ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিএমএম আদালতে মামলা জট, ১৪ বছরেও বাড়েনি বিচারক

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
সিএমএম আদালতে মামলা জট, ১৪ বছরেও বাড়েনি বিচারক ...

চট্টগ্রাম: সিএমএম (চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতে মামলার সংখ্যা বাড়লেও গত এক দশকে বাড়েনি বিচারকের সংখ্যা। বিচারকের তুলনায় মামলা বেড়েছে তিন গুণ।

২০০৭ সালে মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ১০৬টি। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৫১৮টি।
 

জানা গেছে, এখন আটটি আদালতে বিচারক আছেন ৬ জন। দুইজন বিচারক প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে আছেন। মামলাজটের কারণে সিএমএম আদালতে বিচারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রত্যাশীরা। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অতিরিক্ত আদালত ও বিচারক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানো দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে একজন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ৬ থানা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির কার্যক্রম শুরু হয়। জনসংখ্যা ও অপরাধপ্রবণতা বাড়ায় বর্তমানে নগরে থানার সংখ্যা ১৬টি। ১৯৯২ সালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মামলা ছিল ৮ হাজার ৫৬৭টি। মামলা বাড়ার কারণে ওই বছর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে পাঁচে উন্নীত করা হয়। মামলার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের একটি পদ বাড়ানো হয় ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০০৭ সালে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ হাজার ১০৬টি হওয়ায় পরের বছর আরেকটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বাড়ানো হয়। ২০০৭ সালের তুলনায় বর্তমানে মামলার সংখ্যা তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য মতে, ৪৮ হাজার ৫১৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর সঙ্গে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি নতুন মামলা যোগ হচ্ছে।  

নগরের ১৬ থানার বাসিন্দারা থানায় কিংবা সরাসরি মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করে থাকেন। এসব মামলায় গ্রেফতার আসামির জামিন, রিমান্ড শুনানি, জবানবন্দি গ্রহণসহ যাবতীয় কার্যক্রম হয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। বর্তমানে একজন  চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম), একজন অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএম) এবং ছয়জন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিচালিত হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে রয়েছেন। এছাড়াও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনটি দ্রুত বিচার আদালত ও একটি বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতেরও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বিচারকদের।

এই অবস্থায় মামলার জট কমাতে ২০১৩ সালে ২৮ অক্টোবর তৎকালীন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান চৌধুরী মহানগর দায়রা জজের মাধ্যমে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। সেখানে চট্টগ্রামে দুইটি অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং চারটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের  নতুন পদ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাব করা হয়। একইভাবে মামলার জট কমাতে ২০১৬ সালে ২৮ জুন তৎকালীন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো.শাহজাহান কবির ও ২০১৯ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ওসমান গণি মহানগর দায়রা জজের মাধ্যমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। সেখানে  চট্টগ্রামে তিনটি অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ছয়টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নতুন পদ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে সম্প্রতি আবারও মামলা জট কমাতে মহানগর দায়রা জজের মাধ্যমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে চট্টগ্রামে তিনটি অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ছয়টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নতুন পদ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাব করা হবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান।  

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সংশ্লিষ্ট বলছেন, বর্তমানে প্রতিটি আদালতে ৬ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে। নগরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে নতুন অপরাধ এবং মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। আদালতের সংখ্যা বাড়ানো না হলে মামলার সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। বিচারপ্রার্থীরা দীর্ঘসূত্রতার কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাবে। গত ১৪ বছরে একাধিকবার বিচারক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।  

পুলিশ জানায়, নগরে প্রায় ৯০ লাখ লোকের বসতি রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি লোক নগরে আসা-যাওয়া করে। জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে অপরাধও বাড়ছে। তাই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশি সেবা বাড়ানোর জন্য থানার সংখ্যা ছয় থেকে ১৬টিতে উন্নীত করা হয়েছে। নতুনভাবে আরও ৪টি থানার সংখ্যা বাড়ানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলা জট নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিচারকদের। মামলার অনুপাতে নতুন বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে আদালত বসছে না। দিনের পর দিন শুনানি হয় না অনেক মামলার। ব্যয়, ধীরগতিসহ নানা কারণে মামলার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অপরাধ বাড়ছে, মামলাও বাড়ছে। নগরে প্রায় ১ কোটি বাসিন্দা। বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধি না করলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ বাড়তে থাকবে। কারণ, প্রতিদিনই নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে।  

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারকের সংখ্যা বাড়াতে আইন মন্ত্রণালয়কে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দ্রুত বিচারক সংখ্যা বাড়িয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার জট কমাতে হবে। বিচারকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা সবসময় তাগিদ দিচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০২২
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।