ফরিদপুর: এসএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে রেখে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মধুরাপুর গ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই বিদ্যালয়ের চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা।
পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্য বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা। এর আগে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফারুক হোসেনসহ তিন জনের নামে মধুখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর পক্ষে তার চাচাতে ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. আশিকুজ্জামান হৃদয় লিখিত বক্তব্য পড়েন।
তিনি বলেন, আমার বোন সাদিয়া মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোচিং করতে হয়। যেখানে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত না থাকলে জরিমানার ব্যবস্থা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। অসুস্থতার কারণে এক সপ্তাহ কোচিংয়ে অনুপস্থিত থাকায় আমার বোনকে ৬০০ টাকা জরিমানা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবং টাকা পরিশোধ না করলে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড আটকে রাখবে বলে হুমকি দেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন। সাদিয়া বিষয়টি বাড়িতে এসে বললে সাদিয়ার বাবা-মা মো. হাচান বিশ্বাস ও বীনা বেগমসহ আমি মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বাধ্যতামূলক কোচিং বাণিজ্যের প্রতিবাদ করি এবং জরিমানা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করি। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং স্কুলের দপ্তরি মো. আবু বকর সিকদার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেনের ভাতিজা মো. তাজ মোল্যাসহ কয়েকজন আমাকে কিল-ঘুষি মেরে শার্ট ছিড়ে ফেলেন। আমার চাচিকেও অপমান করেন তারা। এছাড়া আমাদের দেখে নেওয়ার কথাও বলেন তারা। গোটা ঘটনাটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শুকুমার চক্রবর্তী দাঁড়িয়ে থেকে দেখলেও নীরব ভূমিকা পালন করেন।
আশিকুজ্জামান হৃদয় আরও বলেন, পরর্তীতে আমি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ঘটনার দিন মঙ্গলবারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। আমাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন, দপ্তরি মো. আবু বকর শিকদার ও তাজ মোল্যার নামে একই দিনে মধুখালী থানায় লিখিত অভিযোগ দিই।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর পরিবার দাবি করেন, সারাদেশে সরকার কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার ঘোষণা করলেও উপজেলা বিভিন্ন স্কুলে কোচিং বাণিজ্য চালু রয়েছে। যা আমাদের মতো অনেক গরিব পরিবারের ওপর অতিরিক্ত অর্থের বোঝা।
তারা আরও অভিযোগ করেন, অতিরিক্ত ৫০ টাকা না দিলে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক খাতায় শিক্ষকেরা স্বাক্ষর করছেন না। এমনকি বিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষার ফল খারাপ করানোর হুমকি দেওয়া হয় এবং প্রাইভেট পড়তে জোর করা হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সাদিয়া মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, কোচিং নয়; ভালো ফলাফলের লক্ষ্যে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্লাসে উপস্থিত হয় সে লক্ষ্যে তাদের জরিমানার ভয়ভীতি দেখানো হয়, এর বাইরে কিছু নয়।
তিনি আরও বলেন, স্কুলে আমার সঙ্গে তেমন কিছু হয়নি, কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ওই ছেলে (পরীক্ষার্থীর চাচাতো ভাই) স্কুলের বাইরে গিয়ে আজেবাজে কথা বলছিল, তখন আমার ভাতিজা তাজের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। দপ্তরি তাকে জড়িয়ে ধরে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুকুমার চক্রবর্তী বলেন, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই ছাত্রীর কাছে বিদ্যালয়ের কিছু টাকা পাওনা ছিলো, যা পরিশোধ করতে বলা হয়। কিন্তু ওই ছাত্রীর অভিভাবক (চাচা) সুপারিশ করায় ২৫ এপ্রিল সাড়ে ১০টার দিকে প্রবেশপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু এর আগেই ওই শিক্ষার্থীর চাচাতো ভাইসহ অভিভাবকরা এসে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে। এসময় সহকারী প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডাও হয়। তখন সম্ভাব্য মারামারি এড়াতে স্কুলের দপ্তরি ওই ছেলেকে টেনে ধরে দূরে সরিয়ে দেয়।
তবে ওই ছাত্রীর কাছে কোন খাতের টাকা পাওনা ছিলো তা তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি প্রধান শিক্ষক শুকুমার চক্রবর্তী।
ওই বিদ্যালয়ে কোনো ধরনের কোচিং করানো হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, স্কুল কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয়।
স্কুলের শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকির বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন তিনি। তিনি জানান, ২৭ এপ্রিল দুপুরে ওই শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র বুঝিয়ে দিওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৩
এসএএইচ