তাসফিয়া আমিনকে খুন করা হয়েছে এমন দাবি করে এ ঘটনায় তার বন্ধু আদনান মির্জা জড়িত বলে সন্দেহ ও তাসফিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাসফিয়া ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয় নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
আর আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীর সহকারী সমরকৃষ্ণ চৌধুরীকে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে বোয়ালখালী পুলিশ মামলা দিলেও শেষ পর্যন্ত তাও ‘মিথ্যা প্রমাণিত’ হয়ে সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর পরিবারের দাবিই সত্য বলে ‘প্রমাণিত’ হয় পুলিশের ‘প্রাথমিক তদন্তে’।
তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলা
গত বছরের ২ মে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ।
তাসফিয়া আমিন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ডেইলপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আমিনের মেয়ে। তাসফিয়া সানশাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
১ মে বিকেলে বন্ধু আদনান মির্জার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল তাসফিয়া। দেখাও হয়েছিল তাদের। কিন্ত সেদিন আদনান বাসায় ফিরলেও বাসায় ফেরেনি তাসফিয়া।
তাসফিয়ার মৃত্যার ঘটনায় তার বন্ধু আদনান মির্জা জড়িত বলে সন্দেহ করে আদনান মির্জাসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন।
পতেঙ্গা থানা পুলিশ আদনান মির্জাসহ অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করে কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে জুলাই মাসে সেই মামলা তদন্তের দায়িত্ব নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়। নগর গোয়েন্দা পুলিশও আসামিদের কয়েকদফা জিজ্ঞাসাবাদ করে।
দুই মাস তদন্ত শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তাসফিয়া আমিন ‘আত্মহত্যা’ করেছে উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে নারাজি দিয়েছেন তাসফিয়ার বাবা মোহাম্মদ আমিন।
তাসফিয়া হত্যা মামলার বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘তাসফিয়া আমিন ‘আত্মহত্যা’ করেছে উল্লেখ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালতে নারাজি আবেদন দেওয়া হয়েছে। ’
সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর মামলা
গত ২৮ মে বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীর সহকারী সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর কাছ থেকে ৩১০ পিস ইয়াবা ও একটি একনলা বন্দুক উদ্ধারের ঘটনা দেখিয়ে মামলা দায়ের করে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় জেলে পাঠানো হয় সমরকৃষ্ণ চৌধুরীকে।
কিন্তু সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর পরিবার অভিযোগ করে ‘সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে’ চট্টগ্রাম নগর থেকে তুলে নিয়ে অস্ত্র ও ইয়াবার মামলায় ফাঁসানো হয় তাকে।
এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সমরকৃষ্ণের পরিবার, বোয়ালখালীর সাধারণ মানুষ ও চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীরা।
প্রতিবাদের মুখে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনা তদন্ত করে। তদন্তে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘প্রমাণিত’ হওয়ায় ঘটনায় জড়িত দুই উপ-পরিদর্শককে প্রত্যাহার ও ওসি হিমাংশু কুমার দাশকে বদলি করা হয়।
আড়াই মাস কারাগারে থেকে আইনি লড়াই শেষে গত ১২ জুলাই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান সমরকৃষ্ণ চৌধুরী।
সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর পরিবারের অভিযোগ ছিল-‘২৭ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের জহুর হকার্স মার্কেটের সামনে থেকে সমর চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ। ’
এ ঘটনার পেছনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সঞ্জয় দাশের সঙ্গে সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর বন্ধু স্বপন দাশের সাথে জায়গা-সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধকে কারন হিসেবে উল্লেখ করে সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর পরিবার।
পরে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর পরিবারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এ নিয়ে বাংলানিউজে ‘আ.লীগ নেতা সমর চৌধুরীকে অস্ত্র-ইয়াবায় ফাঁসানোর নেপথ্যে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে। এবং পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।
সমরকৃষ্ণ চৌধুরীর মেয়ে তমালিকা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাবার (সমরকৃষ্ণ চৌধুরী) বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন তদন্ত করছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৯
এসকে/টিসি