ঢাকা: আজ থেকে ১৬ বছর আগে ঠিক এই দিনে (১০ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শক্তিশালি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। সম্পূর্ণ আনকোরা এক ফরম্যাট, দলের সদস্যদের ছিল না কোন অভিজ্ঞতা, সাদা পোশাকের প্রথম ও দ্বিতীয় ইনিংসের বোলিং ও ব্যাটিং কতটা ভাল করতে হবে সে সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না নাইমুর রহমান দুর্জয় নেতৃত্বাধীন স্বাগতিক বাংলাদেশের।
তারপরেও শচিন টেন্ডুলকারদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে আমিনুল ইসলাম বুলবুল (১৪৫ রান), হাবিবুল বাশার সুমন (৭১ রান) ও বল হাতে নাইমুর রহমান দুর্জয় (৬ উইকেট), মোহাম্মদ রফিক (৩ উইকেট) যে দৃঢ়তা দেখিয়েছিলেন তাতে মনেই হয়নি টেস্টে নতুন একটি দল খেলছে। যদিও ম্যাচটি ৯ উইকেটে জিতে নিয়েছিল সফরকারী ভারত, তারপরেও অভিষিক্ত ম্যাচেই স্বগতিকদের এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্স জানান দিচ্ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের আকাশে নতুন এক সূর্যের উদয় হতে যাচ্ছে।
সত্যিই তো তাই। ভারত যেখানে তাদের প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে ২০ বছর পরে, নিউজিল্যান্ডকে যেখানে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৬ বছর সেখানে বাংলাদেকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র ৫ বছর। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিতে বিশ্ব ক্রিকেটকে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে তারা কতটা পারঙ্গম।
সেই যে শুরু। এরপর দেখতে দেখতে আরও ৭টি জয় থলিতে পুড়েছে লাল সবুজের সাদা পোশাকধারী দল। এই ১৬ বছরে ৯৫টি ম্যাচ খেলে মোট ৮টিতে জয়ের দেখা পেয়েছে টাইগাররা। যেখানে ৫টি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ২টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আর একটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। আর এই ৮ জয়ের মধ্যে বাংলাদেশের সবচাইতে গৌরবের এবং দাপুটেটি ছিল শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৮ রানের জয়টি। এই জয়ের সবচাইতে মহামান্বিত দিকটি ছিল তিনদিনেই সফরকারীদের হারিয়ে দেয়ার অনন্য কীর্তি।
কেমন ছিল ২০০০ সালের ১০ নভেম্বরের সেই টেস্ট ম্যাচটি? জানতে চাওয়া হয়েছিল টেস্টে সেদিনের সদ্য ভূমিষ্ট বাংলাদেশের হয়ে দারুণ এক অর্ধশতক তুলে নেয়া টাইগার টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান হাবিবুল বাশার সুমনের কাছে। প্রশ্নটি শুনে বেশ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন হাবিবুল বাশার। আর কাতরতা ভরা কণ্ঠে জানালেন তার সেই অনুভূতি। ‘প্রথম টেস্ট ম্যাচর স্মৃতি অনেক। কেননা প্রথম টেস্ট হিসেবে আমরা খুবই ভাল খেলেছিলাম, চারশ রান করেছিলাম, কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। দ্বিতীয় ইনিংসে কী হতে পারে সেটাও বুঝে উঠতে পারছিলম না। তবে এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে টেস্ট ম্যাচ কতটা কঠিন। একটি নয়, দুটি ইনিংসেও যে ব্যাটিং, বোলিং ভাল করতে সেটাও বুঝেছিলাম তখন। টেস্ট খেলছি এটাই তখন আমোদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল। তবে বিশেষ দিন ছিল। ওই ম্যাচের প্রথম থেকে একবারে শেষের দিনের প্রতিটি মুহূর্তই আমার সুখের স্মৃতি। ’
তখন ভাবতে পেরেছিলেন যে ১৬ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী একটি দলকে হারাতে পারবে? উত্তরে সুমন জানালেন ‘হ্যাঁ আমার মনে হয়েছ প্রথম থেকেই। আমরা যখন টেস্ট ক্রিকেটের শুরুটা করেছিলাম তখন জানতাম যে কাজটা আসলে কঠিন। কেননা বাকি দলগুলো টেস্ট খেলছে অনেক আগে থেকেই। অনেক কষ্ট হয়েছে, অনেক ম্যাচ হেরে গেছি, তখন খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারতাম না। তবে আমি জানতাম যে ক্রিকেটে আমরা যেভাবে এগুচ্ছিলাম তাতে টেস্টে আমরা ভাল করবো। ’
সুমনের এমনটি মনে হওয়ার পেছনে যে বিষয়গুলো অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে সেগুলো হলো টাইগার দলে থাকা বর্তমান সদস্যদের পারফরম্যন্স, ত্যাগ এবং জয়ের মানসিকতা তৈরীকে। তবে শুধু বর্তমানই নয় পাইপলাইনে থাকা টাইগার সদস্যরাও বাংলাদেশের আগামীর গৌরবময় এক একটি টেস্ট জয় এনে দেবে বলেও বিশ্বাস করেন সুমন। ‘এই দলটিকে নিয়ে আমি অনেক সম্ভাবনা দেখছি। কেননা যারা এই দলে খেলছে তারা খুবই ভাল। পাশাপাশি যারা তরুণ আছে তারাও ভবিষ্যতে ভাল করবেন বলে মনে হয়। আমরা যখন টেস্ট শুরু করেছিলাম তখন যে স্বপ্নটা দেখতাম সেটা খেলোয়াড়ী জীবনে পূরণ করতে পারিনি। ’
‘আমাদের এই ছেলেগুলো আমাদের হয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ করছে। আমাদের দেশ যেভাবে এগুচ্ছে আর যেভাবে আমাদের নতুন নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে তাতে আমি ভীষণ আশাবাদি যে এই দলটা অনেক দূর যাবে। কারণ এই দলে পারফরমার অনেক বেশি। বিশ্ব মানের পারফরমার অনেক বলবো। তাই সেই আশা আমরা করতেই পারি। ’ যোগ করেন সুমন।
তবে তাই হোক, সুমনের এই আশার পূর্ণতা পাক। টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের মত সব সময়ের শক্তিশালি দলকে হারিয়ে সুইট সিক্সটিনেই যে কীর্তি গড়লো অনাগত দিনগুলোতে আরও বড় সাফল্য ধরা দিক! টাইগার টেস্ট ক্রিকেটের এমন দিনে আপাতত এটুকুই শুভ কামনা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এইচএল/এমএমএস