ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

একযোগে মাঠে নামছেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা

পলিটিক্যাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৭
একযোগে মাঠে নামছেন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা উপরে: প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ, আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী এবং জাফরউল্লাহ চৌধুরী। নিচে : শওকত মাহমুদ, সৈয়দ আবদাল আহমদ ও কাদের গণি চৌধুরী।

ঢাকা: শীর্ষ পর্যায় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে সম্মিলিতভাবে মাঠে নামার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছেন সারা দেশে ছড়ানো ছিটানো বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা। আগামী শনিবার (২২ এপ্রিল) ঢাকায় দিনব্যাপী কৌশল নির্ধারণী সভা শেষে রাতে তারা দেখা করবেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে।

শনিবারের সভায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, পেশাজীবীদের  বাছাই করা ৩০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

বিভিন্ন কারণে অনিচ্ছুক, হতাশ ও শিথিল ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে মাঝ বয়সী ও তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এই নতুন উদ্যোগে।

অপেক্ষাকৃত কম ফেসভ্যালু সম্পন্নদের সামনে আনার পেছনে কাজ করছে দুটি কৌশল।

প্রথমত, এদের অনেকেই সরকারের নজরদারিতে নেই। ফলে তাদের পক্ষে নিরাপদে দলীয় কাজ করা সহজ হবে। দ্বিতীয়ত, দলের বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে নতুন শক্তি সঞ্চয় করার কাজটিও এদের মাধ্যমে করা হবে।

রাজধানীর মীরপুর সড়কে অবস্থিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে শনিবার দুপুরে আমন্ত্রিতরা কৌশলপত্র নির্ধারণের জন্য মিলিত হবেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা সভা করে সরাসরি তারা সম্মিলিতভাবে গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন এবং কৌশলপত্রটি হস্তান্তর করবেন।

কৌশলপত্রে নির্বাচন ও রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনা, আন্তর্জাতিক প্রচারণা কৌশল ও লবিং, মিডিয়া, সিভিল সোসাইটি ও এনজিও বিষয়ক ক্ষেত্রে দলের করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ থাকবে। তাছাড়া দলীয় বুদ্ধিজীবীদের বিকল্প শক্তি হিসাবে কাজে লাগানোর রূপরেখাও দলের চেয়ারপারসনকে দেওয়া হবে।

গত দুই মাস ধরে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি কৌশলপত্র প্রণয়ন ও দলীয় বুদ্ধিজীবীদের সংগঠিত করার জন্য কাজ করছে। এতে রয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ ও প্রফেসর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী।

প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ বর্তমানে ইউডা নামক বিএনপিপন্থি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্বে রয়েছেন। প্রফেসর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী জামায়াত নেতা কামালউদ্দিন জাফরির মালিকানাধীন বাংলাদেশ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর।

ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী ও প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমদ বিএনপির পক্ষে সরব থাকলেও প্রফেসর আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী ১/১১-এর অন্যতম কুশীলব জেনারেল মাসুদউদ্দিনের বেয়াই হওয়ায় দলে কোণঠাসা হয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়ার মৃত্যুজনিত শূন্যতায় ফেনী অঞ্চলের বাসিন্দা হিসাবে তিনি দলে নিজের বিরাগভাজন ইমেজ দূর করতে সমর্থ হন।

কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদারতিন সদস্য বিশিষ্ট মূল কমিটিকে সাংবাদিক গ্রুপের পক্ষে সার্বক্ষণিক সহায়তা করছেন শওকত মাহমুদ, সৈয়দ আবদাল আহমদ ও কাদের গণি চৌধুরী। এনজিও গ্রুপের পক্ষে সাহায্য করছেন মাহফুজউল্লাহ। আর পুরো প্রক্রিয়াটিরই সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন কবি ও সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গ্রুপের পক্ষে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের নেতা ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক প্রফেসর ড. আল মোজাদ্দেদী আল ফেসানী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর শাহ আলম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ কামরুল আহসান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর ড. তারেক ফজল।

বিএনপির শাসনামলে ভাইস চ্যান্সেলরসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন- এমন কয়েকজন পুরো কার্যক্রমের দাপ্তরিক ও ড্রাফটিং-এর কাজ সামলাচ্ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রফেসর ড. আবদুল লতিফ মাসুম, প্রফেসর ড. খলীলুর রহমান, প্রফেসর ড. তারেক মুসলেহউদ্দিন প্রমুখ।

বিএনপির নীতি নির্ধারকরা দলের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের নির্লিপ্ততা ও অনাগ্রহের ব্যাপারে বার বার উষ্মা প্রকাশ করেছেন। দলের প্রণীত একটি তালিকার বরাত দিয়ে একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর ও অন্যান্য পদাধিকারীদের শতকরা আশি ভাগই এখন দলের ত্রিসীমানতেও আসে না। সরকারে থাকাকালে সুবিধাপ্রাপ্তরা দলের বিপদে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ইচ্ছুক দলের হাই কমান্ড।

ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়েও দলের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডে বার বার আমন্ত্রণ জানিয়েও সুবিধাভোগী শ্রেণিটির দেখা পাওয়া যায় না। রাজনৈতিক বিবেচনার বদলে আত্মীয়তা, আঞ্চলিকতা ও অর্থের বিনিময়ে অতীত শাসনামলে নিয়োগ দেওয়ার খেসারত এখনো বিএনপিকে টানতে হচ্ছে।

ফলে রাজনৈতিকভাবে প্রশিক্ষিত ও সম্পৃক্ত একটি বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী গঠনের জন্য বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা একমত হয়েছেন, যাতে রাজনৈতিক সঙ্কট ও বিপদের সময় এদের পাশে পাওয়া যায়।

তদুপরি নানা কারণে স্তিমিত দলীয় রাজনীতির পালে হাওয়া আনার জন্যও এদেরকে সহযোগী শক্তি হিসাবে কাজে লাগানোর ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে।

তবে, পুরো কার্যক্রমটিই পরিচালিত হচ্ছে কঠোর গোপনীয়তা ও শৃঙ্খলার ভিত্তিতে। আমন্ত্রিতদের নামের তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রেও কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে।

পুরো আয়োজনটি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে একটি রাজনৈতিক চমক দেখানোর লক্ষ্যে বেশ আটঘাট বেঁধেই কাজ করছে বিএনপি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।