প্রাণের বইমেলায় প্রায়ই আসছেন তিনি। ঘুরে বেড়াবেন, বই দেখবেন— এটাই তো হওয়ার কথা।
বাংলানিউজ: এবারের মেলার আয়োজন কেমন লাগছে?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: বড় জায়গা হয়েছে, এতে ছড়ানো গেছে স্টলগুলো। ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া এমন একটি পরিবেশ মেলার জন্য সুন্দর। আর যারা স্টল বানিয়েছেন তারাও খোলা স্থান পেয়েছেন যথেষ্ট, এটাই তো তাদের জন্য আনন্দের হওয়ার কথা।
বাংলানিউজ: মেলায় এলেই এতো ভিড় আপনাকে ঘিরে অটোগ্রাফ-ফটোগ্রাফে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিতে হচ্ছে, পরিশ্রম লাগে না এতোটা কাজে...
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: অটোগ্রাফ-ফটোগ্রাফ-সেলফিতে কোনো বাচ্চা বা যে কেউয়ের মুখে একটু হাসি ফোটে, খুশি হয়, তাতে আমার কষ্ট কোনো বিষয়ই নয়। তবে পরিশ্রম যে একেবারে হয় না তা বলবো না, পরিশ্রম হয়। কিন্তু মানুষের আনন্দ দেখলে সেভাবে ক্লান্তি লাগে না।
বাংলানিউজ: ইন্টারনেটের যুগে বইপড়া বিষয়ে তরুণদের আগ্রহ কমছে না বাড়ছে, আপনি কি মনে করেন?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: ইন্টারনেটে তরুণ-যুবকরা বই পড়ছে না। এই মাধ্যমটি বইপড়ার ক্ষেত্রে ক্ষতি করছে। যুবসমাজ এটি ব্যবহার করে কেবলই ফেসবুকে টোকা দিচ্ছে। তারা মূলত বই নয়, ফেসবুক পড়ছে। তাই আমি বলবো- নিয়ম করে রুটিং মাফিক বই পড়তে হবে। সেটি হাতে বই নিয়েও হতে পারে অথবা ইন্টারনেটে ই-বুকও হতে পারে। কিন্তু বড় কথা শিশু-শিক্ষার্থী সবাইকে পড়তে হবে।
‘এছাড়া আগামী দিনগুলোতে আমরা ই-বুকে ঢুকে যাবো। এই মাধ্যমটি বিস্তার করে ফেলবে, সুতরাং হাতে-কলমে বইপড়ার অভ্যাস-চর্চা বজায় রাখাটা জরুরি,’ যোগ করেন তিনি।
‘আমি আবারও বলতে চাই- শিশুদের এবং সবার পড়তে হবে। না পড়লে হবে না। যারা এ কথা মানবে তারাই এগিয়ে যাবে। ’
বাংলানিউজ: তরুণ যারা সাহিত্যচর্চা করছেন তাদের কাজ প্রসঙ্গে মূল্যায়নে কী বলবেন?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: দেশে ১৬ কোটির বেশি মানুষ, নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে ভালো লেখক হতেই হবে। এমনটা থাকবেই। আমি শুধু তাদের বলবো, পরিচর্যা করার জন্য। তারা যেন সময়ের আগে বই না বের করে; তাড়াতাড়ি বই করতে ব্যস্ত না হয়- এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। তার প্রকাশিত বইটাকে তো পাঠককে পড়াতে হবে, একটি বই পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এটি তরুণদের বুঝতে হবে। আগে নিজেকে চিনিয়ে- পরে বই প্রকাশ। বিভিন্ন অনলাইন-ব্লগ-পত্রিকায় লিখে নিজের নামকে পরিচিত করতে হবে, তারপর কোনো বই ছাপানো। আর সে যে বিষয়েই হোক বেশি-বেশি পড়তে হবে নবীনদের। পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশের সম্ভাবনার জায়গা নিয়ে অনেক কথা হয়, আপনি আমাদের সম্ভাবনা কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: আমাদের অর্থনীতি ভালোই শক্তিশালী হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বেড়েছে, বিভিন্ন সূচকে আমরা এগোচ্ছি। এসব হয়েছে যারা দেশের শ্রমিক শ্রেণী তাদের ওপর ভর করে। যারা পোশাক শ্রমিক, যারা প্রবাসী ব্যক্তিত্ব তাদের পরিশ্রমে-শ্রমে-ঘামে বাংলাদেশটা আজ এই জায়গায়। অর্থাৎ গরিব মানুষের অংশগ্রহণে দেশ উন্নত হয়েছে। আমি কিন্তু একবারও বলিনি বাংলাদেশকে চিকিৎসক-প্রকৌশলীরা অনেক দূর নিয়ে গেছেন, তারাও আছেন তবে সংখ্যায় কম। এদিকে দেশের উন্নয়নে শিক্ষিত তরুণ-তরুণী-যুবকদের অংশগ্রহণ এখনও আমরা দেখিনি বা তাদের অংশগ্রহণের ফল এখনও হাতে এসে পৌঁছায়নি। আমি মনে করি আগামীর বাংলাদেশ হবে এমন— যখন সদ্য শিক্ষিতদের অংশগ্রহণ দেশের উন্নয়নে আমরা কাজে লাগিয়ে ফলাফল পাবো, তখন বুঝবেন সম্ভাবনার বাংলাদেশ আসলে কোন উচ্চতায় যায়। সেদিনের জন্য খানিকটা তো সময় দিতেই হবে।
বাংলানিউজ: শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম বা দেশের জন্য কাজ করা বিষয়ে কী বলবেন?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: যারা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছেন তারা যেন ফিরে আসেন। তাদের খুব দরকার বাংলাদেশের। দেশপ্রেম থেকে, দায়িত্ব থেকে তারা এদেশে এসে কাজ করবেন, তখনই আমাদের দেশটা আরও সমৃদ্ধ হবে। দেশে অনেক কিছুই করার আছে, শুধু নিজের মতো গুছিয়ে নিলেই সব সম্ভব।
এ বছর অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের যে বইগুলো এসেছে, পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে ‘চারবন্ধু’, ইংরেজিতে অনূদিত ‘ফোর ফ্রেন্ডস’। চন্দ্রদীপ থেকে ‘ইঁদুর এবং দুষ্টু হাতি’। পাললিক সৌরভ থেকে ‘মুশি হলো খুশি’। আফসার থেকে ‘যখন জাগিবে তুমি’। সময় প্রকাশ থেকে ‘স-তে সেন্টু’। অনন্যা থেকে কলামসমগ্র (তিন)। অনুপম থেকে ভৌতিক কাহিনী ‘অন্য জীবন’।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
আইএ/এএ