ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

বরিশালের শঙ্কা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা 

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৮
বরিশালের শঙ্কা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা  বরিশাল যেন এখন পোস্টারের নগর। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল থেকে: অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই আগামী ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি করপোরেশনে (বিসিসি) হতে যাচ্ছে নির্বাচন। এখনো পুরোদমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীরা অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে সীমাবদ্ধ থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকরা জড়িয়েছেন বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনাও। যেজন্য সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে বিশ্লেষকরা শান্তিপূর্ণ ভোটের আশা করলেও আশঙ্কা করছেন কিছুটা অস্থিরতারও। 

বরিশাল নগরের কয়েকটি এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এই আশাবাদ-আশঙ্কার কথা শোনা যায়। ভোটারদের আশঙ্কা, মেয়র পদে ভোট নিয়ে গোলমাল না হলেও বেশ কিছু ওয়ার্ডে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে।

আর এতে প্রভাব পড়তে পারে গোটা নির্বাচনে।

বিসিসির ২৭ নং ওয়ার্ডের ভোটার আরাফাত রহমান তারিক বলছিলেন, ‘সম্প্রতি এই ওয়ার্ডের ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গেলেও বলেছেন- তোমরা ভোট দাও আর না দাও আমিই কাউন্সিলর। ’ তারিক বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর সমর্থক-কর্মীদের খুব একটা ঝামেলা না হলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে গণ্ডগোল হতে পারে। কারণ এখানে কাউন্সিলরদের মর্যাদার লড়াই হচ্ছে। একেক জন কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রায় কোটি টাকা খরচ হচ্ছে নির্বাচনে, সেজন্য সবাই জয়ী হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ’

১০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদীন হাওলাদার ও এটিএম শহিদুল্লাহ কবিরের সমর্থকদের মধ্যে প্রচারণার শুরু থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। দু’জনই এলাকায় প্রভাবশালী। দু’জনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ১১ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বর্তমান কাউন্সিলর মজিবর রহমান এবং বিএনপি সমর্থিত মারুফ আহম্মদের সমর্থকদের তৎপরতাও উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভোটের ময়দানে। অন্যদিকে ১২ নং ওয়ার্ডে বিএনপি নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর কেএম শহীদুল্লাহ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. জাকির হোসেন সমর্থকদের মধ্যে প্রচারণার শুরুতেই হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে জেলা রিটানিং কর্মকর্তা তাদের সতর্কও করেছেন।

সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে ১৪ নং ওয়ার্ডেও। ওই ওয়ার্ডে জামায়াত নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তৌহিদুর রহমান ছাবিদ ও মো. শাকিল হোসেন পলাশের সমর্থকরা কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছেন না। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এসএম জাকির হোসেন, জিয়াউর রহমান ও মো. সাইদুর রহমান- তিন প্রার্থীই আওয়ামীলীগপন্থী হলেও দলীয়ভাবে কাউকেই সমর্থন দেয়নি মহানগর আওয়ামী লীগ। ফলে যে যার মতো শক্তির পরীক্ষায় নেমেছেন।

শঙ্কা রয়েছে ২১ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ মাহমুদ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শেখ সাঈদ আহমেদের সমর্থকদের ঘিরেও। ২৩ নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, এমরান চৌধুরী জামাল, মো. মিজানুর রহমান ও মো. শামীম। চারজনই আওয়ামী লীগের হলেও দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন দেওয়া হয়নি। সেজন্য শক্তি প্রদর্শনে এখানেও প্রতিদিন তাদের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটছে।

২৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া, সুলতান মাহমুদ, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এম. সাইদুর রহমান জাকির, মো. আবু হানিফ ও মো. ফজলুর রহমান হাওলাদারের কর্মী-সমর্থকদের মাঝেও ঘটছে বাকবিতণ্ডা।  

২৮ ও ৩০ নং ওয়ার্ড বর্ধিত সিটিতে পড়ায় এখানেও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেদের অবস্থান ও শক্তিমত্তার জানান দিতে প্রায়ই বিবাদে জড়াচ্ছেন।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন নেগাবান বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র ভোট নিয়ে ঝামেলা হবে না। ঝামেলা হতে পারে কাউন্সিলরদের মাঝে। এরা সবাই জয়ের জন্য মরিয়া উঠেছে।

সুশীল সমাজের আরেক প্রতিনিধি কাজী মিরাজ বলেন,ভোটের দিন মেয়র প্রার্থীদের মাঝে কোনো ঘটনা না ঘটলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে গণ্ডগোল হতে পারে। এখানে প্রত্যেক কাউন্সিলর প্রার্থী কমপক্ষে কোটি টাকা খরচ করছেন বিজয়ী হতে। অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীও ভোট চাইতে গিয়ে বলছেন আমার ভোটটা দিলেই হবে, মেয়র যাকে খুশি তাকে দেন। এরা আসলে দল নয়, নিজেদের ক্ষমতায় দেখতে চায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৮
এসএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।