চট্টগ্রাম: ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সকালে সীতাকুণ্ড বিএম গেইট এলাকা থেকে এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ জানতে পারে ওই মরদেহ রফিকুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ব্যক্তির।
সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ আট মাস তদন্ত করেও এ মামলার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি। পরে থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানাস্তর হয়। এ মামলায় সাকিবুল ইসলাম প্রকাশ সাকিব ও ইমরান নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আসামিরা হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়।
পুলিশ জানতে পারে রফিকুল ইসলাম হত্যার পরিকল্পনা করেন তার স্ত্রী উম্মি ছালমা ও তার পরকীয়া প্রেমিক সাকিবুল ইসলাম প্রকাশ সাকিব এবং রফিকুলকে হত্যার জন্য ইমরানকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনা হয়।
উম্মি ছালমা ও তার পরকীয়া প্রেমিক সাকিবুল ইসলাম প্রকাশ সাকিবের বিষয় নিয়ে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ঝগড়া থেকে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা।
২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ঘটনার দিন রফিকুলকে হত্যার সময় পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তার স্ত্রী উম্মি ছালমা। হত্যার পর মরদেহ ফেলে যাওয়ার কাজটিও একই সঙ্গে করেন স্ত্রী উম্মি ছালমা।
কিন্তু ঘটনার পর রফিকুলের স্ত্রী উম্মি ছালমা নিজে বাদি হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পিবিআই এ মামলা তদন্ত শেষে হত্যার সঙ্গে বাদির জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় এবং নতুন করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সীতাকুণ্ড থানায় দণ্ডবিধিরি ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর: ৪৬।
এর আগে রোববার নাটোর জেলার সিংড়া আনন্দনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রফিকুলের স্ত্রী উম্মি ছালমাকে আটক করে পিবিআই। তাকে সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করা হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, রফিকুল হত্যা মামলায় তার স্ত্রীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। নতুন করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার নাটোর জেলার সিংড়া আনন্দনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে রফিকুলের স্ত্রী উম্মি ছালমাকে আটক করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল আব্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সকালে সীতাকুণ্ড বিএম গেইট এলাকা থেকে রফিকুল ইসলামের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রফিকুল ইসলামের স্ত্রী উম্মি ছালমা বাদি হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ আট মাস তদন্ত করেও এ মামলার কোনো ক্লু বের করতে পারেনি। পরে থানা পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানাস্তর হয়। এ মামলায় সাকিবুল ইসলাম প্রকাশ সাকিব ও ইমরান নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আসামিরা হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়।
এসআই মো. কামাল আব্বাস বলেন, গ্রেফতার দুই আসামির স্বীকারোক্তি ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে রফিকুল হত্যার সঙ্গে তার স্ত্রী উম্মি ছালমার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। গ্রেফতার আসামি সাকিব জানায়, উম্মি ছালমার সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্কের বিষয়টি রফিকুল জেনে যাওয়ার পর এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঝগড়া থেকে রফিকুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে উম্মি ছালমা ও সাকিব।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২০
এসকে/টিসি