ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

‘মুস্তাফিজ ধাঁধা’র সমাধান হয়ে যাবে!

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৬
‘মুস্তাফিজ ধাঁধা’র সমাধান হয়ে যাবে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর (ফাইল ফটো)

ঢাকা: কেবল মাঠেই মুস্তাফিজ প্রশংসায় ভাসছেন না, টি-টোয়েন্টির মতো ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেটে তার ওপর আবিষ্ট হয়ে তা প্রকাশ করছেন বিভিন্ন প্রান্তের ক্রিকেট দর্শকরাও। অনেকে চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, আইপিএলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

তাদের মতে, ক্রিকেট বিশ্বকে ফিজির বোলিং দেখার সুযোগ করে দিয়েছে আইপিএল। তিনি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বক্রিকেটের এক অনন্য প্রতিভা।

 

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলা পাঁচটি ম্যাচেই দারুণভাবে সফল মুস্তাফিজ। সবশেষ কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে মুস্তাফিজ যা করেছেন তা এক কথায় ইতিহাস। টাইগার এই পেসার যখন বল করছিলেন তখন ধারাভাষ্যকাররাও বারবার বলেছিলেন, ‘ম্যাজিকাল স্পেল’, ‘আনবিলিভেবল’, ‘আনরিয়েল’, ‘জিনিয়াস’। সে ম্যাচে ৪ ওভার অর্থাৎ ২৪ বল করে ১৭ ডটে মাত্র ৯ রান খরচে ২ উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ। ‘ম্যাজিকাল স্পেল’ করে ম্যান অব দ্য ম্যাচও হন মুস্তাফিজুর।

 

এরপর অনেকেই মজা করে জানান, ফ্রি-তে মুস্তাফিজকে পেয়েছে হায়দ্রাবাদ। এমন বোলারকে নিয়ে পরের মৌসুমে আকাশ ছোঁয়া দাম উঠবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

শুধুমাত্র মুস্তাফিজের ৪ ওভার বোলিং দেখার জন্যও নাকি অনেকে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রাখেন। আইপিএলকে বিশ্বক্রিকেট যতই ধন্যবাদ দিক না কেনো, ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘এবেলা’ জানাচ্ছে আইপিএলে যোগ দিয়ে বড় ভুল করেছেন মুস্তাফিজ। তারা লিখেছে, ‘বাংলাদেশের বোলার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে এখন খুব মাতামাতি। গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে নিজের জাত চিনিয়ে ছেড়েছেন মুস্তাফিজুর। এই বাঁহাতি ফাস্ট বোলারের মধ্যে যথেষ্ট মশলা রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও বিভীষিকা হয়ে তিনি দেখা দিতেই পারেন। সেই সম্ভাবনা প্রবল। প্রশ্ন হলো, বড্ড তাড়াতাড়ি কি মুস্তাফিজুর আইপিএল-এ যোগ দিয়ে ফেললেন না? অনেকেই এতে আপত্তি করবেন। একমত হবেন না হয়তো। সে না-ই হতে পারেন। একমত হওয়া বা না-হওয়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। ’

কেনো মুস্তাফিজের আইপিএলে যোগ দেওয়া বড় ভুল? এমন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানান, ‘ঘটনা হলো, মুস্তাফিজুর বাংলাদেশের সম্পদ। তার কাটারের মোকাবেলা করা সত্যিই কঠিন ব্যাপার। অতীতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা মুস্তাফিজুরকে ঠিক মতো খেলতেই পারেননি। বিরাট কোহলিকেও একবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল, ‘‘মুস্তাফিজুরকে কি খেলতে সমস্যা হয়?’’ কোহলি জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘মুস্তাফিজুরকে খেলতে খেলতে ঠিক হয়ে যাবে। ’’ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলার দৌলতে সেই কাটার-ভীতি কেটে যেতে বাধ্য বিদেশি ক্রিকেটারদের। মুস্তাফিজুরকে আগামীদিনে খেলা আরও সহজ হয়ে যাবে। খেলতে খেলতে একসময় রহস্য আর রহস্য থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে ভীতিপ্রদ বিষয়কে কাছ থেকে দেখলে আগের সেই ভীতি আর থাকে না। তেমনই মুস্তাফিজুরকে যত বেশি খেলা যাবে, ততই তাঁর সম্পর্কে গড়ে ওঠা রহস্যও ধীরে ধীরে কেটে যাবে। মুস্তাফিজুরের অস্ত্রগুলো সম্পর্কেও একটা সম্যক ধারণা তৈরি হয়ে যাবে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটারদের। ফলে মুস্তাফিজুরকে খুব সহজভাবেই খেলে দিতে পারবেন অন্য দেশের ক্রিকেটাররা। ’

সংবাদমাধ্যমটি আরও লিখেছে, ‘তাই বলে মুস্তাফিজুরের প্রতিভাকে অসম্মান বা অশ্রদ্ধা করা হচ্ছে না। তাঁর শেখার যথেষ্ট সময় এখনও পড়ে রয়েছে। যত বেশি তিনি খেলবেন, ততই তিনি শিখতে পারবেন। অভিজ্ঞতা তাঁকে অনেক কিছুই শেখাবে। উল্টোদিকও তো আছে। একসময় শচীন টেন্ডুলকারের খেলা দেখে দেখে, তাঁর বিরুদ্ধে খেলতে খেলতে বিপক্ষ দেশগুলো মাস্টার ব্লাস্টারের দুর্বলতা জেনে ফেলেছিল। সচিনকে ফেরানোর জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা একটি বিশেষ জায়গায় ফিল্ডার রেখে দিত। শচীনও সেই ফাঁদে ধরা দিতেন। ঠিক তেমনি মুস্তাফিজুর-ধাঁধাও কিন্তু সমাধান হয়ে যাবে। ’

‘এবেলা’র শেষ প্যারায় যা ছিল টাইগারপ্রেমী আর মুস্তাফিজ ভক্তদের জন্য তা রীতিমতো গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো ব্যাপার। তারা লিখেছে, ‘আইপিএলে বাংলাদেশি এই বোলারকে দেখে বিপক্ষ বুঝে যাবে কোন বলটা বাইরে যাবে, কোন বলটা ভিতরে ঢুকবে। মুস্তাফিজুরকে খেলার কৌশল হাতের মুঠোয় চলে আসবে বাকি দুনিয়ার। তখন কিন্তু মুস্তাফিজুরকে আর এখনকার মতো ভয়ঙ্কর না-ও দেখাতে পারে। আইপিএলে যোগ দেওয়ার আগে শুভানুধ্যায়ীদের বোঝানো উচিত ছিল মুস্তাফিজুরকে। বলা উচিত ছিল, এখনই আইপিএল-এ যোগ দিও না। হাজার হোক দেশের সম্পদ তো আরও বেআব্রু হয়ে গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সৌজন্যে। ’

মুস্তাফিজ বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে নিজের আইপিএল অভিষেক ম্যাচেই তুলে নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে মুস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন এবিডি ভিলিয়ার্স আর শেন ওয়াটসনকে। পরের ম্যাচেও উজ্জ্বল ছিলেন কাটার মাস্টার। সাকিবের কলকাতার বিপক্ষে হায়দ্রাবাদ দুটি উইকেট তুলে নিলে সেখানে মুস্তাফিজের ছিল একটি উইকেট। ক্যারিবীয়ান তারকা অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলকে মাটিতে শুইয়ে দেওয়া দারুণ এক ইয়র্কারে উইকেটটি পেয়েছিলেন তিনি। ৪ ওভারে ২৯ রান খরচ করেন টাইগার এই পেসার।

নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মুম্বাইয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমে জয় পাওয়া ম্যাচে মুস্তাফিজ একটি উইকেট দখল করেন। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে হারদিক পান্ডের স্ট্যাম্প উপরে দেন এই পেসার। গুজরাটের বিপক্ষে মুস্তাফিজ যে বোলিং করেছেন তাতে বিশ্ব ক্রিকেট কাটার এই মাস্টারের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। ১০ উইকেটের জয় পাওয়া ম্যাচে মুস্তাফিজ ছিলেন গুজরাটের আতঙ্ক। ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচায় রবীন্দ্র জাদেজার স্ট্যাম্প ভেঙেছিলেন তিনি। দলের সবচেয়ে কিপটে বোলারও ছিলেন মুস্তাফিজ। কাটার, অফ-কাটার আর স্লোয়ারে গুজরাটের ব্যাটসম্যানদের কাছে রীতিমতো দুর্বোধ্য ছিলেন বাংলাদেশের এই পেসার।

হায়দ্রাবাদের দলপতি মুখস্ত অধিনায়কত্বের পরিচয় দিয়ে যখন ভুবনেশ্বর কুমার, বারিন্দ্রার স্রান, দীপক হুদাকে দিয়ে বল করান, মুস্তাফিজকে হাতে রেখে দেন, তখন কোটি কোটি চোখের মতো অপেক্ষায় থাকেন ধারাভাষ্যকাররা। মুস্তাফিজ বোলিংয়ে আসলেই তারা বলে উঠেন, ‘এই তো এসেছেন দ্য ফিজ’ (হেয়ার ইজ দ্য ফিজ)। তবে, বিশ্বক্রিকেটের চাহিদা মেটাতে আইপিএলের মতো জমজমাট আসরে মুস্তাফিজ কি সত্যিই খুব দ্রুত চলে এসেছেন, নাকি এই আসরে যোগ দিয়ে তিনি বড় ভুল করেছেন তা সময়ই বলে দেবে। সময়ের হাতেই তোলা থাকলো এই প্রশ্নের উত্তর আর আশঙ্কা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ২৫ এপ্রিল ২০১৬
এমআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।