ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

শিক্ষা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ১৭৫ একরের পুরোটাই যেন ফলের বাগান

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: ১৭৫ একরের পুরোটাই যেন ফলের বাগান

ইবি: চারদিকে বইছে তীব্র তাপদাহ। গ্রীষ্মের ভ্যাপসা গরমে দূর থেকে হঠাৎ দেখা গেল বঙ্গবন্ধু হলের পুকুর পাড় ঘেঁষা তালগাছের নিচে জড়ো হয়ে আছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।

 

একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, কচি তালের কাঁদি নিয়ে বসে আছেন তারা। কিছুক্ষণ আগেই তালগাছ থেকে তালগুলো পেড়েছেন তারা।  

একে একে তালগুলো কেটে তারা তালের শাঁস খাচ্ছেন মনের আনন্দে। খাওয়ার পর অবশিষ্ট তালগুলো হলে নিয়ে যাচ্ছেন রুমমেট, সহপাঠী কিংবা বন্ধুদের জন্য। হলের পুকুর পাড়ে জন্মানো তালগাছ থেকে তাল পাড়ার দৃশ্য বর্তমানে চোখে পড়ার মতো। এ তো গেল শুধু তালের বর্ণনা।  

মধুমাস খ্যাত জৈষ্ঠ্যের ভ্যাপসা গরমে গাছে পেকেছে জামও। ছাত্রী হলগুলোর সামনে লাগানো গাছগুলোতে পাকা জামের সমাহার। এছাড়া সাদ্দাম হল, কেন্দ্রীয় মসজিদ, মীর মশাররফ হোসেন হল, একাডেমিক ভবন সংলগ্ন গাছগুলোতে ধরেছে অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রায় ৫০টির মতো জামগাছের প্রতিটিতেই ধরে জাম। সকাল, দুপুর, বিকেলে শিক্ষার্থীরা মনের আনন্দে গাছ থেকে জাম পেড়ে খাচ্ছেন।
 
তাল, জাম ছাড়াও মধুমাসের প্রায় সব ফলই রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভবনের সামনে-পেছনে রয়েছে চারটি আম বাগান। এছাড়া হল-আবাসিক এলাকাসহ সব জায়গায় রয়েছে আমগাছ। সব মিলিয়ে অন্তত ২৭০টি আমগাছ রয়েছে ক্যাম্পাসে। কয়েকটি গাছ বাদে প্রায় সব গাছেই ধরে বিভিন্ন জাতের আম।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলের সামনে, টিএসসিসি এবং অনুষদ ভবনের সামনে দেখা মিলবে লিচুগাছ। সব মিলিয়ে প্রায় শতাধিক লিচু গাছ রয়েছে ক্যাম্পাসে। এর মধ্যে টিএসসিসি এবং অনুষদের পাশের গাছগুলোতে লিচু কম ধরলেও শেখ রাসেল হলের সামনের লিচু বাগানে অনেক লিচু ধরে প্রতি বছর।   

এছাড়া সাদ্দাম হল, পুকুর পাড়সহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে কাঁঠাল গাছ। এসব কাঁঠাল গাছে প্রতি বছর কাঁঠাল ধরে। কাঁঠাল ছাড়াও বঙ্গবন্ধু হলের অভ্যন্তরে রয়েছে জামরুল। এ তো গেল শুধুমাত্র জৈষ্ঠ্য মাসের ফলের কথা।  

জৈষ্ঠ্য মাসের ফল ছাড়াও ক্যাম্পাসে রয়েছে আরও বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ। এসব গাছে প্রতি বছরই ধরে বাহারি ফল। এর মধ্যে রয়েছে আমড়া, পেয়ারা, আমলকি, সফেদা, কলা, বাতাবি লেবু, বেল, বড়ইসহ নানান ফল। সব ফলের মধ্যে আমলকির পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। উপাচার্যের বাসভবনের সামনের রোডে সারিবদ্ধ এবং প্রভোস্ট কোয়ার্টারের পাশে রয়েছে আমলকির বাগান। ক্যাম্পাসে অন্তত চার শতাধিক আমলকি গাছে ধরে আমলকি।
 
এছাড়াও অন্তত দুই শতাধিক পেয়ারা, শতাধিক আমড়া, অর্ধ শতাধিক বেল গাছসহ ১৭৫ একরের প্রায় সব খানেই রয়েছে নানা ফলের গাছ। প্রতি বছরই এসব গাছে ফল ধরে প্রচুর। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে তিন হাজারেরও বেশি ফলের গাছ রয়েছে।   

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে ক্যাম্পাসে যে পরিমাণ আম, কাঁঠাল, লিচু, তালগাছ রয়েছে, সেগুলো থেকে পরিপক্ক আম সংগ্রহ করা গেলে অন্তত ৩০০ মণ আম, দুই-তিন হাজারটি কাঁঠাল, এক লাখের মতো লিচু এবং অন্তত পাঁচ হাজারের তাল পাওয়া যাবে। এছাড়া পাকা জামের পরিমাণ হবে তিনশ থেক চারশ মণ।

তিনি আরও জানান, আম, কাঁঠাল এবং লিচুগুলো পাকার আগ পর্যন্ত পরিচর্যা কিংবা পাহাড়া দিয়ে রাখলে পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এছাড়া আমড়া, পেয়ারাসহ অন্যান্য ফলও অনেক হয় ক্যাম্পাসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমাদ গালিব বলেন, এ মৌসুমে আম-লিচু বাগানের ছায়াঘেরা পরিবেশে যেন নতুনভাবে ভালোলাগা খুঁজে পাচ্ছি। অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না, কবে আম পাককে, আর খাব। মধুমাসের এ উচ্ছ্বাস বন্ধুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।  

আরেক শিক্ষার্থী অনিক আহম্মেদ জানান, ক্যাম্পাসের এসব ফল দেখে শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। শৈশবে গ্রামে বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে গাছ থেকে আম কুড়াতাম, লিচু পারতাম। ক্যাম্পাসের চারদিকে তাকালে গাছে গাছে কাঁঠাল, আম, লিচু দেখা যায়। এসব ফলের ঘ্রাণ মোহিত করে তুলছে চারপাশ।  

তবে ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে অনেক ফল ধরলেও খাওয়ার উপযোগী হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন এবং ক্যাম্পাসের কিছু শিক্ষার্থী এসব ফল পাকার আগেই ছিঁড়ে নষ্ট করে ফেলেন।  

জানা যায়, গত ঈদুল ফিতরের ৪০ দিন ছুটির আগে রাসেল হলের সামনের লিচু বাগানে অসংখ্য ছোট ছোট লিচু দেখা যায়। ক্যাম্পাস ছুটি হওয়ার কিছুদিন আগেই লিচুগুলো মুকুল ছেড়ে বড় হতে শুরু করে। তবে ঈদের ছুটি শেষ করে ক্যাম্পাস খোলার পর দেখা যায়, লিচু বাগান মোটামুটি ফাঁকা।  

রাসেল হলের সামনে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা জানান, ক্যাম্পাস ছুটি ছিল ৪০ দিন। এ সময়টাতে লিচু সবুজ বর্ণ থাকা অবস্থায়ই স্থানীয় লোকজন লিচু পেড়ে নিয়ে গেছেন। যেগুলো ছিল, সেগুলো ক্যাম্পাস খোলার পর হালকা লাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী পেড়ে নেন। আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা না থাকায় আমরা এ বিষয়ে মাথা ঘামাইনি। মাঝে মধ্যে নিষেধ করলেও আমাদের কথার কোনো তোয়াক্কা করেননি তারা।

একই অবস্থা আমেরও। জানা যায়, বন্ধ থাকাকালে বস্তায় বস্তায় কাঁচা আম পেড়ে নিয়ে গেছেন বহিরাগতরা। ক্যাম্পাস খোলার পর কিছু শিক্ষার্থীও কাঁচা আম পাড়তে শুরু করেন। ফলে পাকার আগেই আম, লিচু একদম গাছ প্রায় ফাঁকা।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শ্যামলী খাতুন বলেন, ক্যাম্পাসের আম, লিচু কখনো পাকতে দেখিনি। কাঁচা আম শখের বসে দু’একটার বেশি খাওয়া যায় না। কিন্তু বহিরাগতদের পাশাপাশি আমাদের কিছু শিক্ষার্থীকেও দেখি বস্তা ভরে কাঁচা আম পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেখে মনে হয়, ভাগের জিনিস। ফুরিয়ে যাবার ভয়ে নিজেদের ভাগ দ্রুত নিজেরা বুঝে নেওয়া হচ্ছে! প্রশাসনের উচিত ফলগুলো পাকা পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ করা। পাশাপাশি আমাদের নিজেদেরও সতর্ক হওয়া উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা রোজদার আলী রূপম জানান, আসলে এসব ফল রক্ষা করতে গেলে অনেক কঠোর হতে হয়। কাঁচা ফল পাড়তে মানা করলেও শিক্ষার্থীরা শোনেন না। তারপরও ঠিকমতো তদারকি করলে অর্ধেক পরিমাণ ফল রক্ষা করা যায়। বিগত প্রশাসনের সময় অনুষদ ভবন এবং ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের আম বাগানগুলো পাহারা দেওয়ায় কিছু আম পাকতো। ওই সময় দুই বাগান থেকে ৭০ মণের মতো পাকা আম সংগ্রহ করা হয়। সেখান থেকে বেশিরভাগ আম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিলিয়ে দেওয়া হয়। আর ৩২ মণের মতো আম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে জমা দেওয়া হয়। তেমনিভাবে লিচু, তালওগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে কিছু বিক্রি করলে এবং বাকিগুলো শিক্ষার্থীদের বিলিয়ে দিলে ভালো হতো।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে যে পরিমাণ ফল ধরে, সে পরিমাণ ফল পাকলে শিক্ষার্থীরা খাওয়ার পরও অনেক থেকে যাবে। ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাওয়ার পাশাপাশি অনেক ফল বিক্রিও করা যেতো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, ঈদের ছুটিতে আমরা কাউকে লিচু পাড়তে দেইনি। গত ২৮ এপ্রিল ক্যাম্পাস খোলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাঁচা-আধাপাকা ফল পাড়তে শুরু করেন। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। প্রশাসন জানিয়েছে, এগুলো শিক্ষার্থীদের জন্যই, তারাই তো এগুলো খাবে। প্রশাসনের নির্দেশ ছাড়া আমরা কোনো কাজ করতে পারি না।

পরে এগুলো সংরক্ষণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংরক্ষণের নির্দেশ দিলে আমরা এগুলো সংরক্ষণ করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।