ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিএনপিকে শক্তিশালী দেখতে চান হাসান মাহমুদ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
বিএনপিকে শক্তিশালী দেখতে চান হাসান মাহমুদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: বিএনপি যে জনবিচ্ছিন্ন একটি দল সেটা পৌর নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের বক্তব্যেই সেটা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে ‍দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড.হাসান মাহমুদ।  

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে নিজ বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাসান ‍মাহমুদ একথা বলেন।

  একইসঙ্গে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপি চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগেরও আহ্বান জানিয়েছেন।   বিএনপিকে একটি গণমুখী, শক্তিশালী দল হিসেবে দেখতে চান বলেও জানিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হাসান মাহমুদ।


বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার দুপুরে দলের পক্ষ থেকে পৌর নির্বাচনের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন।   ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক বিএনপি প্রার্থীদের বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি ফলাফল প্রত্যাখান করেন।  

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হাসান মাহমুদ বলেন, বিএনপি মহাসচিবের কাছে সাংবাদিক বন্ধুদের প্রশ্ন ছিল, এই নির্বাচনের মাধ্যমে আপনারা কি পেলেন ? তখন তিনি বলেছেন এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি।   অর্থাৎ এই বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব স্বীকার করে নিয়েছেন তারা জনবিচ্ছিন্ন একটি দলে রূপান্তরিত হয়েছে।   বিএনপি এবং তার জোট যে একটি জনবিচ্ছিন্ন দল ও জোটে রূপান্তরিত হয়েছে সেটাই প্রকারান্তরে বিএনপি মহাসচিব স্বীকার করে নিয়েছেন।   অতীতে মানুষকে জিম্মি করার রাজনীতি যে জনগণ গ্রহণ করেনি, সেটা যে ভুল ছিল সেটাই তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন।  

‘বিএনপি মহাসচিব নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।   তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়, আপনি ইলেকশন কমিশনের পদত্যাগ চাচ্ছেন এবং এই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখান করছেন।   কিন্তু ভবিষ্যতে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আপনারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কিনা।   বিএনপি মহাসচিব বলেছেন তারা সকল নির্বাচনে অংশ নেবেন।   একদিকে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলছেন, আরেকদিকে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভবিষ্যতে সকল নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।   কার্যত তিনি যে অযৌক্তিক কথা বলছেন সেটা তার বক্তব্যের মাধ্যমে নিজের অজান্তেই স্বীকার করে নিয়েছেন। ’

পৌর নির্বাচনে বিএনপি দেশের জনগণ প্রত্যাখান করেছে বলেও দাবি ড.হাসান মাহমুদের।

‘প্রকৃতপক্ষে বিএনপিকে গতকালের নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ চরমভাবে প্রত্যাখান করেছে।   এই প্রত্যাখানের কারণ হচ্ছে বিএনপি এতদিন ধরে জঙ্গি এবং সন্ত্রাসীর আশ্রয়ে রাজনীতি করেছে।   তারা জনগণের আশ্রয়ে রাজনীতি করেনি।   গত কয়েক বছর ধরে তাদের রাজনীতি ছিল জনগণকে জিম্মি করে রাখার রাজনীতি।   দিনের পর দিন অবরোধ ডেকে জনগণকে জিম্মি করে রাখার রাজনীতি।   মানুষের উপর, নিরীহ বাসযাত্রীদের উপর, পথচারীদের উপর পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে তাদের জিম্মি করার রাজনীতি।   এমনকি তারা ট্রাক ড্রাইভারদের উপর শুধু পেট্রল বোমা নিক্ষেপ নয়, জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রল ঢেলে দিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরে তারা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছিল। ’ বলেন হাসান মাহমুদ।

‘এরপর গতকাল তারা তাদের দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মানুষের সামনে হাজির হয়েছে।   মানুষ এতদিন ধরে তারা যে পেট্রল বোমার রাজনীতি করেছে, মানুষকে জিম্মি করে রাখার রাজনীতি করেছে সেই রাজনীতির জবাব তারা ভোটের মাধ্যমে পেয়েছে। ’

অতীতের পৌর নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন অনেক সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলেও দাবি করেছেন হাসান মাহমুদ।

তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত দলীয় ভিত্তিতে পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।   এই পৌর নির্বাচন দেশের অতীতের পৌর নির্বাচনের তুলনায় এমনকি পাশের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের মিউনিসিপ্যাল ইলেকশনের তুলনায় অনেক শান্তিপূর্ণ এবং সুষ্ঠু হয়েছে।   বাংলাদেশের অতীতের পৌর নির্বাচনে অনেক বেশি সহিংসতা হতো।   পশ্চিম বাংলায় কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনের তুলনায় বাংলাদেশে বুধবার অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচন অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ ছিল।  

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়।   যেখানেই গণ্ডগোলের আভাস পাওয়া গেছে অথবা গণ্ডগোল হয়েছে সেখানেই তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।   আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মীও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পিটুনিতে আহত হয়েছেন।   আমাদের দলের কাউন্সিলর প্রার্থী থেকে শুরু করে অনেকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।   অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা ব‍াহিনী সকল দলের সঙ্গে সমান আচরণ করেছে।  

বেগম খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তিনি জানতেন এই নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হতে যাচ্ছে।   এই কারণে তাদের প্রথম থেকে প্রচেষ্টা ছিল এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা।   নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, সরকারের ভূমিকা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। ’

‘বেগম খালেদা জিয়া চেয়েছিল এই নির্বাচনে অনেক বেশি সহিংসতা হোক এবং অনেক মানুষ হতাহত হোক।   এটিকে পুঁজি করে তিনি সরকারের দুই বছর পূর্তিতে আরেকটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করবেন।   এটাই ছিল বেগম খালেদা জিয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা।   কিন্তু বিএনপি যে শুধু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে তা নয়, বিএনপি নেতৃত্ব তাদের কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকেও পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।   তাদের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনে যেভাবে অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন ছিল তারা সেভাবে অংশগ্রহণ করেনি।   এটা একমাত্র তাদের ভুল রাজনীতির কারণে। ’

‘আমরা জানতে পেরেছি গতকাল বেগম খালেদা জিয়া তার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বসেছিলেন।   কেন নির্বাচনে সহিংসতা হয়নি সেজন্য তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর অনেক ক্ষোভ ঝেড়েছেন।   আমি বেগম জিয়াকে অনুরোধ জানাব আপনি গতকালের নির্বাচনে বিএনপির চরম ব্যর্থতার দায়ভার স্বীকার করে নিজে পদত্যাগ করুন, দলের নেতাদের উপর ক্ষোভ ঝেড়ে কোন লাভ নেই।   বরং এই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে আপনি পদত্যাগ করুন এবং জঙ্গি-সন্ত্রাসী আশ্রয়ী রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। ’ বলেন হাসান মাহমুদ।

‘বিএনপি নেতৃত্বকে অনুরোধ জানাব, নির্বাচন কমিশন, সরকার কিংবা সরকারি দলের দোষত্রুটি না খুঁজে কেন আপনারা জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছেন, কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন সেটা অনুসন্ধান করুন।   জঙ্গি আশ্রয়ী, সন্ত্রাসী আশ্রয়ী, তালেবান আশ্রয়ী রাজনীতি পরিহার করে, জনগণকে জিম্মি করার রাজনীতি পরিহার করে দলকে একটি সত্যিকারের গণমুখী দলে পরিণত করুন।   তাহলেই বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।   আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি শক্তিশালী বিএনপিও চাই। ’ বলেন হাসান মাহমুদ।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক এম এ সালাম উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
আরডিজি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।