কাহালু থেকে ফিরে: বগুড়ার কাহালু পৌরসভা নির্বাচেন জামায়াতের গ্যাঁড়াকলে আটকা পড়েছে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র ব্যানারে জামায়াতের পক্ষ থেকে মেয়র পদে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।
এদিকে জয়ের মালা গলায় তুলতে বিএনপির দলীয় প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দিনরাত মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। তার পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরাও একাট্টা হয়ে কাজ করছেন। তবে তার জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী। জামায়াতের প্রার্থী ভোটে তেমনটা সুবিধা করতে না পারলেও শেষমেষ ধানের শীষের পরাজয়ের কারণ হতে পারেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে।
আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফুরফুরে মেজাজে নির্বাচনী মাঠ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র। ব্যক্তি ইমেজেও তার কোনো ঘাটতি নেই। এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড করায় জনপ্রিয়তাও রয়েছে যথেষ্ট। দলীয় নেতাকর্মীরাও তাকে নির্বাচনী বৈতরণী পার করাতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে পুরুষের পাশাপাশি শত শত নারীকে দেখা গেছে। উভয় প্রার্থীর পথসভায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি থাকছে চোখে পড়ার মতো। নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান দিতেও দেখা যায় তাদের।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বর্তমান মেয়র হেলাল উদ্দিন কবিরাজ। বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান ধানের শীষ প্রতীক ও স্বতন্ত্র ব্যানারে জামায়াতের জহুরুল ইসলাম বাদশা নারকেল গাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গেলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কবিরাজ বাংলানিউজকে জানান, গত মেয়াদে এ পৌরসভায় প্রায় ২৫ কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি। রাস্তা-ঘাট, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ, কালভার্ট, বিদ্যুতের সাধ্যানুসারে উন্নতি করেছেন। এখন তার লক্ষ্য, কাহালুকে মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলা।
তার দাবি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষিত মহলসহ এলাকার সব শ্রেণী-পেশার মানুষ তার সঙ্গে রয়েছেন। এরপর আরো উন্নয়ন করতে হবে। এলাকার লোকজন আরো উন্নয়ন চান। তার দল ক্ষমতায় রয়েছে। তাই তাকে দিয়েই এলাকার উন্নয়ন সম্ভব বলে পৌরবাসী মনে করেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলীয় নেতাকর্মীদের তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। পোস্টার ছিড়ে ফেলছেন। তাকেসহ তার কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করছেন।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হেলাল উদ্দিন কবিরাজ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী নাঈম নামের এক ছেলেকে পুড়িয়ে মেরেছেন। এর আগে তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ নেওয়া হয়। এসব কারণে মানুষ তাকে ভোট দেবেন না বুঝেই তিনি আবোল-তাবোল বলাবলি করছেন।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগের কেন, কোনো সাধারণ মানুষও বাধা দেননি, দেবেনও না। অতএব তাকে বা তার কোনো কর্মীদের হুমকি-ধামকি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
‘এটা তাদের দলের নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যের প্রতিফলন মাত্র। কারণ, নির্বাচনে জিতলে বিএনপির নেতা-নেত্রীরা বলে থাকেন, এ সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। আর হারলে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তাই বিএনপির প্রার্থীর মুখেই এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ মানায়’ – এমন মন্তব্যও করেন হেলাল উদ্দিন কবিরাজ।
বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান তার বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, এসব পুরো মিথ্যা কথা। এটা তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। এসব কথা বলে ধানের শীষের পরাজয় ঘটানো যাবে না।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিজের পরাজয় জেনে নানা ফন্দি-ফিঁকির আটছেন বলেও মন্তব্য করেন মান্নান।
তার দাবি, এখানে কোনোভাবে ধানের শীষের পরাজয় ঘটানো সম্ভব নয়। তাই জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারলে এ পৌরসভায় যে উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করবেন। রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎসহ কোনো কিছুই উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বাদ যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তবে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আসলাম হোসেন, রাকিবুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীনসহ একাধিক ভোটার বাংলানিউজকে জানান, কাহালু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াতের। এ পৌরসভায় জামায়াতের একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। জামায়াত মেয়র পদে প্রার্থী দেওয়ায় এ ভোট তাদের প্রার্থীর পক্ষে যাবে। যা বিএনপির প্রার্থীর জন্য পরাজয়ের কারণ হতে পারে।
অন্যদিকে জনপ্রিয়তা থাকায় আওয়ামী লীগের ভোটসহ সাধারণ ভোটারদের সিংহভাগ ভোট হেলাল উদ্দিন কবিরাজের পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এসব কারণে এ পৌরসভায় ধানের শীষের চেয়ে নৌকার জয় অনেকটা সহজ।
তাই মান্নান-বাদশার দ্বন্দ্বে কবিরাজ আনন্দে রয়েছেন বলেমনে করেন এখানকার ভোটাররা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
এমবিএইচ/এএসআর