ঢাকা: শত বছরের দীর্ঘ ইতিহাস ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অ্যাশেজ সিরিজ। সময় নাকি সবকিছুই পাল্টে দেয়।
অ্যাশেজের পরতে পরতে লুকিয়ে আছে রোমাঞ্চ, নাটকীয়তা, সাফল্য-ব্যর্থতার বিস্ময়কর সব গল্প। অ্যাশেজের ১৩৩ বছরের ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে টেস্ট ক্রিকেটের অন্যরকম এক অনুপ্রেরণা হয়ে।
১৮৮২ সাল থেকে এ অবধি অনুষ্ঠিত হয়েছে অ্যাশেজের ৮০টি সিরিজ। তবে বর্তমানে প্রতি মৌসুমেই গড়াচ্ছে সিরিজটি। নিয়মে পরিণত হলেও জৌলুস দিনে দিনে বাড়ছেই অ্যাশেজের। ক্রিকেট বিশ্বের সবাই চোঁখ রাখেন অ্যাশেজে। শুধু ঐতিহাসিক সিরিজ বলেই নয়, ক্রিকেটের রোমাঞ্চ উপভোগের কারণেই।
গেল তিনটি অ্যাশেজ সিরিজের দিকে তাকালেই মেলে রোমাঞ্চকর দৃশ্যের। শেষ তিনবারের প্রথমবার অ্যাশেজ জেতে ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ইংলিশরা জিতে নেয় ৩-০ তে। পরের বারই শিরোপা পুনরুদ্ধার করে অজিরা। হোয়াইটওয়াশের (৫-০) লজ্জায় ডোবে ইংলিশরা। অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের অধিনায়কত্বই শুধু নয়, দলে থাকা নিয়েই প্রশ্ন তোলে ইংলিশ গণমাধ্যম।
তবে এবার শিরোপা পুনরুদ্ধার করে সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ক্যাপ্টেন কুক। এবার কাঠগড়ায় মাইকেল ক্লার্ক! ইতোমধ্যে আসর শেষে অবসরের ঘোষনাও দিয়েছেন বিশ্বকাপ জয়ী এ অধিনায়ক। সমালোচনার তীরে বিদ্ধ রিকি পন্টিংয়ের উত্তরসূরী।
কুক এখন দেবতুল্য ইংলিশ গণমাধ্যমের কাছে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই অ্যাশেজ জয়ের (৩-১) আনন্দে ভাসছেন ইংলিশরা। আর পরবর্তী টেস্ট অধিনায়ক নির্বাচণ ঠিক করা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। অ্যাশেজ যেমন সম্মান-খ্যাতি দু’হাত ভরে দেয় দলের সাফল্যে, তেমনি খারাপ সময়ে তা কেড়েও নেয়।
অ্যাশেজ নেই কোনো একঘেয়েমিতা। প্রতি মৌসুমে নতুন রোমাঞ্চ নিয়ে এটি আসে দর্শকদের কাছে। মর্জাদার লড়াই বলেই হয়তো অ্যাশেজের পরতে পরতে এত রোমাঞ্চ! উপভোগ আর আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে শেষ হয় এক একটি অ্যাশেজ সিরিজ।
অ্যাশেজের শুরু যেভাবে:
১৮৭৭ সালে শুরু টেস্ট ক্রিকেট। আর ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম জয় ১৮৮২ সালে। ওভালে সেই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ড মাত্র ৮৫ রান তাড়া করতে নেমে গুটিয়ে গিয়েছিল ৭৭ রানে। ইংল্যান্ডের প্রথমবারের মতো হারের লজ্জায় লন্ডনের নবীন সাংবাদিক রেজিনাল্ড শার্লি ব্রুকস পরদিন স্পোর্টিং টাইমস-এ ব্যঙ্গ করে লিখলেন, ইংলিশ ক্রিকেটের ‘অবিচুয়ারি’। শেষ অংশে বিশেষ দ্রষ্টব্যে লিখেছিলেন ‘শবদেহ দাহ করে অ্যাশেজ বা ছাই নিয়ে যাওয়া হবে অস্ট্রেলিয়ায়’। এই লাইনটাতেই লুকিয়ে আছে ‘অ্যাশেজ সিরিজ’ জন্মের ইতিহাস।
পরের বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় ইংল্যান্ড। ইংলিশ সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হলো- ‘অ্যাশেজ’ ফিরিয়ে আনতে অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ এ জিতলো ইংলিশরা। সিরিজ শেষ হওয়ার পর মেলবোর্নের কয়েকজন নারী ওই ম্যাচের স্টাম্পের বেল পুড়িয়ে তার ছাই একটি ভস্ম্যাধারে ভরে উপহার দিলেন ইংলিশ অধিনায়ক ব্লাইকে। ১৯২৭ সালে ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ফ্লোরেন্স ভস্ম্যাধারটি দেয় দেন মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাবকে (এমসিসি)। লর্ডসের যাদুঘরে আজও সুরক্ষিত আছে সেই ভস্ম্যাধারটি।
অ্যাশেজের আরও কিছু তথ্য:
১. অ্যাশেজ সিরিজের ট্রফির উচ্চতা মাত্র ১০ সেন্টিমিটার।
২. ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০২ সাল অবধি টানা ৮টি সিরিজ জিতে অ্যাশেজকে স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা বানিয়ে ফেলেছিল অস্ট্রেলিয়া।
৩. ১৯৮৯ সালে অ্যালান বোর্ডারের দলকে বলা হচ্ছিলো ইতিহাসের সবচেয়ে দূর্বলতম অস্ট্রেলিয়া দল। কিন্তু ওই বছরই ডেভিড গাওয়ারের ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ (৪-০) করেছিল অজিরা।
৪. ২০১৫ সালের বিশ্বকাপকে ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে জায়গা দিতে ১৯৭৪-৭৫ মৌসুমের পর ২০১৩-১৪ মৌসুমে দুইটি অ্যাশেজ সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একটি অস্ট্রেলিয়ায়, অপরটি ইংল্যান্ডে।
৫. ১৮৮২ সাল থেকে শুরু হওয়া অ্যাশেজের ৮০টি সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৩৮বার, ইংল্যান্ড জিতেছে ৩৪বার, ড্র হয়েছে ৮টি সিরিজ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০১৫
এসকে/এমএমএস