নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) আয়োজিত এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে রোববার (২০ অক্টোবর) তিনি একথা বলেন।
মাহবুব তালুকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দুঃখজনক।
‘যে সব জনপ্রতিনিধি অবৈধ উপায়ে বা দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচনে জয়যুক্ত হন, তাদের নির্বাচনের কোনো বৈধতা থাকে না। জনগণের প্রতি অবৈধ জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন ওঠে না। এতে গণতন্ত্র সুসংহত ও যথাযথভাবে সংরক্ষিত হতে পারে না। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই জাতির অভীষ্ট লক্ষ্য। গণতন্ত্রবিহীন জাতি আত্মমর্যাদাহীন। আমরা বিশ্বসভায় মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় সমুন্নত রাখতে চাই। ’
তিনি বলেন, কোনো সুষ্ঠু-সুন্দর আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্তই হলো সুষ্ঠু, সত্য ও বিশ্বস্ত ভোটার তালিকা। সত্য ও বিশ্বস্ত শব্দ দু’টি এখানে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এর কারণ হচ্ছে একসময় ভোটার তালিকায় বিপুল সংখ্যক অস্তিত্বহীন বা দ্বৈত ভোটার চিহ্নিত হয়। বিভিন্ন জরিপ প্রতিবেদনে তার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। তৎকালীন ভোটার তালিকাটি ছিল অকার্যকর। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটে ছবিসহ নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়নে। ছবিসহ বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ তৈরি দেশের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখন পর্যন্ত সেই ডাটাবেজ ধরেই আমরা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করছি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, একথা অনস্বীকার্য যে, অস্তিত্বহীন বা ভুয়া ভোটার তালিকা নির্বাচনের জন্য গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সেই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ পেয়েছি। ভোটার তালিকা তৈরির সূচনা থেকে ভোটের ফল প্রকাশ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন না থাকলে সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এতে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য স্বাভাবিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না।
তিনি বলেন, এবারের ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম যুগোপযোগীকরণের পর সামনে একটি বড় চ্যালেজ্ঞ রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে ছলে, বলে বা কৌশলে ভোটার তালিকার অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার বিষয়ে যদি কোনো নির্বাচন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে মৃত ব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে সর্বদা সচেষ্ট থাকা দরকার। নবাগতদের ভোটার তালিকায় যুক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষ জনবল গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
আইনি দিক তুলে ধরে এই কমিশনার বলেন, ভোটার তালিকার বর্তমান ব্যবস্থায় তথ্যসংগ্রহ ও বায়োমেট্রিক গ্রহণ কার্যক্রম এবং ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ ও ভোটার তালিকা বিধিমালা ২০১২-এর অসঙ্গতি দূরীকরণ একসঙ্গে সম্পন্ন করার প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য নানাবিধ সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন অপরিহার্য। তাছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদের পদ্ধতি যুগোপযোগী করার জন্য বিদ্যমান ফরমগুলো সহজতর করা আবশ্যক।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমানের কর্মশালায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 'ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম যুগোপযোগীকরণ এবং ভোটার নিবন্ধন সংক্রান্ত ফরম পুনর্বিন্যাসকরণ শীর্ষক' কর্মশালাটি আয়োজন করে ইটিআই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৯
ইইউডি/এএ