ঢাকা, বুধবার, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভ্যানের প্যাডেল ছেড়ে স্কুলে যেতে চায় ওরাও

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
ভ্যানের প্যাডেল ছেড়ে স্কুলে যেতে চায় ওরাও

ইবি: যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার কথা, সেই বয়সে সংসারের আয় উপার্জনের জন্য সারাদিন ভ্যান চালাতে হয় ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ক্যাম্পাসের ভ্যান চালক ১২ বছর বয়সী তরিকুলের। শুধু তরিকুল নয় এরকম  অর্ধশত শিশুর নরম কাঁধে সংসারের কঠিন বোঝা।

তারা ক্যাম্পাসে সারাদিন ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করে ১৫০-২০০ টাকা।

পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ না থাকায় চোখে মুখে মায়া জড়ানো এসব শিশুর কঠিন শ্রমের কাজ করতে হচ্ছে। মাথার ওপর সূর্য। ফর্সা নিষ্পাপ মুখ বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। কাজের ব্যস্ততায় কথা বলার যেন ফুসরত নেই। তাদের এ ক্লান্তি সামান্য হলেও প্রশমিত করতে বুধবার (১৭ মার্চ) তাদের নিয়ে খোশ গল্পে মেতে উঠে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সদস্যরা।
 
সামান্য নাশতা পানি খেতে খেতে এসব শ্রমজীবী শিশুদের কাছ থেকে শোনা যায় জীবনের চরম বাস্তবতার গল্প। সবার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা। কিন্তু ওদের জন্য নয়। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে ওরা। নরম কাঁধে সংসারের বোঝা ও ভ্যানের প্যাডেল ছেড়ে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে স্কুলে ফেরার আকুতি এসব শিশুর।
প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে উপহার স্বরূপ দেওয়া হলুদ রঙের টি-শার্ট তাদের মনে ফাগুনের আনন্দবার্তা জানালেও গল্পচ্ছলে সে আনন্দ ফিকে হয়ে উঠে পরিবারের বোঝায়। দিনটি শিশু দিবস হলেও আদৌ তারা জানেনা দিবসের বিষয়ে। বাস্তবতার কাছে হার না মানা এসব শিশুরা স্কুলে যাওায়ার আকুতি জানায়। কার ভাল লাগেনা স্কুলে পড়তে যেতে। বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করতে। কিন্তু তারা যে বাস্তবতার কাছে বড় অসহায়।

শ্রমজীবী শিশুদের নিয়ে ইবি প্রেসক্লাবের এ আয়োজনে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের আজ পড়াশোনার কথা। কিন্তু তাদের পরিবারের হাল ধরতে হচ্ছে। কোথায় আমরা শিশুশ্রম বন্ধের উদ্যোগ নিবো তা না হয়ে বর্তমানে শ্রমজীবী শিশুদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সমাজের অবহেলিত এ শিশুদের নিয়ে প্রেসক্লাবের আজকে এ আয়োজন শিশুশ্রম বন্ধে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার রসদ জোগাবে। ’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সরকার মাসুম বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়েও আমরা শিশুশ্রম কাটিয়ে উঠতে পারিনি। শ্রমজীবী শিশুদের এ ক্রমবর্ধমান সংখ্যা খুবই দুঃখজনক। আমাদের সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। সমাজের বিত্তবানরা যদি একজন করেও শ্রমজীবী শিশুর দায়িত্ব নেয়। তাহলেও শিশুশ্রম কমানো সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রমজীবী শিশুদের এ আয়োজন নিয়ে কথা হয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনিও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, আসলে, পুরো বাংলাদেশের চিত্রই একই। সরকারের পাশাপাশি আমরা সবাই যদি এভাবে এগিয়ে আসি তাহলেই এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এ আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমজীবী শিশুদের নিয়ে প্রেসক্লাবের এ আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।