ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে করোনায় কেড়েছে ১৩ চিকিৎসক ও ১০ পুলিশের প্রাণ

মিনার মিজান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
চট্টগ্রামে করোনায় কেড়েছে ১৩ চিকিৎসক ও ১০ পুলিশের প্রাণ ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই মরদেহ নিয়ে কম হয়নি টানাটানি। করোনা আক্রান্ত ভেবে বাড়ির উঠানে ১২ ঘণ্টা মরদেহ ফেলে রাখা কিংবা মৃত বাবার মরদেহ ফেলে সন্তানদের পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে চট্টগ্রামে।

তবে এর বিপরীত চিত্রও ছিল৷ পরিবারের আত্মীয়-স্বজন যখন নিজের আপনজন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তখন কিছু মানুষ দাঁড়িয়েছেন অসহায় মানুষের পাশে। মরদেহ নিয়ে ছুটে গেছেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।

 

গত এক বছরে করোনায় শুধু সাধারণ মানুষ নয় মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হয়েছে চিকিৎসক, পুলিশের নামও। এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ চিকিৎসক ও ১০ পুলিশ সদস্যের। এছাড়া করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫৭ জন।  

মরদেহ সৎকারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান

এ বছরের ১৩ মে নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে বাবার মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যান সন্তানরা। এমন ঘটনা নাড়া দেয় মানুষের বিবেককে। কোনো উপায় না পেয়ে মরদেহ পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া করোনা ভেবে মিরসরাইয়ে বাড়ির উঠানে ১২ ঘণ্টা মরদেহ ফেলে রাখা হয়। মরদেহ বাড়িতে আনায় পালিয়ে যায় আত্মীয় পরিজনসহ পাড়া প্রতিবেশী। তবে এর বিপরীতে চিত্রও রয়েছে। মরদেহ নিয়ে যখন আত্মীয় স্বজনরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, গাউসিয়া কমিটি, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। পায়ে হেঁটে অজ পাড়াগাঁ থেকে মরদেহ নিয়ে আসা, রাতের পর রাত জেগে থেকে মরদেহ গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া কিংবা হাঁটু পানিতে শ্মশানে মরদেহ দাহ-সবই করেছেন তারা। করোনার মহামারীতে তারাই ছিলেন একমাত্র ভরসার জায়গা।  

করোনায় নগরে ৩৫৭ জনের মৃত্যু 

চট্টগ্রামে করোনায় ৩৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই ষাটোর্ধ্ব বয়সী। এখন পর্যন্ত করোনায় শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ৩ জন, ২১ থেকে ৩০ বছর বসয়ী ৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ১৮ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ৪৫ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৮৮ জন এবং ৬১ বছরের ওপরে মৃত্যু হয়েছে ১৯৩ জনের।  

পুলিশ সদস্যের মৃত্যু

গত ১৫ মে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের বন্দর জোনের কনস্টেবল নঈমুল হকের মৃত্যু হয় করোনায়। ১৫ দিন পর ৩০ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান সিএমপির বিশেষ শাখার আরেক কনস্টেবল গোলামুর রহমান।  

১ জুন মারা যান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) বিভাগের কনস্টেবল মামুন মিয়া। তিনদিন পর ৪ জুন হালিশহর থানার পুলিশ কনস্টেবল নেকবার হোসেন এবং চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কনস্টবেল মোখলেসুর রহমান মারা যান।

৬ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানার এসআই আকরামুল ইসলাম, ২৩ জুন জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের এসআই জাহাঙ্গীর আলম, ১ জুলাই সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কনস্টেবল আ ফ ম জাহেদ, ১৩ জুলাই করোনা আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মিজানুর রহমান এবং ২৫ ডিসেম্বর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় জাহিরুল ইসলামের।

করোনা ভাইরাসে ১৩ চিকিৎসকের মৃত্যু

চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের উপসর্গ বা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩ জন চিকিৎসক। এরমধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকের পাশাপশি রয়েছেন প্রবীণ চিকিৎসকও।

গত ২৫ মে (ঈদের দিন) ভোরে চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুবরণ করেন ডা. এস এম জাফর হোসাইন রুমি। ৩ জুন দুপুরে চট্টগ্রাম মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এবং মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এহসানুল করিম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৪ জুন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. মহিদুল হাসান করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ১২ জুন রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান আরেক চিকিৎসক ডা. আরিফ হাসান। ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতেন তিনি।

একদিন পর ১৪ জুন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রামের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাদেকুর রহমান। এছাড়া ১৭ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করেন ডা. নুরুল হক। ২১ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীণ চিকিৎসক ডা. ললিত কুমার দত্ত এবং একদিন পর ২৪ জুন মারা যান চট্টগ্রামে প্রথম প্লাজমা থেরাপি নেওয়া চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সমিরুল ইসলাম।  

২৪ জুন দিবাগত রাতে ডা. শহিদুল আনোয়ার নামে আরও এক প্রবীণ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। ২৬ জুন রাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ হোসেন মারা যান। গত ১৪ জুলাই দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৩৪ বছর বয়সী চিকিৎসক সুলতানা লতিফা জামান আইরিন। গত ৩ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ডা. মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী (তসলিম) এক চিকিৎসকের। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর ভোরে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের কোভিড শনাক্তকরণ আরটিপিসিআর ল্যাবের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ হাসান মুরাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
এমএম/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।