ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা 

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১১ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৮
ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা  ভোট গণনার প্রস্তুতি। ছবি: শাকিল/বাংলানিউজ

গাজীপুর থেকে: বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সকাল আটটায় শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত একটানা এ ভোটগ্রহণ চলে। এখন শুরু হয়েছে ভোট গণনার কাজ।

গাজীপুর সিটির দ্বিতীয় নগরপিতা হতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা মার্কা) আর বিএনপি সমর্থিত মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ)।  

মঙ্গলবার (২৬ জুন) রাজধানী লাগোয়া মহানগর গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৭৬১টি কক্ষের বুথগুলোতে ভোট নেওয়া হয়েছে।

সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে যায়।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সমন্বয়ক তারেক আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, চারটা থেকে গণনা শুরু হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণা হবে। আর কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হবে রিটার্নিং কর্মকর্তার অস্থায়ী কার্যালয় থেকে।  

সকাল ৯টার কিছু পরে কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ভোট দেন। এসময় তিনি দাবি করেন, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণ চলছে।  

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি সব ভোটকেন্দ্রের খোঁজ-খবর রাখছি। কোথাও কোনো অনিয়মের খবর পাইনি। আমি নিজেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিয়েছি। সকালে বৃষ্টির কারণে ভোটাররা বের হতে পারেননি। এখন সবাই ভোট দিতে আসছেন। এটা তাদের নাগরিক অধিকার। আমি আমার দলের নেতাকর্মীদের বলে দিয়েছি- ভোটাররা যেন সম্মানের সঙ্গে শেষ সময় পর্যন্ত ভোট দিতে পারেন সে বিষয়ে সহযোগিতা করতে।  

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী এই প্রার্থী বলেন, গাজীপুরের মানুষ বঞ্চিত। তারা যাতে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী পায় সেজন্য আমার চেষ্টা থাকবে। আমি গাজীপুরকে পরিকল্পিত গ্রিন (সবুজ) সিটি করতে চাই।  

এর আগে সকাল সোয়া ৮টার দিকে ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বশির উদ্দিন উদয়ন একাডেমি কেন্দ্রে নিজের ভোট দেন বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। ভোট দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশঙ্কা করলেও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।  

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি শতভাগ বিশ্বাস করি গাজীপুরের মানুষ আমাকে হতাশ করবে না। তারা ভোটের মাধ্যমে আমাকে জয়যুক্ত করবে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

তবে তিনি অভিযোগ করেন, ১২টি কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, মারধর ও আটক করা হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করছে। এরপরও আমি লড়ে যাবো শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চাই।

দুপুরে গাজীপুর সিটির কয়েকটি কেন্দ্রে দুই কাউন্সিল প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া একটি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হান্নান মিয়া হান্নুর (ঘুড়ি) ওপর হামলার অভিযোগও ওঠেছে।  

সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর কলমেশ্বর মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সিল প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল।  
  
দেশে নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের স্থানীয় সরকারের কোনো ভোটে একসঙ্গে ছয়টি কেন্দ্রে  ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট নেওয়া হয়েছে। নগরের চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাপুলিয়া মফিজ উদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয়, মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১, মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২, রানি বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ ও রানি বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ এ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেন ভোটাররা। কোনো ধরনের বিপত্তি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলে।

এদিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, হাসান সরকারের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া ও শতাধিক কেন্দ্র দখল করা হয়েছে।  

এক পর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গাজীপুর সিটিতে ভোট বন্ধের দাবিতে নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন জানান বিএনপি প্রার্থী হাসান সরকার।  

গাজীপুর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন; ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন নারী।  

এবার আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার ছাড়াও স্বতন্ত্র এবং বিভিন্ন দলের আরো পাঁচজন মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন। তারা হলেন- সিপিবির কাজী রুহুল আমিন (কাস্তে), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাত পাখা) এবং স্বতন্ত্র  ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)।  

সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে একটিতে ইতোমধ্যে একজন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাই ভোটগ্রহণ হচ্ছে ৫৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে। এরমধ্যে সাধারণ কাউন্সিলর ২৫৪জন এবং সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৮৪জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪০১ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৮
ইএআর/এমএএম/আরএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।