রাবি: নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইজারা দেওয়া পুকুর খননের মাটি বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন ঠিকাদার। দরপত্রের শর্ত ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি বাইরে নিয়ে যাওয়ায় বারবার কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পেছনের একটি জমিতে পুকুর খননের কাজ চলছে। সেখানে ১০-১২টি ট্রাক্টর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। খননযন্ত্র দিয়ে একের পর এক ট্রাক্টর ভরাট করে চলে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের বাইরে।
মাটির বিষয়ে জানতে এগিয়ে গেলে সেখানে খনন কাজের দায়িত্বে থাকা আবু বকর নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি ঠিকাদার মাসুদ রানার ভাই বলে পরিচয় দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি বাইরে নেওয়ার অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে আবু বকর বলেন, অনুমতি আছে। মহানগর ও স্থানীয় মতিহার থানা আওয়ামী লীগের নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে মাটি বাইরে নেওয়ার অনুমতি নিয়েছে। তবে অনুমতির বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইপার কলোনির পাশে এবং পশ্চিম পাড়ায় শিক্ষক কোয়ার্টার সংলগ্ন মোট দুইটি জমিতে পুকুর খননের কাজ চলছে। রাতের অন্ধকারে সুইপার কলোনির পাশে পুকুর খননের মাটি বাইরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়া থেকে দিনে-দুপুরে ক্যাম্পাসের মাটি বাইরে নিয়ে যাচ্ছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুইপার কলোনির পাশে ও পশ্চিম পাড়া শিক্ষক কোয়ার্টারের দুইটি পুকুর খননের জন্য ইজারা নেয় অহনা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বছর প্রতি দুটি পুকুরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় ৪ লাখ টাকা দেবে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে গত বছরের মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব পাশের প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পুকুর তৈরির জন্য টেন্ডার হয়। বছর প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার শর্তে চার বছরের জন্য পুকুরটির ইজারা পান বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বুধপাড়া এলাকার মাসুদ রানা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী খননের পর পুকুরের পাড় বাঁধাই করে অতিরিক্ত মাটি পাশেই রাখতে হবে। এই মাটি ব্যবহারের বিষয়ে কৃষি প্রকল্প সিদ্ধান্ত নেবে। তবে পুকুর খননের মাটি ট্রাক্টরে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নেওয়ার বিষয়ে সত্যতা পেয়েছে কৃষি প্রকল্প। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি ক্যাম্পাসের বাইরে না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অথচ সেই নির্দেশনা অমান্য করে গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাসের মাটি বাইরে নিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদাররা।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। এটি আমার এখতিয়ারের বাইরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কৃষি প্রকল্পের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, কৃষি প্রকল্পের পক্ষ থেকে পুকুর খননকৃত মাটি অন্যত্র না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি আমরা। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে তারা এসব কাজ করছে।
দরপত্রের শর্ত ভাঙার বিষয়ে জানতে অহনা ট্রেডার্সের হয়ে কাজের দায়িত্বে থাকা মুহাইমিনুল ইসলাম মানিককে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। এদিকে ইজারাদার মাসুদ রানার মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
আরএ