চট্টগ্রাম: মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের অবস্থান আরও উজ্জ্বলতর করতে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো, রিজিওনাল হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কাস্টমস ও স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সজাগ থাকতে হবে দুর্নীতি, অনিয়মের ক্ষেত্রেও।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান মিলনায়তনে ‘ডেভেলপমেন্ট ইমপারেটিভস অ্যান্ড ইন্টিগ্রিটি চ্যালেঞ্জেস ইন পোর্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বন্দর, মেরিটাইম এন্টি-করাপশন নেটওয়ার্ক (এমএসিএন) ও গ্লোবাল কমপ্যাক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ এ সেমিনার আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে জাহাজ আসা যাওয়া জোয়ার ভাটার ওপর নির্ভর করে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে শুরু হয়েছে সরাসরি জাহাজ চলাচল। সম্প্রতি বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফট এবং ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভিড়ানো শুরু হয়েছে। গ্যান্ট্রি ক্রেন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আরও ইকুইপমেন্ট কেনার পরিকল্পনা আছে।
তিনি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, বে টার্মিনাল ইত্যাদি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে চট্টগ্রাম বন্দর রিজিওনাল হাব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে জানিয়ে বলেন, তখন মোংলা, পায়রাসহ প্রতিবেশী অনেক দেশের বন্দরে ফিডার সার্ভিস চালু হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি তরফদার মো. রুহুল আমিন বলেন, ২০০৭ সালে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় যুক্ত হয় সাইফ পাওয়ারটেক। এরপর থেকে বন্দরে হ্যাসেল ফ্রি এনভায়রমেন্ট তৈরি হয়। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল, চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার মাধ্যমে তৈরি হয়েছে দক্ষ জনবল। আমরা শতভাগ বাংলাদেশি জনবল দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এর ফলে আমরা ফরেন কারেন্সি সেভ করছি।
চট্টগ্রাম বন্দরে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম চললেও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে নিরবচ্ছিন্ন সেবা চালু থাকে না। ব্যবসার খরচ কমাতে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, কাস্টমসসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহের সাত দিন সেবা চালু রাখতে হবে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফারওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বন্দরের সঙ্গে নদীপথে সারা দেশে নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। সুপরিকল্পিতভাবে সারা দেশে পণ্য পরিবহনের জন্য নৌ জেটি, টার্মিনাল গড়ে তুলতে হবে। রেল কানেকটিভিও প্রসারিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বন্দর ও কাস্টমসের নিবিড় সমন্বয় থাকতে হবে। কাস্টমসের জনবল বাড়াতে হবে। মেরিটাইম সেক্টরে করাপশন থাকলে তা দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল আলী শিমুল বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ওয়েটিং টাইম কমিয়ে আনতে সব ধরনের আমদানি পণ্য আইসিডিতে খালাসের অনুমতি দেওয়া উচিত।
সেমিনারের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন বন্দরের সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) কমডোর এম ফজলের রহমান, এমএসিএনের প্রতিনিধি কমডোর (অব.) সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, গ্লোবাল কমপেক্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাহমিন এস জামান, চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি