ঢাকা: ‘চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন নেই। নতুন সরকার গঠন করে ক্ষমতায় এলেও তাদের পুরনো বাজেটই আবার ঘুরে এসেছে।
প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে এই অভিমত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের। শুক্রবার (৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সিপিডির জাতীয় বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিমত দেন।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বর্তমান নড়বড়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধান দুটি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। প্রথমত, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ; দ্বিতীয়ত, মুদ্রার সঞ্চায়ন বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ফিরিয়ে আনা।
কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সে ধরনের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে প্রত্যেকটি জায়গায় এখন অস্থির অবস্থা চলছে। রাজস্ব আহরণ, সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক খাত থেকে উচ্চ সুদ হারে সরকারের ঋণ গ্রহণ করা, ব্যাংকে নগদ টাকা কমে যাওয়ায় রপ্তানিতেও অস্থির অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়াও ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া, প্রত্যাশা অনুযায়ী রেমিট্যান্স না বাড়া, আমদানি কমিয়ে আনা, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে টাকার মান কমিয়ে আনা হয়েছে, এগুলোও প্রভাব ফেলছে দেশের অর্থনীতিতে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বেসরকারি বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়, রপ্তানি আয়, এমনকি প্রবাসী আয়েও তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু গত মাসেও মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে ছিল। আগামী ১ মাসে সেটা কমে গিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হবে কীভাবে, সেটা বোধগম্য নয়।
গত মাসে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিল ২ শতাংশ, আগামী অর্থবছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। চলতি বছরেও ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছিল, তা অর্জিত হয়নি। আগামী বছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কীভাবে অর্জিত হবে, সে কথাও বলা হয়নি। আমদানি প্রবৃদ্ধি আগামী বছর ১০ শতাংশ লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। চলতি বছরে তা নেতিবাচক রয়েছে। এটা বাস্তবায়ন যোগ্য নেই; বলেন ফাহমিদা খাতুন।
তিনি বলেন, নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত প্রাক্কলন করার প্রয়োজন ছিল, সেটা নেই। প্রাক্কলন তখন সঠিকভাবে করা যাবে, যদি বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া হয়। বাজেটে সেই বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
কালো টাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এটা বড় ধরনের সামাজিক অন্যায়। আগের বছরগুলোতে কালো টাকা ১৫ শতাংশ কর দিয়ে সাদা করার ব্যবস্থা থাকলেও এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে সেই প্রশ্ন করার সুযোগও তুলে নেওয়া হয়েছে। নৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এর মাধ্যমে কালো টাকার মালিকদের পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শুভঙ্করের ফাঁকি তৈরি করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রির পরিসর কমানো হয়েছে। আবার সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, কৃষি ভর্তুকির মতো বরাদ্দ যুক্ত করে প্রকৃত সহায়তার দাবিদারদের সুযোগকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মূল্যস্ফীতির কারণে দুর্ভোগে পড়া কম আয়ের বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার পরিবর্তে আরও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার মোয়াজ্জেম হোসেন ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলামি খান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৪
জেডএ/এসএমএকে/এসআইএস