চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বিবৃতি, কথার লড়াই ও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের মধ্যে যে বিরোধ এতদিন সীমাবদ্ধ ছিল, সেটাই এবার সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ্যে জানান দিলেন দলটির সমর্থনকারী জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে হলুদ দলের বর্তমান স্ট্যান্ডিং কমিটিকে অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী বলে ঘোষণা দিয়েছেন হলুদ দলের ত্রিশ অধ্যাপকসহ শিক্ষকদের একাংশ।
এ সময় তারা দীর্ঘদিন হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন না দেওয়া, সহকারী-সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরিতে প্রতিনিধি না থাকা, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসায় প্রশাসন ও বিজ্ঞান অনুষদের প্রতিনিধি না থাকাসহ আটটি অভিযোগ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হলুদ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান পরিচালনা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এবং কতিপয় সদস্যের দলের গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালনা কমিটির দায়িত্বকে ধরে রেখে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা এবং ব্যক্তি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য দল পরিচালনা করে আসায় হলুদ দলের অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে এবং দলের গণতান্ত্রিক এবং উদারনৈতিক ঐতিহ্য আজ ভূলুণ্ঠিত।
স্ট্যান্ডিং কমিটির কতিপয় সদস্য দলীয় গঠনতন্ত্রের কোনও ধরনের তোয়াক্কা না করে ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল থেকে দলকে জবরদখল করে কাজ করছে। স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৫ জন হওয়ার কথা থাকলেও অবসর ও ছুটির কারণে বর্তমানে ৫ জন সদস্য নেই। এছাড়া সম্প্রতি আরও দুইজন শিক্ষক স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এমনকি কমিটিতে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটেগরীতে কোন প্রতিনিধি নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসায় প্রশাসন ও বিজ্ঞান অনুষদের কোনও প্রতিনিধি নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন নেই। এ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজ সংস্কারে দিকনির্দেশনার বিষয়গুলো উপেক্ষা করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, হলুদ দলের বর্তমানে কোনও আহ্বায়ক নেই। যিনি নিজেকে আহ্বায়ক বলে দাবি করছেন, তিনি দ্রুততম সময়ে দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন দেওয়ার জন্য সাময়িকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। দলীয় গঠনতন্ত্রের ৪ এর (চ) ধারা অনুযায়ী বর্ধিত তিন মাস পর স্ট্যান্ডিং কমিটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তথাকথিত স্ট্যান্ডিং কমিটির কিছু সদস্য দলীয় গঠনতন্ত্রের কোনও তোয়াক্কা না করে ২০১৯ সালে ৬ এপ্রিল থেকে দলকে জবরদখল করে কতিপয় ব্যক্তির হীনস্বার্থ সিদ্ধিতে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
তাই দলকে এরকম অবৈধ জবরদখল থেকে মুক্ত করার জন্য এবং অনৈতিক অনুশীলন থেকে বের করে আনার জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনাযয় বিশ্বাসী এবং হলুদ দলের আদর্শে বিশ্বাসী দুই শতাধিক শিক্ষক লিখিতভাবে স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন দেওয়ার অনুরোধ করলেও তথাকথিত স্ট্যান্ডিং কমিটির অবৈধ সদস্য ও অবৈধ স্বঘোষিত আহ্বায়ক তাতে কোনও ধরনের কর্ণপাত করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রার্থী ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন। শিক্ষক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সজীব কুমার ঘোষ, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর, অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন, অধ্যাপক ড. শ্যামল রঞ্জন চক্রবর্তীসহ অনেকে।
এর আগে গত ১২ নভেম্বর 'স্ট্যান্ডিং কমিটি'র নির্বাচন চেয়ে আহ্বায়ক বরাবর চিঠি দিয়েছেন হলুদ দল সমর্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১ শিক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি