চট্টগ্রাম: ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। তবে চুল শক্ত করে বেঁধে সামনে এগিয়ে চলার মতো আত্মবিশ্বাস থাকে ক' জনের? নারী মানেই এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা।
চট্টগ্রামের তারুণ্যমুখর বিদ্যাপীঠ চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (সিআইইউর) রয়েছে একঝাঁক নারীর দুরন্ত পথচলা।
বোর্ড অব ট্রাস্টি, অ্যাকাডেমিক, রেজিস্ট্রার, গ্রন্থাগারিক- সবখানেই নারীদের জয়জয়কার। দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা ও সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা উপাচার্যসহ পরিচালনা পর্ষদের কাছে একাধিকবার প্রশংসিত হয়েছে।
সিআইইউর বোর্ড অব ট্রাস্টিতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রামের নারী জগতের দুই উজ্জ্বল মুখ। তাদের একজন হলেন দিলরুবা আহমেদ, অন্যজন সাফিয়া গাজী রহমান। দু’জনেই শিক্ষা ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেশ পরিচিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের উদারতা সবসময় গেঁথে আছে সবার মনে।
সিআইইউর ৪টি অনুষদের (স্কুলের) শিক্ষকতা পেশায় রয়েছেন একাধিক মেধাবী নারী। তারা ক্লাস নিচ্ছেন সশরীরে। অনেকে বাড়িতে বসে অনলাইনে। না, এখানেই শেষ নয়। সেমিনার, ওয়ার্কশপ কিংবা গবেষণায়ও রয়েছে তাদের চিন্তার মনোনিবেশ।
সিআইইউ বিজনেস স্কুলে ঢুকেই দেখা গেল সহযোগী অধ্যাপক ড. রোবাকা শামসের মনোযোগ দিয়ে পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘক্ষণ পাঠদান করায়ও নেই তার কোনো ক্লান্তি।
ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন রিফাত তাসনিম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরাই আমার প্রাণ। এই পেশাতে আমি পেয়েছি তাদের ভালোবাসা। সব বাধা আর প্রতিবন্ধকতার দেয়াল পেছনে ফেলে নারীকে যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। ’
আরেক শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক সার্মেন রড্রিক্স আছেন হয়রানি প্রতিরোধ অভিযোগ কমিটির বড় তদন্তে।
সিআইইউর রেজিস্ট্রার পদে দায়িত্ব পালন করছেন আনজুমান বানু লিমা। খুব সকালে অফিসে ঢুকেন তিনি। বের হতে সেই সন্ধ্যা। বিওটি, অ্যাডমিশন, ফাইন্যান্স-সব দায়িত্বে রয়েছে তার অংশগ্রহণ।
তিনি বলেন, ‘কাজটা করতে ভীষণ ভালো লাগে। নারীর আত্মবিশ্বাসই তার অগ্রযাত্রার সাফল্য। ’
ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক (লাইব্রেরিয়ান) সাকিনা সুলতানাকে পাওয়া গেল বইয়ের বিশাল ভুবনে। লাইব্রেরি সাইন্স নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া এই নারী সবসময় হাসিখুশি।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘নারী দুর্বল এ ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সিআইইউ কর্তৃপক্ষ নারীদের যোগ্যতা বিবেচনা করে তাকে আলাদা সম্মান দিচ্ছে। আমি মনে করি এ ধরনের মানসিকতা সব প্রতিষ্ঠানের থাকা উচিত। ’
সিআইইউর অ্যামেরিকান কর্নারের সহকারী পরিচালক রুমা দাশ রয়েছেন শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার নানান কর্মসূচিতে। তার পাশাপাশি রেজিস্ট্রার অফিস, অ্যাডমিশন অফিস, অ্যাকাউন্টস অফিসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শাখাতে রয়েছে দক্ষ নারীদের বিচরণ।
কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের এমন সাফল্যে ভীষণ আনন্দিত সিআইইউর উপাচার্য ড. মাহফুজুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ সবাই সমান দক্ষতায় কাজ করছেন। এখানে নেই কোনো ভেদাভেদ, নেই কোনো প্রতিবন্ধকতা। ’ কখনও কখনও নারী কর্মীরাই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ইতিবাচক সুনাম ছড়িয়ে দিতে বড় অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন বলে জানান উপাচার্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, ৮ মার্চ, ২০২২
বিই/টিসি