছে। ’
নিউস্পিকের প্রসঙ্গে খুব দ্রুতই উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর মুখ। স্ট্যুর পেয়ালাটা একদিকে ঠেলে রেখে এক হাতে রুটি আর হাতে পনিরের টুকরোটি তুলে নিয়ে টেবিলের ওপর অনেকখানি ঝুঁকে গেল যাতে চিৎকার না করেই কথা বলা যায়।
‘একাদশ সংস্করণটিই চূড়ান্ত’—বলল সে। ‘আমরা ভাষাটির একটা চূড়ান্ত রূপ পাচ্ছি, এমন একটা রূপ যে এর বাইরে মানুষের কথ্য আর কিছু থাকবে না। আমরা কাজ শেষ করলে তোমাদের মত লোকেদের এর গোটাটাই ভালো করে শিখতে হবে। ধরো, আমাদের প্রধান কাজ নতুন নতুন শব্দ তৈরি। কিন্তু আসলে যা হচ্ছে, আমরা প্রতিদিন শব্দ ধ্বংস করছি—ঝাঁকে ঝাঁকে শব্দ, শত শত শব্দ। আমরা ভাষাটির হাড্ডি ছেঁটে ছোট করে দিচ্ছি। আমি বলতে চাই, এগারতম সংস্করণে এমন একটি শব্দও থাকবে না যা ২০৫০ সালের আগে বিলীন বা অকেজো হয়ে যাবে। ’
ক্ষুধার্তের মত বড় গ্রাসে রুটিতে কামড় বসাল, আর গিলল। আর কথা চলতে থাকল পণ্ডিতি ভঙ্গিমায়। চিমসে কালো চেহারাটা যেন অঙ্কিত ছবির রূপ নিল আর চোখের সেই সারাক্ষণের খুঁজে বেড়ানোর ভাবটা কেটে স্বপ্নময় হয়ে উঠল।
‘শব্দ ধ্বংস করা অসাধারণ একটা কাজ! ক্রিয়া আর বিশেষণগুলোর বড় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু শত শত বিশেষ্য থেকে মুক্তি মিলছে। সমার্থক শব্দগুলোই কেবল নয়, বাদ যাচ্ছে বিপরীতার্থকগুলোও। অন্য একটা শব্দের বিপরীত, এইতো, এর এমনকি প্রয়োজন বলো। প্রতিটি শব্দই তার বিপরীতার্থ ধারণ করে। যেমন ধরো “গুড”—এর জন্য “ব্যাড” শব্দের প্রয়োজন কী? “আনগুড”-য়েই চলে যায়। আর কেবল চলবেই কেন, আমি বলি এটাই অপেক্ষাকৃত সঠিক, কারণ এতে বৈপরীত্বটা স্পষ্ট হয় যা “ব্যাড” শব্দে হয় না। আবার তুমি যদি “গুড”-এর আরও শক্ত কোনও ব্যঞ্জনা চাও, তখন “এক্সিলেন্ট”, “স্প্লেন্ডিড”—এমন আরও কিছু ফালতু শব্দের প্রয়োজন দেখি না। বলে দাও “প্লাসগুড”—ওতেই অর্থ পরিষ্কার অথবা যদি কিনা আরও জোর দিয়ে ভালোত্বের প্রকাশ ঘটাতে চাও “ডাবলপ্লাসগুড” বলে দাও। এরই মধ্যে আমরা এগুলোর ব্যবহার শুরু করেছি, তবে নিউস্পিকের যে চূড়ান্ত সংস্করণ হচ্ছে এর বাইরে আর কিছুই থাকবে না। আর শেষমেষ ভালোত্ব আর মন্দত্বের সকল ধারণাই মাত্র ছয়টি শব্দের মাঝে সন্নিবেশিত হবে—প্রকৃত পক্ষে একটি শব্দে। এর সৌন্দর্যটা তোমার চোখে পড়ছে না, উইনস্টন? আর অবশ্যই, মূলত এটা বি.বি’র অভিপ্রায়’—যেন অণুচিন্তার অংশ হিসেবেই যোগ করল সে।
বিগ ব্রাদারের নাম উঠতেই চেহারায় মেকি আগ্রহের ছাপ মেখে নিল উইনস্টন। হলে কী হবে, দ্রুতই ধরে ফেলল তার মধ্যে উচ্ছ্বাসের খামতি আছে।
‘নিউস্পিক নিয়ে তোমার ভিতরে কোনও আগ্রহ নেই, উইনস্টন’—করুণ সুরে বলল সে। ‘এমনকি যখন লেখ তখনও তোমার মধ্যে পুরনো ভাষাই ভর করে থাকে। “দ্য টাইমস”-এ তোমার কিছু কিছু লেখা মাঝে মধ্যে পড়ি। ভালোই লেখ, কিন্তু ওগুলো স্রেফ অনুবাদ ছাড়া আর কিছু না। তোমার হৃদয়ের গহীনে পুরনো ভাষারীতির সব ফালতু আর অপ্রয়োজনীয় অর্থগুলো ধরে রাখার ইচ্ছাটাই প্রবল দেখি। তুমি কি জানো এই নিউস্পিক হতে যাচ্ছে বিশ্বের একমাত্র ভাষা যার শব্দভাণ্ডার হরবছর হ্রাস পাচ্ছে। ’
২১তম কিস্তির লিংক
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৫
শিল্প-সাহিত্য
প্রতিদিনের ধারাবাহিক
১৯৮৪ | জর্জ অরওয়েল (২০) || অনুবাদ : মাহমুদ মেনন
অনুবাদ উপন্যাস / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।