চট্টগ্রাম: নগরের ১৬ থানা এলাকায় বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক কিশোর গ্যাং। যারা জড়িয়ে পড়েছে দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে নগরের চকবাজার থানার নবাব সিরাজউদৌলা রোড বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধানসহ ৭ সদস্যকে আটক করে র্যাব।
আটককৃতরা হলেন, গ্রুপের প্রধান হোসাইনুল আমিন মিম (১৬), সামিউল ইসলাম (১৬), আহনাফ শাহরিয়ার (১৬), মো. শরিফুল ইসলাম (১৬), শানিপ শাহীদ (১৬), মাশহাদ সিদ্দিকী (১৬) ও আবু তারেক (১৬)।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল মো. মাহবুব আলম জানান, কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিষয়ে নানা ধরণের অভিযোগ পাওয়ার পরে গোয়েন্দা নজরদারী শুরু হয়। নজরদারীর একপর্যায়ে দেখা যায়, নগরের বিভিন্ন এলাকার একটি গ্রুপ ফেসবুক আইডি খুলে তাদের বিভিন্ন অপকর্মের স্থির চিত্র এবং ভিডিও চিত্র ধারন করে আপলোড করেছে। পরবর্তীতে বিশেষ একটি তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল দশটায় নগরের চকবাজার থানার নবাব সিরাজউদৌলা রোড বালি আর্কেড শপিং সেন্টারের সামনে থেকে কিশোর গ্যাং ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধানসহ ৭ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপের প্রধান গ্রেফতার হোসাইনুল আমিন প্রকাশ মিম। ‘ডট গ্যাং’ নামের ফেসবুক এবং হোয়াটস্যাপ গ্রুপে মিম নিজে কন্ট্রোল করতো। তার নেতৃত্বে নগরের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও আছে। মিমের বাবা একজন চিকিৎসক এবং মা চাকুরিজীবী। গ্রুপের প্রধান মিমের সঙ্গে মাশহাদ হোসেন একই স্কুলে পড়া লেখা করেছে, সেই সুবাধে তাদের পরিচয়। মাশহাদ নগরের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং হতাহতের ঘটনায় মিমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে থেকে কাজ করতো। সামিউল আমিন নগরের জামালখান এবং চকবাজার এলাকায় ৪ থেকে ৫টি মারামারিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো।
আটকৃতরা সবাই চট্টগ্রামের স্বনামধন্য সরকারী স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র জানায় র্যাব।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক জানান, সবাই চট্টগ্রামের একটি কোচিং সেন্টারের নিয়মিত ছাত্র ছিলো। সেখানে থেকে তাদের সবার সঙ্গে পরিচয় এবং একসঙ্গে চলা ফেরা ও আড্ডা দেওয়া শুরু হয়। আড্ডা দেওয়ার সময় কথিত একটি গ্রুপ তাদের কাজে কর্মে বাধা দিতে থাকে এবং অনেক মারধরও করে। মূলত এখান থেকেউ ‘ডট গ্যাং’ গ্রুপটির সৃষ্টি ও কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম থেকেই গ্রুপটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল মিম। মিম তার নিজের নামের একটি পেইজ এবং হোয়াটস্যাপে একটি গ্রুপ তৈরি করে। সেখানে তাদের কার্যক্রমের বিভিন্ন স্থীর চিত্র এবং ভিডিও চিত্র আপলোড করত। তারা তাদের সকল প্রকার অপকর্মে ভিডিওগুলো পেইজে আপলোড করে ফলোয়ার্স বাড়ানোসহ সুনাম এবং খ্যাতি অর্জন করতে চেয়েছিল। এছাড়াও তারা নগরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে ইভটিজিং, ছিনতাই, দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে জাড়িত ছিল। তাদের এমন কাজে স্থানীয় বড় ভাইরা মদদ দিত বলে জানা গেছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
আটক কিশোর গ্যাং এর ৭ সদস্য তাদের পরিবারের সবার ছোট ছেলে জানান র্যাব অধিনায়ক। তিনি আরও জানান, সারাদেশে কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোররা ব্যবহৃত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অপরাধের ধরনও পাল্টে যাচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনাখুনিসহ নানা অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়ছে। মাদক ব্যবসা ও দখলবাজিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে কিশোররা ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। অধিকাংশ কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার পেছনে স্থানীয় এলাকার একটি চক্রের মদদ রয়েছে। ‘হিরোইজম’ প্রকাশ করতেও পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
এমআই/টিসি