ঢাকঢোল বাজিয়ে উচ্ছেদের ঘোষণা
বছরের শুরুতেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে কর্ণফুলী তীরের ২১’শ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযানের প্রস্তুতি নেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ২ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদপূর্ব প্রস্তুতি দেখতে এসে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ জানান, সরকারের চেয়ে প্রভাবশালী কেউ নেই।
৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসন নগরের সদরঘাট এলাকা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।
হঠাৎ থমকে যায় উচ্ছেদ অভিযান
৯ ফেব্রুয়ারি ফের কর্ণফুলী তীরের উচ্ছেদ কার্যক্রম দেখতে যান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এ সময় তিনি কর্ণফুলীর দখলমুক্ত জায়গায় দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরিসহ সরকারের নানা পরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে হুমকি এলে উচ্ছেদের গতি দ্বিগুণ করার কথা জানান।
মন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনও দ্রুত সময়ের মধ্যে কর্ণফুলীর তীরে দ্বিতীয় পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান শুরুর কথা জানান। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কর্ণফুলী তীরে দ্বিতীয় পর্যায়ের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।
উচ্ছেদ আটকে আছে মাস্টার প্ল্যানে
২ মার্চ কর্ণফুলীর তীর পরিদর্শনে গিয়ে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের কারণ জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, কর্ণফুলীতে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়নি। কখনও কখনও কৌশলগত কারণে বিরতি দিতে হয়। এখন বিরতি চলছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ করা হবে না।
মন্ত্রী জানান, অবৈধ স্থাপনার কারণে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কর্ণফুলী, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, যমুনা, শীতলক্ষ্যাসহ সব নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী একটি কমিটি করে দিয়েছেন। মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হবে। এরপর চূড়ান্ত উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে।
মন্ত্রীর এ ঘোষণার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি কর্ণফুলী নিয়ে সরকারের মাস্টার প্ল্যান। শুরুও করা যায়নি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান। কর্ণফুলীর তীরে অবৈধ স্থাপনার তালিকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর স্থাপনা থাকা, কিছু প্রতিষ্ঠানকে বন্দরের লিজ দেওয়া এবং অর্থ সংকটে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বিপর্যস্ত হালদায় আশার আলো
কর্ণফুলী রক্ষায় ২০১৯ সালে সুখবর না থাকলেও দূষণে বিপর্যস্ত হালদায় পরিবর্তন হচ্ছে অবস্থার। নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। জব্দ হয়েছে ড্রেজার, ধ্বংস করা হয়েছে নৌকা, পোড়ানো হয়েছে কারেন্ট জাল, জরিমানা করা হচ্ছে অবৈধ মা মাছ আহরণকারীদের।
২০১৯ সালে হালদা থেকে জব্দ করা হয় প্রায় দেড় লাখ মিটার ভাসা ও ঘেরা জাল। ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ১৭টি ড্রেজার এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকা। জব্দ করা হয় এক লাখ ৩ হাজার ঘনফুট বালু। জরিমানা আদায় ও কারাদণ্ড দেওয়া হয় কয়েকজনকে।
বন্ধ করা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে হালদা দূষণ করে আসা এশিয়ান পেপার মিলস এবং ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্লান্ট। দূষণরোধে নেওয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ। ফলে দখল-দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া হালদা নদীকে বাঁচাতে এখন আশার আলো দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সহায়তায় হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের এসব উদ্যোগ দেশের গণমাধ্যমগুলোর খবরের শিরোনাম হয়েছে একাধিকবার।
ছাড়া হলো ১ লাখ পোনা
এবছরই প্রথম হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা মাছের রেণু প্রক্রিয়া করে তৈরি পোনা ফের হালদায় ছাড়া হয়। হালদা নদীতে মাছের পরিমাণ সমৃদ্ধ করতে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর কার্প জাতীয় মা মাছের মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে হালদায় ১ লাখ পোনা ছাড়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হালদা নদীর পোনা যথেষ্ট মানসম্পন্ন। অতীতে স্থানীয় হ্যাচারি থেকে পোনা নিয়ে ছাড়া হলেও হালদার পোনা হালদাতে ছাড়ার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এবার হালদার পোনা হালদায় ছাড়ার কারণে মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। হালদা নদীতে উন্নতমানের মা মাছের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ডিমের পরিমাণও বাড়বে। যা দেশের মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গত ৮ অক্টোবর হালদা নদীর গড়দুয়ারা অংশে প্রায় ১৫ হাজার পোনা ছাড়া হয়। কয়েকটি পর্যায়ে বাকি সব পোনা হালদায় ফেলা হয় বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন।
তবুও কাটছে না শঙ্কা
১২ কিলোমিটার ধরে ব্লক বসানো ও বাঁধ নির্মাণের ফলে হালদা পাড়ে প্রতিদিন ভিড় করেন হাজারো মানুষ। নদীর প্রাকৃতিক রূপ দেখতে আসা এসব মানুষ প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতল, প্লেট, গ্লাস, চিপসের প্যাকেটসহ নানা আবর্জনা নদীতেই ফেলছেন। খাবারসহ নানান অপচনশীল প্লাস্টিক-পলিথিন নদীতে ফেলার কারণে হালদার মা-মাছ, ডলফিনসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ হুমকির মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯
এমআর/এসি/টিসি