ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

শিক্ষা

খুলনায় মাউশির অভিযান, স্কুলে হয় না জাতীয় সঙ্গীত

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
খুলনায় মাউশির অভিযান, স্কুলে হয় না জাতীয় সঙ্গীত খুলনায় মাউশির অভিযান/ ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনার সুলতানা হামিদ আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে কোনো ধরনের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয় না। হয় না শপথ পাঠ, তথা অ্যাসেম্বলি। প্রধান শিক্ষিকা থেকে শুরু করে অধিকাংশ সহকারী শিক্ষক সময়মতো স্কুলে আসেন না, পাঠদান করেন না। এমনকি ল্যাবের পরিবর্তে দুটি কম্পিউটার ও মডেম প্রধান শিক্ষিকা তার কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২১ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে মহানগরীর পিটিআই মোড় সংলগ্ন খানজাহান আলী রোড লাগোয়া স্কুলটিতে অভিযান চালানো হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তারা এ অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযানকালে উল্লিখিত অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যায়। অভিযানকালীন সময় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে উপস্থিত হননি।

এ সময় নিরাপত্তা প্রহরী সেলিম মুন্সি ও আয়া রাণি বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন গত কয়েকদিন ধরে স্কুলটিতে কোনো অ্যাসেম্বলি হয় না। সোয়া ৯টায় প্রবেশ করেন শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক এনামুল হক, অ্যাসেম্বলি না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি হাতজোড় করে ক্ষমা চান। একইভাবে কম্পিউটার শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার বেগম সময়মতো স্কুলে না আসায় অ্যাসেম্বলি হচ্ছে না। এছাড়া স্কুল সময়ের আধাঘণ্টা পরে কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রবেশ করলেও প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার বেগম পৌনে ১০টা পর্যন্ত স্কুলে উপস্থিত হননি।
সুলতানা হামিদ আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়
জিজ্ঞাসাবাদে কম্পিউটার শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের ল্যাবে ১১টি কম্পিউটার-ডেক্সটপ এবং একটি ল্যাপটপ রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা দুটি কম্পিউটার ও মডেম ল্যাব থেকে তার কক্ষে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। ইউপিএসও অকেজো। এমনকি ৫ শতাধিক ছাত্রীর কাছ থেকে কম্পিউটার খাতে অর্থ নেওয়া হলেও সংস্কার করা হয় না।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক টিএম জাকির হোসেন অভিযানকালে উল্লিখিত অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শপথ পাঠ এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের কোনো বিকল্প নেই। অ্যাসেম্বলি করতেই হবে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে প্রয়োজনে শ্রেণিকক্ষেই করতে হবে।

শপথ পাঠ এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন না করার অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে শিক্ষক এবং মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত থানা শিক্ষা অফিসার আব্দুল মোমিনকে শোকজ করা হবে বলেও জানান অধ্যাপক টিএম জাকির হোসেন।

মাউশি খুলনার সূত্র জানায়, অভিযানে নেতৃত্ব দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খুলনা অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক টিএম জাকির হোসেন। তার সাথে ছিলেন রিচার্স অফিসার মো. কামরুজ্জামান ও মো. মাহফুজুর রহমান।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সুলতানা হামিদ আলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার বেগমের এমপিও স্থগিত রয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া পারভেজের তদন্তে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়।  

অন্যদিকে ওই অভিযানের পর স্কুল চলাকালীন নগরীর ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের গেটের বিপরীতে শিক্ষাকুটির নামে একটি কোচিং সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। সেখানে দেখা যায়, স্কুল ড্রেস পরিহিত অবস্থায় ইকবাল নগর স্কুলেরই চতুর্থ থেকে সপ্তম শ্রেণির ৯৪ জনসহ শতাধিক শিক্ষার্থী ৪টি কক্ষে কোচিং করছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের নামের তালিকা করে স্কুল সময়ে কোচিং করানোর কারণ জানতে চেয়ে তাদের অভিভাবকদের শোকজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

কোচিং পরিচালক সুকুমার হালদার জানান, তিনি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত তৃতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করান। তবে স্কুল সময়ে কোচিং খোলা না রাখার নির্দেশনা তিনি জানতেন না বলে দাবি করেন।

ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার সরকার বলেন, শিক্ষাকুটির নামক কোচিং সেন্টারে সোমবার স্কুল সময়ে ৯৪জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া গেছে। স্কুল সময়ে কোচিং করানোর কারণ জানতে চেয়ে তাদের অভিভাবকদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হবে। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে টিসি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭/আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা
এমআরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।