স্টেডিয়াম এলাকা ঘুরে: ‘আমরা বাংলাদেশ পাগল, ক্রিকেট পাগল। তাই খেলার আগের দিন থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।
বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলার আগের দিন (বৃহস্পতিবার) রাত আড়াইটায় এমন মন্তব্য ভোলার বোরহানউদ্দিন থেকে লঞ্চে আসা দর্শক আল আমিনের।
শুধু আল আমিনই নন, এমন হাজার যুবক খেলা দেখতে বৃহস্পতিবার দুপর দেড়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। যে লাইন ইনডোর স্টেডিয়াম থেকে মিরপুর-১১ নম্বরের ফুট ওভার ব্রিজ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। অথচ টিকিট বিক্রি হবে সকাল দশটা থেকে। আর খেলা শুরু হবে দুপুর আড়াইটা থেকে।
দেশে জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ সফরে আসতে প্রায় বেঁকে বসেছিলো ইংল্যান্ড। অনেক টানাপড়েনের পর শেষ পর্যন্ত এসেছে ক্রিকেটের এই কুলিন দল। শুক্রবার মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজ।
আর এ নিয়ে দর্শকদেরও আগ্রহ বেশি। যারা অনলাইনে টিকিট পাননি তারা সরাসরি স্টেডিয়াম থেকে টিকিট সংগ্রহের জন্য আগের দিন দুপুর দেড়টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় স্টেডিয়াম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ লাইনে দাঁড়ানো, কেউ গোল হয়ে বসে তাস খেলছে, আবার কেউবা গামছা বিছিয়ে ঘুমাচ্ছে। এর মধ্যে দেখা গেছে কয়েকজন কালোবাজারিকেও। যাদের বেশিরভাগই বস্তির নারী।
ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ক্রিস্টাল ক্রুজ লঞ্চে করে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন মো. আল আমিন। কেন এত দূর থেকে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ পাগল, ক্রিকেট পাগল। তাই খেলার আগের দিন থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। আশা করছি কালোবাজারিরা যদি ঝামেলা না করে তাহলে টিকিট পাবো। ’
আল আমিন বলেন, টিকিট পেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় সাব্বির রুম্মনের ঝড়োগতির খেলা দেখবো।
প্রায় একই রকম কথা মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের প্রথমবর্ষের ছাত্র রাকিব উদ্দিনের। তিনি বলেন, শুধু দেশটাকে সাপোর্ট করার জন্য এতো কষ্ট। আমাদের দর্শকদের উপস্থিতিই ক্রিকেটারদের প্রেরণা যোগাবে। আশা করি টিকিট পাবো, খেলাও দেখবো।
কোনো কোনো দর্শক আবার কালোবাজারি নিয়ে ‘মহাটেনশনে‘ আছেন। কারণ হিসেবে বলছেন, ‘দেখেন সামনে যারা আছে বেশির ভাগই দালাল, কালোবাজারি। এমনকি দেখেন বস্তির লোকদের দিয়ে টিকেট কিনে পরে কালোবাজারে বেচে দিচ্ছে। এ কারণে যারা কষ্ট করে দাঁড়িয়ে আছি তারা হয়তো টিকিট পাবো না, খেলাও দেখতে পারবো না। ’
রাজধানীর কচুক্ষেত থেকে আসা কম্পিউটার প্রযুক্তির ছাত্র রায়হান ইসলাম বলেন, ‘এতো কাছে থেকে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি একটি টিকিটের জন্য। কিন্তু পাবো কিনা জানি না। যেভাবে কালোবাজারিরা আগেই সিরিয়াল ধরে আছে, তারপরও আশায় আছি। ’
উঠতি বয়সি তরুণ ও যুবকদের লাইনের বিপরীতে দেখা গেছে কয়েকজন মধ্যবয়সী নারীকে লাইন ধরে শুয়ে থাকতে। ২/১ জনের কোলে বাচ্চাও দেখো গেছে। কাছাকাছি যাওয়ার পর সবাই মুখ লুকানো শুরু করলো। কথা বলতে রাজি হলো না কেউই।
আশপাশের লোকজন বললেন, এরা বিভিন্ন বস্তিতে থাকে। লাইনে থেকে টিকিট নিয়ে পরে বেশি দামে বেচে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৬
ইএস/জেডএম