ঢাকা, রবিবার, ১ পৌষ ১৪৩১, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

জবির জায়গা দখল করে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
জবির জায়গা দখল করে চলছে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): রাজধানীর বাংলাবাজারের প্যারিদাস রোডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বাণী ভবনের জায়গা দখল করে স্থানীয় কাউন্সিলরের মদদে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দখলকৃত জায়গায় এ স্থাপনা নির্মাণে জড়িত।

বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী বিলুপ্ত কলেজের সব স্থাবর ও অবস্থার সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সম্পদের পরিসংখ্যানপত্র তৈরি করা হয়। এতে বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজের অধীনে ১২টি হল ও এর জায়গা ছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে আবাসিক হলগুলোয় অবস্থানরত ছাত্রদের সংঘর্ষের ফলে হলগুলোর অধিকাংশই বেদখল হয়ে যায়।

বেদখলকৃত সম্পত্তিগুলো উদ্ধারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে তিনটি হল ও হলের জায়গা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকা বাংলাবাজারের প্যারিদাস রোডে অবস্থিত বাণী ভবন। এ ভবনে দীর্ঘদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী বসবাস করে আসছেন। ভবনটির একপাশের জায়গা দখল করে দেয়াল তুলে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

সরজমিনে দেখা যায়, বাণী ভবনের সামনের অংশে টিনের বেড়া দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিং করা হচ্ছে। এ ভবনের দেয়াল ঘেঁষে তোলা হচ্ছে নতুন বাউন্ডারি ওয়াল। দুই স্তর বিশিষ্ট বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলে এ কাজ চলছে। ফলে পুরনো মূল ভবনের দেয়াল ও ভবনের কিছু অংশ হেলে পড়েছে। কোথাও কোথাও দেবে গেছে, এমনকি ভেঙেও গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের পেছনে প্রত্যক্ষ মদদ দিচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন। তার অধীনে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাণী ভবনে বসবাসকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, প্রথমে ভবনের সামনের অংশে দেয়াল তুলে জায়গা দখলে নেওয়া হয়েছিল। ভেতরে জায়গা ফাঁকাই ছিল। এখন সেখানে আরেকটা দেয়াল তুলে দুই স্তরের করা হয়েছে। কয়েক মাস আগে কাউন্সিলর ছোটনসহ আরও বেশ কয়েকজন এখানে এসে কয়েকবার জায়গা পরিদর্শন করে যায়। তারপর থেকে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। যারা এখানে কাজ দেখাশোনা করে সবাই ছোটন কমিশনার ও তার সহযোগীদের লোক। আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারি না।

দীর্ঘদিন ধরে বাণী ভবনে থাকা কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪-৫ বছর আগে ভবনটি ঘেঁষে দেয়াল তুলে এর সামনের জায়গা দখল করে নেওয়া হয়। সে জায়গার সামনের অংশে একটি বেসরকারি কোম্পানির কাগজের দোকান ছিল। এখন স্থানীয় কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন ও সহযোগীরা সেই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন জায়গাটি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হলেও কর্তৃপক্ষের কোনো ‘রা’ নেই। মৌজা ও খতিয়ানে পুরো জায়গাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে থাকলেও সম্পত্তি রক্ষায় কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একের পর এক জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সেসব সংরক্ষণ বা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাণী ভবনের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত বন্ধ করে জায়গা বুঝে নিতে হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

মুনতাসির মাহমুদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সিটি করপোরেশন ও প্রভাবশালী ব্যক্তি সবারই নজর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির দিকে। আমাদের হল, খেলার মাঠ সব দখল হয়ে গেছে। এখন বেঁচে থাকা বাণী ভবনের জায়গাটাও দখল করে নিচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও নির্বিকার। এই জায়গা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় ছাত্ররা বসে থাকবে না।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল হোসেন বলেন, আমি শোনার পর জায়গাটি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি আমি উপাচার্যকেও জানিয়েছে।

পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেনকে বিষয়টি তদারকির জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে তাকে প্রতিবেদন আকারে দিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।