চট্টগ্রাম: সকাল আটটা বাজতেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের ১০টি পৌরসভায়। পৌষের সকালে কনকনে ঠান্ডা ও কুয়াশা উপেক্ষা করে সিরিয়াস ভোটাররা সকাল সাতটা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট পৌর এলাকায় ভোটগ্রহণের জন্য পুলিশ প্রহরায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। বিজিবি-পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে পৌরসভাগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোটগ্রহণের জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারছেন। আশা করছি সুষ্ঠুভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে।
চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মেয়র পদে ৩৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১০ পৌরসভা হচ্ছে, মিরসরাই, বারইয়ারহাট, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া এবং বাঁশখালী।
মেয়র পদে সবচেয়ে বেশি ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সীতাকুণ্ডে। সেখানে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের বদিউল আলম (নৌকা), বিএনপির সৈয়দ আবুল মনসুর (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগকারী অবসরপ্রাপ্ত নায়েক শফিউল আলম (নারকেল গাছ), স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজ-উদ-দৌলা (জগ), জাতীয় পার্টির নুরুন্নবী চৌধুরী (লাঙল) এবং তাওহিদুল হক চৌধুরী (মোবাইল)। তবে শফিউল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরও ব্যালটে তার প্রতীক থাকবে।
মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের গিয়াস উদ্দিন (নৌকা), বিএনপির এ জেড এম রফিকুল ইসলাম পারভেজ (ধানের শীষ) এবং ইসলামী আন্দোলনের আরিফ মঈনউদ্দিন (হাতপাখা) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।
বারইয়ারহাটে আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন (নৌকা) ও বিএনপির মাঈনউদ্দিন লিটন (ধানের শীষ) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন
সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের জাফরুল্লাহ টিটু (নৌকা) ও বিএনপির আজমত উল্লাহ বাহাদুর (ধানের শীষ) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।
রাউজানে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দেবাশীষ পালিত (নৌকা), বিএনপির কাজী আবদুল্লাহ আল হাছান (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রানা (জগ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর মোহাম্মদ মনসুর আলম (মোবাইল) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। তবে রানা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। সময় পার হয়ে যাওয়ায় তার প্রতীকও ব্যালটে থাকবে।
রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী লীগের মো.শাহজাহান সিকদার (নৌকা), বিএনপির মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন খান (ধানের শীষ), ইসলামী ফ্রন্টের আবদুর রহামান জামি (মোমবাতি) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মোজাম্মেল হক (নারকেল গাছ) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।
বাঁশখালীতে মেয়র পদে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সেলিমুল হক চৌধুরী (নৌকা) ও বিএনপির কামরুল ইসলাম হোসাইনী (ধানের শীষ)।
সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের মো. জোবায়ের (নৌকা), বিএনপির হাজি রফিকুল আলম (ধানের শীষ) ও জাতীয় পার্টির মো. ইউছুপ (লাঙল) ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।
চন্দনাইশে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মাহবুবুল আলম খোকা (নৌকা), এলডিপি সমর্থিত প্রার্থী মো. আইয়ুব (ছাতা), ইসলামী ফ্রন্টের মো. আবদুল হাকিম (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিন আহমেদ (জগ) মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।
পটিয়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধ্যাপক হারুনুর রশীদ (নৌকা), বিএনপি সমর্থিত তৌহিদুল আলম (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি সমর্থিত শামসুল আলম মাস্টার (লাঙল) এবং বিএনপির বিদ্রোহী মোহাম্মদ ইব্রাহিম (নারকেল গাছ) ভোটযুদ্ধে আছেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে পৌরসভাগুলোতে রোববার মধ্যরাত থেকে মোটর সাইকেল চলাচল বন্ধ আছে। ১০ পৌর এলাকায় মঙ্গলবার মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) মধ্যরাত পর্যন্ত বেবি ট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া ২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ১৩ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মাঠে নেমেছিলেন ১০ ম্যাজিস্ট্রেট। তাদের সাথে রোববার থেকে নেমেছেন আরও ৩২ ম্যাজিস্ট্রেট। এ হিসেবে ভোটের সময় প্রতিটি পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করবেন ৪ জনেরও বেশী ম্যাজিস্ট্রেট। সবমিলিয়ে ১০ পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করবেন ৪২ জন ম্যাজিস্ট্রেট।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৫ পৌরসভায় ২০৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ২৪৩ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও ২ হাজার ৪৬৮ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭ হাজার ২১৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২০৯ টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ১২৩৪টি, অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫০টি।
এদিকে চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় সোমবার থেকে কাজ করছে ১৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। এর মধ্যে সাতটি পৌরসভায় এক প্লাটুন করে এবং তিনটি পৌরসভায় দুই প্লাটুন করে বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
২৮ ব্যাটেলিয়ন বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লে.কর্নেল এমারত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং বাঁশখালীতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। বাকি পৌরসভাগুলোতে আমরা টহল দিচ্ছি।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) কাজী আব্দুল আউয়াল বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে ১০ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ২০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তিনটি কেন্দ্র মিলে থাকছে একটি টহল টিম। পাঁচটি কেন্দ্র মিলে রাখা হয়েছে স্ট্রাইকিং ফোর্স। থানায় স্ট্যান্ডবাই ফোর্সও রাখা হচ্ছে।
এছাড়া তিনটি কেন্দ্র মিলে র্যাবের একটি টিমও আলাদাভাবে টহল দেবে বলে জানান আব্দুল আউয়াল।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৫
এআর/টিসি