ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

সাহিত্য-সংস্কৃতির টানে বইমেলায় মাদরাসা শিক্ষার্থীরা

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
সাহিত্য-সংস্কৃতির টানে বইমেলায় মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কী বই কিনেছেন তা দেখছেন দলবেঁধে আসা মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। ছবি: বাদল

ঢাকা: “সবাই ধারণা করেন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা শুধু ধর্মীয় কেনেন। কিন্তু না, এখন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিজ্ঞাননির্ভরও বইও কিনছেন, জ্ঞান অর্জন করছেন।”

এ কথা রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর জামিয়া মাদানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার দাওরা হাদিস বিভাগের (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী জহিরুল ইসলামের। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বন্ধুদের সঙ্গে দলবেঁধে এসেছেন তিনি।

কিনেছেন পল্লীকবি জসীমউদদীনের দু’টি বই। নিয়েছেন মুসা আল হাফিজের ছড়ার বই ‘থাপ্পড়’ও।

জহিরুল বলছিলেন, আগে হয়তো তেমন সাহিত্য-সংস্কৃতি টানতো না মাদরাসা শিক্ষার্থীদের। এখন  তারা বাংলা ভাষা, ভ্রমণ কাহিনী, মনিষীদের জীবনী এবং ভাষা ও স্বাধীনতার সংগ্রামসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ বিদেশি বইয়ের অনুবাদ, সমকালীন ছড়া, কবিতা এবং উপন্যাসের বইও কিনছেন।

তারই সুরে কথা বলছিলেন আরেক শিক্ষার্থী মুনিরুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে জানান, তিনি নিজেই ধর্মীয় বইয়ের পাশাপাশি সমকালীন কবি ও লেখকদের বাংলা ছড়া-কবিতার ৫টি বই কিনেছেন। মেলায় ঘুরছেন বই পড়ুয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাদলমুনিরুল বলেন, আমি ২০০৩ সাল থেকে বইমেলায় আসি। প্রতিবার দু’একজন আমার সঙ্গে মেলায় ঘুরতে আসেন। তবে এবার এ সংখ্যাটা বেশি।

মুনিরুলের নিজেরও ‘বিজয় নামের পাখি’ এবং ‘ইমানের ফুলবাগান’ নামে দু’টি বই প্রকাশ হয়েছে মেলায়। ‘বিজয় নামের পাখি’ বইটি মহান বিজয় দিবসকেন্দ্রিক।

তারই বন্ধু শামসুদ্দীন সাদী বলেন, এই মেলায় ভ্রমণ কাহিনী, বাংলা ভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্যভিত্তিক কিছু বই কিনেছি।  

তাদের সঙ্গে আসা আরও চার শিক্ষার্থীও জানান এমন বই কেনার কথা।

কামরুল আরেফিন নামে জামিয়া মাদানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার আরেক শিক্ষার্থী বইমেলা থেকে জগলুল হায়দার, আবু সালেহ, লুৎফুর রহমান লিটন ও ফারুক নওয়াজের লেখা কয়েকটি বই কিনেছেন।  

রামপুরার জামিয়া ইকরা বাংলাদেশ মাদরাসার ফজিলত প্রথম বিভাগের প্রথম বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে বাংলা সাহিত্যের ওপর আলাদা বিভাগ করা হয়েছে। বাংলাভাষা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে তাদের প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

সাহিত্য-সংস্কৃতির টানে বইমেলায় মাদরাসা শিক্ষার্থীরা।  ছবি: বাদলতারা বলেন, নিজেদের মাদরাসার শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা থেকেই তারা মেলায় এসেছেন শিল্প-সংস্কৃতির বই কিনতে।

এ বিষয়ে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাওলা ব্রাদার্সের স্টলের সেলসম্যান আজহার আপেল বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বইয়ের তুলনায় ইসলামী বইগুলোর ভালো বিক্রি হচ্ছে। মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা আল কুরআনের অনুবাদ, রাসুলের (সা.) জীবনী, ভ্রমণ এবং অনুবাদ বিষয়ক বইগুলো বেশি কিনছেন।

সুলেখা প্রকাশনীর স্টলে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল কাদের বলেন, বিশ্বনবীর জীবনী, বুখারী শরীফ, আল কুরআনে মজার গল্প প্রভৃতি বইয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। তারা বইও কিনছেন।

আলোকিত মানুষ চাই, সিদ্দিকিয়া, বলাকা, রোদেলা ও আলো ঘরের মতো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীরা বলেন, অনেকে ঘোরাঘুরি করতে এলেও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা মেলায় এসে বই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৭
এমএফআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।