এবার মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা বাড়তে পারে, আসতে পারে নতুন মুখও। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৩টি আসনেই আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ জানুয়ারির আগেই মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান শেষ করা সম্ভব হবে।
টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হতে পারে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা বর্ষিয়ান রাজনীতিক নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং জাতীয় পার্টির ত্যাগী নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর।
নতুন মন্ত্রিসভায় পুরনো মুখ হিসেবে আবারও আসতে পারেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যিনি দশম জাতীয় সংসদের সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নির্বাচনী আসন চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) থেকে এবারও বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন। এর আগে ১৯৯৬ সালেও তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। পালন করেছেন ভূমি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। দেশের ভূমি অফিসগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে প্রশংসিত জাবেদ আবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। মন্ত্রিসভায় রদবদলের পর তার ওপর বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পিত হয়। এবারও তিনি মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন বলে আলোচনা আছে।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) সংসদীয় আসন থেকে ধারাবাহিকভাবে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। ২০০১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পালন করেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে। এরপর তাকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনীত করা হয়। ২০১৪ সালে তৃতীয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে দায়িত্ব দেয়া হয় রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতির। এবার তিনিও পেতে পারেন মন্ত্রীর দায়িত্ব।
চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে এবারও বিজয়ী ড. হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। এর আগে সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আছে তার। জাতীয় সংসদের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ুজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় সফলতার সঙ্গে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। মন্ত্রীদের সম্ভাব্য তালিকায় উঠে আসতে পারে তার নামও।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল রাজনীতিতে এসেই চমক দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেয়া হয়েছে তাকে। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে সদ্য সম্পন্ন নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি আবারও আলোচনায় এসেছেন। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে স্থান পেতে পারেন তিনি।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা থেকে টানা ছয়বার জয়ের মালা উঠেছে বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের গলায়। ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম, ২০০৮ সালে নবম এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এবারও তিনি মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন।
আলোচনায় আছেন দীপংকর তালুকদার, যিনি পার্বত্য রাঙামাটি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পঞ্চম, সপ্তম ও নবম জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।
কক্সবাজার-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবারও তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। কমল মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে স্থান পেতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
কক্সবাজার-২ আসনে এবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আশেক উল্লাহ রফিক। দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়া নিয়ে গঠিত আসনটি একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক জয়লাভ করেন। এখানে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে আসছে বর্তমান সরকার। জেলার সবচেয়ে বড় বড় মেগাপ্রকল্প এখানেই বাস্তবায়ন হচ্ছে। মাতারবাড়ীতেই হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। নির্মাণ হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। তাই এ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বাংলানিউজকে জানান, মন্ত্রিত্ব কারা পাচ্ছেন-তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
‘তবে, স্বচ্ছ দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকরাই অগ্রাধিকার পাবেন, মূল্যায়ন হবে নতুন মুখেরও’ যোগ করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৯
টিসি