ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ক্রিকেট

বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় অধিনায়কের ‘অসম্মানজনক’ আচরণ

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় অধিনায়কের ‘অসম্মানজনক’ আচরণ ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর। ছবি: শোয়েব মিথুন

ম্যাচশেষ হতেই বাঁধনহারা উল্লাসে ফেটে পড়লেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। তাদের উচ্ছ্বাস থাকল পরেও।

পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ তৈরি হচ্ছে যখন, তখন আলোকচিত্র সাংবাদিকদের আবদারে গ্রুপ ছবি তুলতে একসঙ্গে দাঁড়ালেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। অন্যপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ভারতের ক্রিকেটাররা, তাদের নেতৃত্বে হারমানপ্রিত কৌর।  

তিনি ‍মুখ দিয়ে উলোধ্বনির মতো কিছু করলেন, হাততালিও দিলেন; তার মুখভঙ্গি, আগে-পরের ঘটনা মনে রাখলে এই হাততালি যে প্রশংসার নয়, সেটি বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ভারতীয় অধিনায়ক যা করলেন, তা আসলে প্রতিপক্ষের জন্য অসম্মানজনকই বলে মনে হবে।  

সিরিজ শেষ হয়েছে সমতায়। ট্রফি তাই ভাগাভাগি করতে হয়েছে দু’দলের অধিনায়ককেই। এরপর ছবি তুলতেও দুই দলের ক্রিকেটারদেরই আসতে বলেন সঞ্চালক। ছবি তোলার সময় হারমানপ্রিত ডাকেন আম্পায়ারদের, তাদের হতে বলেন ছবির অংশ। বাংলাদেশের জন্যও কটাক্ষ করে বেশ কিছু মন্তব্য করেন তিনি। ‘তোমরা জয়ী নয়, আম্পায়াররা জয়ী...’ বাংলাদেশকে উদ্দেশ্য করে বলেন এমন কিছুও।  

এসব কথা শুনে ক্ষুব্ধ হন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। সাপোর্ট স্টাফদের চাওয়ার পরও দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে আলাদা করে কোনো ছবি তুলেননি তিনি। সিরিজের ট্রফিও অনেক্ষণ পড়ে ছিল মাটিতে। সংবাদ সম্মেলনে এসে হারমানপ্রিতের আচরণকে ‘সম্মানজনক’ নয় বলে নিজের মত দেন জ্যোতি।  

ঘটনার শুরু ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ইয়াস্তিকা ভাটিয়া এলবিডব্লিউ আউট হলে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ জানাতে জানাতে তিনি ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। এরপরের ঘটনা ছিল আরও বেশি অস্বস্তির। নাহিদা আক্তারের বলে আম্পায়ারের কট আউটের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি হারমানপ্রিত। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে আঘাত করেন তিনি।  

শেষ ব্যাটার হিসেবে মেঘলার কট আউটের সিদ্ধান্তও মেনে নিতে পারেনি ভারত। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখে কোনোটিকেই ‘নট আউট মনে হয়নি’। ভারতের ক্ষোভ ড্রেসিংরুম ছাপিয়ে চলে আসে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্মেলন কক্ষেও।  

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অনেকটা ‘অপ্রাসঙ্গিকভাবে’ হারমান কথা বলেন আম্পায়ারিং নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি অনেক কিছু শেখার ছিল এই ম্যাচ থেকে। ক্রিকেট ছাড়াও, যে মানের আম্পায়ারিং হয়েছে তাতে আমরা খুবই বিস্মিত। কিন্তু...আমরা সামনে যখন বাংলাদেশে আসবো নিশ্চিত করে আসতে হবে এ ধরনের আম্পায়ারিংয়ের মুখোমুখি হতে হবে। ঠিক সেভাবেই আমাদেরকে খেলতে হবে। প্যাথেটিক আম্পায়ারিং। আমরা আম্পায়ারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে খুবেই হতাশ। ’

ভারতের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন দুজন। ম্যাচসেরা হওয়া হারলিন দেওল ও স্মৃতি মান্ধানা। হারলিনের কাছে যখন প্রথম প্রশ্ন যায় তখন তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম আমি এখানে নেই...’। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর স্মৃতিও প্রকাশ করেন স্বস্তি। এর আগে তার কাছে ছুটে যায় নানান প্রশ্ন।  

শুরুতে স্মৃতি বলেন, ‘হ্যাঁ, খুবই ইন্টারেস্টিং ম্যাচ হয়েছে। আমার মনে হয় দুই দলই খুব ভালো ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলেছে। এমন ম্যাচ নারী ক্রিকেটের জন্য ভালো। মাঠে যা হয়েছে সেটি খেলারই অংশ। আগেও আমরা এমন ঘটনা দেখেছি ছেলেদের ক্রিকেটে। আমার মনে হয় যখন আপনি ভারতের হয়ে খেলবেন, ম্যাচ জিতবেন। এটা হিট অব দ্য মোমেন্টে হয়ে গেছে। হারমান তার আউটের সিদ্ধান্তে একদমই খুশি ছিল না। ভেবেছিল আউট না, তাই এমন করেছে। এটা হিট অব দ্য মোমেন্টের চেয়ে বেশি কিছু না। ’

‘আমার মনে হয় যখন আপনি খুব করে জিততে চাইবেন। আমি নিশ্চিত স্পিরিট অব দ্য গেম ও সবকিছু মিলিয়ে। আমরা এটা নিয়ে পরে কথা বলতেই পারি। ব্যক্তিগতভাবে হারমানকে যতটুকু চিনি, ও যেভাবে ভারতের হয়ে জিততে চায়; আমি স্পিরিট অব ক্রিকেট বাইরে রেখে জেতার তাড়নার কথা ভাবলে, এসব হয়ই। ’

মাঠের ঘটনাকে ‘হিট অব দ্য মোমেন্ট’ বা ‘পার্ট অব গেমের’ ব্যাখ্যা মেনে নেওয়া সহজ। কিন্তু ম্যাচের পর হারমান যা করেছেন, তা ছিল প্রতিপক্ষের জন্য বিব্রতকর। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও ক্ষোভ জানিয়েছেন। এগুলোর ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্মৃতি করেন পাল্টা প্রশ্ন, ‘ও কি প্রতিপক্ষের ব্যাপারে কোনো বাজে কথা বলেছে?’

প্রতিপক্ষের জন্য তার কিছু ‘অসম্মানজনক’ মন্তব্য ছিল, এমন উত্তরের পর স্মৃতি বলেছেন, ‘ওটা তো আম্পায়ার, তাই না? প্রতিপক্ষ তো না। ’ আম্পায়ারদের গ্রুপ ছবিতে আসতে বলার ব্যাখ্যায় স্মৃতি বলেন, ‘আমার মনে হয় না হারমান বাংলাদেশের অধিনায়ককে কিছু বলেছে। আমার মনে হয় ও আম্পায়ারদের নিয়ে কিছু কথা বলেছে। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি, আম্পায়ারদের নিয়ে কিছু বলেনি। ’

আপনি কি তাহলে আম্পায়ারদের গ্রুপ ছবিতে আসতে বলাকে মেনে নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে স্মৃতি বলেন, ‘আমার মনে হয় না ওটা রেকর্ড হয়েছে আর ঘটেছেও ম্যাচের পর। তাই ক্যামেরায় যেটা ঘটেনি, সেটা নিয়ে কথা না বলি। আমি বলবো এটা নিয়ে কথা না বলি। ’

এসব ঘটনা নিয়ে অবশ্য খুব বেশি কিছু বলতে চাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি থাকতে চেয়েছেন ‘মাঠের ক্রিকেটেই। ’ দেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিয়ান ফারজানা হক পিংকিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবুও তাকে বেশি কথা বলতে হয়েছে বিতর্ক নিয়েই।  

এসব নিয়ে জ্যোতি বলেছেন, ‘আমি তো ম্যাচ খেলেছি। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলাটাই মনে হয় ভালো। কারণ আমরা উইকেট, আম্পায়ারিং নিয়ে চিন্তা করিনি। আমরা শুধু ম্যাচ খেলেছি। প্রতিটি খেলোয়াড় চেষ্টা করেছে শতভাগ দেওয়ার। বাকি ওরা কী বলছে সেটা নিয়ে চিন্তা করছি না। ’  

‘আমি এটা পুরোপুরি বলবো ও (হারমানপ্রিত) যেটা বলেছে সেটা ওরই, সেটা আমাদের কোনো কিছু না। আমার মনে হয় ক্রিকেটার হিসেবে ও আরেকটু বেটার ম্যানার ওয়েতে কথা বলতে পারতো। যেটা আমার কাছে মনে হয় ও করেছে, ওর ব্যাপার। আমার এটা নিয়ে কথা বলা উচিত হবে না। ’ 

হারমানের কথা শুনে আলাদা করে গ্রুপ ছবি তুলেননি জ্যোতি। কেন? টাইগ্রেস অধিনায়ক বলেছেন, ‘কিছু কথা সবসময় তো আর সবকিছু বলা যায় না। যা হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়নি দল নিয়ে ওখানে থাকবো। আমি চলে এসেছি। ’ 

‘কিছু কথা ছিল যেগুলো শুনে আমার মনে হয়নি ওখানে থাকা উচিত হবে দল নিয়ে। ক্রিকেট খুবই সম্মানের একটা জায়গা, শৃঙ্খলার জায়গা। সবচেয়ে বড় কথা এটা জেন্টেলম্যান গেম। আমার কাছে মনে হয় ওই পরিবেশ ছিল না তাই দল নিয়ে চলে এসেছি। ’ 

তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ ছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ভালোভাবেই সেগুলো দেখেছেন জ্যোতি। তার কী মনে হয়েছে? জ্যোতি বলেছেন আম্পায়ারিং ভালো ছিল। তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো উচিত বলেও বিশ্বাস তার।  

তিনি বলেন, ‘তারা আউট না হলে তো আম্পায়াররা আউট দিতেন নাকি। ওয়ান অব দ্য বেস্ট আম্পায়ার দেওয়া হয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছেলেদের আম্পায়ারিং করে। অবশ্যই চিন্তা-ভাবনা করে তাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা সম্মান করেছি তাদের সিদ্ধান্ত। আমরা আউট হলে ওরকম করলাম না কেন। খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের সিদ্ধান্ত মানা উচিত। আউট হই বা না হই। যেগুলো রান আউট ক্যাচ হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কী বলবেন তারা। ’

বাংলাদেশ সময় : ২০০২ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
এমএইচবি/এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।