চট্টগ্রাম: সাংবাদিকদের লেখা শতাধিক বই। প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কিশোর কবিতা থেকে শুরু করে গবেষণাগ্রন্থ কী নেই।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের সিজেকেএস জিমনেশিয়াম মাঠে অমর একুশে বইমেলার স্টলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের স্টলের চিত্র ছিল এমন।
সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্টলটি উদ্বোধন করেন একুশে পদকে ভূষিত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক ও আবুল মোমেন এবং বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ। এ উপলক্ষে নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ।
বক্তারা বলেন, বইমেলা আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। সবার সম্মিলনে এ আয়োজন উৎসবে পরিণত হয়েছে। চট্টগ্রামের বইমেলা এখন মিলন মেলা, প্রাণের মেলা। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে এ সৃজনশীল আয়োজন প্রতিবছর ব্যাপকতা লাভ করছে। সাংবাদিকরা বই লেখেন। শুধু লেখেন না, চট্টগ্রামের অনেক সাংবাদিক বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁরা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য। এটা আমাদের জন্য গর্বের, গৌরবের। আশাকরি আগামীতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।
তাঁরা বলেন, তিন-চার বছর আগেও চট্টগ্রামে একই সঙ্গে দুই-তিনটি বইমেলা হতো। সাংবাদিকদের লেখনীতে এ বিষয়টা উঠে এসেছে বারবার। চট্টগ্রামের সৃজনশীল মানুষের দাবি ছিল সম্মিলিতভাবে একটি বইমেলা হোক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তিন-চার বছর ধরে ফেব্রুয়ারিতে একটি বইমেলা করছে। এটি ইতিবাচক দিক।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক, কবি ওময় কায়সার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম, অমর একুশে বইমেলা চট্টগ্রামের আহ্বায়ক ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের গ্রন্থাগার সম্পাদক আহমেদ কুতুব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, সহ-সভাপতি মনজুর কাদের মনজু, অর্থ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, ক্রীড়া সম্পাদক এম সরওয়ারুল আলম সোহেল, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক আল রাহমান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোরশেদুল আলম শামীম, কার্যকরী সদস্য জসীম চৌধুরী সবুজ, মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু ও মো. আইয়ুব আলী।
কবিতা উৎসব
বইমেলার দ্বিতীয় দিন মেলামঞ্চে ছিল কবিতা উৎসব। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি আসাদ মান্নান বলেন,মানব সভ্যতার বিকাশ ও বিনির্মাণে কবিতার অবদান অনস্বীকার্য বাংলাদেশের কবিতার মূলধারা গণ-আন্দোলন,প্রতিবাদ ও মিছিলের উষ্ণ সাহচর্যে বেড়ে উঠেছে। বাংলা কবিতা তাই শিল্পে,প্রতিবাদে ও মানবিক বোধে উজ্জ্বল।
জেলার কবিরা সাধারণভাবে প্রচারের আলোর বাইরে থাকেন। কিন্তু বাংলা কবিতায় তাঁদের অনেকেরই উল্লেখযোগ্য অবদান আছে। এই চট্টগ্রামের কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর একুশের প্রথম প্রতিবাদী কবিতা ’কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি’ সারা বাংলায় আন্দোলনের ঝড় তুলেছিল। এদের কবিতা আরও বেশি করে পাঠকদের সামনে পৌঁছে দিতে হবে।
উৎসবের প্রধান বক্তা দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক বলেন, ইতিহাসের এক ভয়ংকর দুঃসময়ে কবিরা স্বৈরাচারী দুঃশাসন ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে অনন্য অবদান রেখেছেন তা আজ এক অনুস্মরণীয় মহান ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে কবি ওমর কায়সার বলেন,আমরা নিজের দেশ এবং বিশ্বের মানবিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকট অবসানে কবিতার মাধ্যমে নতুন নতুন মর্মবাণী তুলে ধরেছি। আমরা জানি সব কবির কর্তব্য মানুষের জন্য অনন্য সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন রচনা করা। বই হোক আমাদের নিত্যসঙ্গী।
কবিতা উৎসবে সিরিয়া ও তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণ হারানোদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। উৎসবে স্বাগত বক্তব্য দেন বইমেলা কমিটির আহবায়ক ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু। আলোচনায় অংশ নেন ড. আবদুল্লাহ আল মামুন, কাউন্সিলর মোহাম্মদ সলিম উল্ল্যাহ, নুরুল আমিন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর আনজুমান আরা, হুরে আরা বেগম এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক আবদুল হালিম দোভাষ।
এ দিন প্রজ্ঞালোক প্রকাশনীর কবি চাঁদ সুলতানা নকশীর কবিতার বই মিলনান্ত নীলে'র মোড়ক উন্মোচন করা হয় । উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল স্বরচিত কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি