ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

বাহার প্রশ্নে উল্টো সুর সিইসির

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২
বাহার প্রশ্নে উল্টো সুর সিইসির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল

ঢাকা: কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে বিধায় তাকে এলাকা ছাড়তে বলেছি—এমন বক্তব্য দেওয়ার নয়দিনের মাথায় এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল পুরো উল্টো কথা বললেন। তিনি বলেছেন, বাহাউদ্দিন সাহেব কোনো আইন ভঙ্গ করেননি, নিয়ম ভঙ্গ করেননি।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন পরবর্তী এক মতিবিনিময় সভায় সোমবার (২০ জুন) নির্বাচন ভবনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর অভিযোগ উঠলে তাকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তিনি এলাকা না ছেড়ে বরং কমিশন এখতিয়ার বহির্ভূত চিঠি দেওয়ার যুক্তি তুলে হাইকোর্টে রিট করেন। এই নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন।

বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘বাহাউদ্দিন সাহেব কোনো আইন ভঙ্গ করেননি, নিয়ম ভঙ্গ করেননি। অভিযোগ আসছিল, তিনি গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই তাকে অনুরোধ করেছি। অনুরোধ করলে তিনি রাখতেও পারেন, নাও রাখতে পারেন। বিনীতভাবে অনুরোধ আর নির্দেশ এক করে দেখার সুযোগ নেই। তবে তিনি চলে গেলো হয়তো ভালো হতো। ’

সিইসি আরও বলেন, ‘আমরা প্রায় শুনছি তাকে নির্বাচন কমিশন থেকে আদেশ করা হয়েছে এলাকা ত্যাগ করার। কিন্তু আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি নির্বাচন কমিশন থেকে কখনোই একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে এলাকা ত্যাগ করার আদেশ করা হয়নি। আমরা তাকে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখিনি। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন, তিনি কৌশলে অংশ নিয়েছেন। আমাদের একটা প্রত্যাশা ছিল, ওনাকে যদি রিকুয়েস্ট করি, তাহলে আর কথা উঠবে না। ’

হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী তিনি (বাহার) সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সংসদ সদস্য কেন, কোনো সাধারণ মানুষকেও তার এলাকা ত্যাগ করার আদেশ দিতে পারে না। আমরাও বাহাউদ্দিনকে এলাকা ত্যাগ করার কোনো আদেশ করিনি। তাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করেছিলাম, সেই চিঠি আছে। কিন্তু চারদিকে ছড়িয়ে গেলো আদেশ করার পরও তিনি প্রতিপালন করতে পারলেন না। এ কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। ’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, ‘একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী গিয়েছিলেন, তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ত্যাগ করাতে পেরেছিলাম। হয়তো তিনি পেরেছেন, সেটা ভিন্ন কথা। সেক্ষেত্রে সেই মন্ত্রী ছিলেন বহিরাগত। আর বাহাউদ্দিনের ওটা স্থায়ী ঠিকানা। একজন মানুষ তার বাড়িতে থাকতে পারবে না, তা তো নয়। আমরা একটু বিনীতভাবে অনুরোধ করেছিলাম, হয়তো তিনি ডিস্টার্ব করছেন বা কৌশলে প্রচারণা করছেন। সেজন্য তাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। আমরা আইন কানুন দেখে চিঠি দিয়েছিলাম। এজন্য ব্যক্তিকে তার এলাকা থেকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। ’

গত ১২ জুন সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে সংলাপ শেষ সিইসি বলেছিলেন, ‘আমাদের কিছু আইনগত দিক আছে। কিছু ক্ষমতা আংশিক, কিছু পরিপূর্ণ। কুমিল্লায় যা বলা হয়েছে—সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন না। সংসদ সদস্য এই আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন বলে প্রতীয়মান হয়েছে, আমরা এলাকা ছাড়তে বলেছি। তিনি এলাকা ছাড়েননি। তিনি মামলা করেছেন। ’

গত ৮ জুন ইসি সচিবালয় থেকে বাহারকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছিল—আগামী ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ বিধি অনুযায়ী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছিল, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে যে, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন। গত ০৭ জুন দৈনিক যুগান্তর এবং দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায় যে, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন অত্যন্ত সূক্ষ্ম কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহন করছেন, যা সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ বিধির লঙ্ঘন।

এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে তদন্ত করালে লিখিত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, যা মোটেই কাম্য নয়। এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর ২২ বিধিতে বলা হয়েছে—সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নির্বাচনী প্রচারণা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত বাধা-নিষেধ। - (১) সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তাঁর ভোটপ্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন।

নির্বাচন-পূর্ব সময়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনি কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারিযান বাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধাভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ব্যবহার করতে পারবেন না।

ইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, যেহেতু আপনি বিধি বহির্ভূতভাবে কৌশলে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করছেন তাই আপনাকে ২৫৪ কুমিল্লা-৬ নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।

গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হন।

আরও পড়ুন:
এমপি বাহাউদ্দিনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২২/আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।