ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে সময় লেগেছে ৫৬ মাস 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৩
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে সময় লেগেছে ৫৬ মাস  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু টানেলের। প্রায় সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় বা ৫৬ মাস পর বাস্তবে রূপ পেল সেই স্বপ্নযাত্রা।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মাধ্যমে দ্বার খুলছে দেশের এ মেগা প্রকল্পের।

খরস্রোতা কর্ণফুলীর তল ছুঁয়ে টানেল নির্মাণের ফলে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে- তা অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে বঙ্গোপসাগর তীরের উপজেলা আনোয়ারাবাসীর।

শুধু আনোয়ারা নয় দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়েছে।  

শিল্পকারখানার কাঁচামাল, প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার পাশাপাশি কর্ণফুলীর পূর্বপ্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। টানেল নির্মাণে আগ্রহ দেখানো চীন হঠাৎ করে বেঁকে বসে প্রকল্প বাস্তবায়নে। প্রধানমন্ত্রীর কূটনৈতিক দূরদর্শীতায় রাজি হয় চীন সরকার। করোনা, বিশ্বমন্দাসহ প্রতিবন্ধকতাও থামিয়ে রাখতে পারেনি দেশের এই মেগা প্রকল্পের কাজ। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত একমাত্র টানেল আজ বাস্তব।

নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে প্রকৌশলগত অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে প্রকৌশলীদেরও। বিদেশি প্রকৌশলীদের পাশাপাশি এ প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন দেশের ৪৪ জন প্রকৌশলী। যারা প্রতিনিয়ত কাজ করেছেন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এছাড়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে শ্রমিকদের আনা হয়েছিল। প্রথম দিকে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করেছে। শেষ সময়ে চিনের প্রায় ৭০০-৮০০ জন টানেল নির্মাণে কাজ করেছিল।

সাধারণত শক্ত মাটিতে বোরিং করা সহজ হলেও, মাটির ভিন্নতার কারণে বোরিংয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে তাদের। ফলে টানেলের প্রথম টিউবের কাজ শেষ করতে সময় লাগে প্রায় ১৭ মাস। কিন্তু মাত্র ১০ মাসেই  শেষ হয় দ্বিতীয় টিউবের কাজ।  

সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, ০.২২ জি (ভূমিকম্প মাপার একক) থেকে ০.২৮ জি মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে টানেলের অবকাঠামো। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা সাড়ে ৭। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের সময় টানেলের দুই টিউবের দুই প্রান্তে দুটি করে চারটি ফ্লাড গেট বন্ধ রাখা হবে। এতে টানেলের ভেতরে পানি ঢুকতে পারবে না।

টানেল নির্মাণে প্রকৌশলগত সমস্যা সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, দেশের প্রকৌশলীদের নিয়ে টানেল করা খুব দুরুহ ব্যাপার ছিল। যেহেতু আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা নতুন, আমরা দেখে দেখে শিখেছি। পাশাপাশি কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে সমস্যা অতিক্রম করেছি।  

‘প্রথম টিউবের খনন কাজ যখন শুরু হয়, প্রায় ৫ শতাংশ বোরিং করার পর বিশেষজ্ঞ দল লক্ষ্য করেন বোরিং মেশিনটির উর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রবণতা। নকশা অনুযায়ী, যে রেটে মেশিনটি নিচের দিকে যাওয়ার কথা- সেভাবে না গিয়ে উপরের দিকে উঠছে। মূলত নরম মাটির কারণে এ সমস্যা হয়েছে। এছাড়া টানেলের কাজ যখন নদীর গভীরে গিয়ে পৌঁছায়, তখন বোরিং মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে। ফলে আমাদের ৪ মাসের মত কাজ বন্ধ রাখতে হয়। পরে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ এসে বিষয়টি সমাধান করে। মূলত টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) এর প্রথম অংশের মেইন শিল্টের পুরুত্ব কম হওয়ায় এ সমস্যা হয়’।  

তিনি বলেন, টিবিএম মেশিনের মেইন শিল্টের পুরুত্ব ছিল ১৩ মিটার। দ্বিতীয় টিউবে খনন কাজের সময় এ শিল্টের পুরুত্ব বাড়ানো হয়। ফলে এ টিউব খননে আর সমস্যায় পড়তে হয়নি। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এটি নদীর তলদেশের ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে। পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট। টানেল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২৩
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।