দুই বাংলার দর্শক নন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে।
বাংলানিউজ: ‘মনপুরা’র সোনাই চরিত্রের পর আয়না, মিসির আলী, চান মাঝি রূপে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। এবার অভিনয় করছেন মৃণাল সেন চরিত্রে, এই সম্পর্কে জানতে চাই?
চঞ্চল চৌধুরী:যখন যেই চরিত্রে অভিনয় করি সেই চরিত্রের সঙ্গে ব্যাপারটা এরকম না যে শুধুমাত্র ক্যামেরা রোল দিল, অ্যাকশন বললো আর সঙ্গে সঙ্গে অভিনয় শুরু হয়ে গেল। সেভাবে আসলে চরিত্র হয়ে ওঠা যায় না। চরিত্রটাকে নিয়ে জীবন-যাপন করতে হয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েই মৃণাল সেন হয়ে যেতে পারবো না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। শুধু মৃণাল সেন নয়, এর আগেও আমি যে চরিত্রগুলো করেছি সেই চরিত্রগুলো হয়ে ওঠার জন্য একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। রিহার্সেল করতে হয়, চরিত্রগুলোকে প্রথমে নিজে বিশ্বাস করা তারপর বিশ্বাসের জায়গা থেকে নিজেকে ভুলে ঐ চরিত্র হয়ে উঠা।
বাংলানিউজ: সেই প্রক্রিয়া কি এখনও চলমান?
চঞ্চল চৌধুরী: মৃণাল সেনের ক্ষেত্রে যদি বলি এখনও শেষ হয় নাই। মৃণাল সেনে চরিত্রে যখন অভিনয় করবো মনে করলাম তখন থেকে নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। এখনও কাজটা চলছে, শেষ হয়নি। এটা শেষ হওয়ার পরও সেই ঘোরটা, আবেশটা ভেতরে থেকেই যাবে।
বাংলানিউজ: লুক প্রকাশের পর থেকে দুই বাংলার সবাই চঞ্চলকে ইদানিং মৃণাল সেনই ভাবছেন, কেমন লাগছে?
চঞ্চল চৌধুরী: এখনও আমি যেভাবে বসি বা কথাবার্তা বলি বা কোথাও বসতে গেলে ঐ চরিত্রের জন্য আমি যে যে প্রিপারেশনগুলো নিচ্ছি, সেরকম ভঙ্গিটা অটোম্যাটিক্যালি চলে আসে ভেতরে। তার মানে শুধুমাত্র এমন না যে যেদিন শুটিং আছে সেদিন ক্যামেরার সামনে গিয়ে ঐ চরিত্রটি হওয়ার চেষ্টা করছি। আমাকে ঐ ঘোরের মধ্যেই থাকতে হচ্ছে। এ কারণেই দেখে অনেকে ভাবছেন চুল বড়, মৃণাল সেনের মতোই তো লাগছে! আসলে যতোদিন পর্যন্ত কাজটা শেষ না হচ্ছে কিংবা নতুন কোন চরিত্রে না প্রবেশ করছি ততোদিন পর্যন্ত এর কিছুটা বিষয় থাকবেই।
বাংলানিউজ: আপনার নিজের কি মনে হচ্ছে মৃণাল সেন হয়ে উঠতে পারছেন?
চঞ্চল চৌধুরী: না, আমি মৃণাল সেন হয়ে উঠেছি সেটা কখনোই বলতে চাই না। এটা আসলে দর্শক দেখার পরে বলতে পারেন যে কতটুকু হয়েছে বা কতটুকু করতে পেরেছি আর কতটুক হয়নি। আমার জায়গা থেকে আমি চেষ্টা করছি। কারণ একজন শিল্পী বা অভিনেতার দায়িত্বই হচ্ছে সেই চরিত্রটি হয়ে ওঠা। সেটা জন্য সে সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে থাকে। কখনো হয় বা কিছুটা হয় বা কখনো কিছুই হয়না। অথবা অনেক সময় অনেকটা হয়। এটা দর্শক বিচার করবে। এটা নিয়ে আমার বলার কিছু নাই।
বাংলানিউজ: সর্বখানেই এখন চঞ্চল বন্দনা। এটাকে কতখানি উপভোগ করেন?
চঞ্চল চৌধুরী: অনেক সময় বিব্রতও হই। কেউ কেউ অবশ্য আনন্দিতও হন। আমি বিব্রত হই এই কারণে যে, এতে প্রত্যাশার চাপ বেড়ে যায়। আমাকে নিয়ে মানুষ যতো বেশি আগ্রহ প্রকাশ করবে আমার চাপটা ততো বাড়বে। কারণ আমাকে তাদের চাওয়াটাকে পূরণ করতে হবে। সেই প্রত্যাশাকে পূরণ করতে আমাকে আরো বেশি কাজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে, দায়িত্বশীল হতে হবে। তবে সেটা অনেক সময় হয় না। হয় না আমাদের পারিপাশ্বিক অবস্থার কারণে। প্রত্যেকটা কাজের ধরণ তো একরকম থাকে না। সবসময়ই শতভাগ একটি কাজকে দর্শকের সামনে পৌঁছানো যায় না।
বাংলানিউজ: ওটিটিতে ‘তাকদীর’, ‘কারাগার’ ও এর সিক্যুয়ালের পর ‘ওভারট্রাম্প’-এ বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ওটিটির যাত্রাটা কেমন ছিল?
চঞ্চল চৌধুরী: ধরতে গেলে আমাদের হইচই দিয়েই ওটিটিতে যাত্রা শুরু। তারপর তো দেশীয় কিছু প্লাটফর্ম এলো মার্কেটে। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই না, ওপারে (পশ্চিমবঙ্গে) গিয়ে অনেকের মুখ থেকেও শুনেছি আমাদের দেশীয় প্লাটফর্মের কাজগুলো ভালো হচ্ছে। নতুন নতুন ভেরিয়েশনে তাদের আগ্রহ রয়েছে। একটা কাজ গেলেই তারা দেখতে চান। আমরাও কাজ করছি। সেই ধারাবাহিকতায় বাশার জর্জিসের ‘ওভারট্রাম্প’ করেছি। কয়েকমাস আগেই আমরা শুটিং শেষ করেছি। সামনে দেখা যাবে এটি। গল্পটা একটু ডার্ক কমেডি।
বাংলানিউজ: সামনে নতুন কাজের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই?
চঞ্চল চৌধুরী: আমি এখন যে কাজটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি সেটি ‘পদাতিক’। এই প্রজেক্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি নতুন কোন প্রজেক্ট নিয়েই কথাবার্তা বলছি না। পরে কি কাজ করবো আমি এখন পর্যন্ত ফাইনাল করিনি।
বাংলানিউজ: নতুন সিনেমা বা কাজ মুক্তি পেলে এদেশের ইন্ডাষ্ট্রি ও শিল্পীদের এপ্রিসিয়েশন খুবই নগণ্য। এটাকে কিভাবে দেখেন?
চঞ্চল চৌধুরী: আমরা যারা শিল্পী বা কলাকুশলীরা ইন্ডাষ্ট্রিতে কাজ করি তারা সবাই কিন্তু সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করি। যখন একটি ভালো কাজ হয়, কাজটি সবাই যদি দেখার আহবান জানায় সোস্যাল মিডিয়ায় সেটা ভালো প্রচার হবে। কিন্তু সেই কাজটি অনেক সময় করেন না। সেটা নানান কারণে করেন না। এক হতে পারে ঈর্ষার মানসিকতা থেকে। আমার কাজগুলোর ক্ষেত্রেও আমি দেখেছি, ইন্ডাষ্ট্রির মানুষ তেমন করে সেগুলো প্রচার করেননি। করে কখন? যখন দেখে এই কাজটি কোনভাবেই আর ঠেকানো গেল না, তখন। তখন মুখ খোলেন বা প্রশংসা করেন। আমি মনে করি, এই ইন্ডাষ্ট্রির যেই ভালো কাজ করুক ইন্ডাষ্ট্রির দায়িত্ব তাকে প্রমোট করা।
বাংলানিউজ: আপনাকে গান গাইতেও দেখা যায়, নতুন কোন গান আসছে?
চঞ্চল চৌধুরী: গান নিয়ে আমার প্লান নেই। কারণ আমি তো সিঙ্গার না। যে গানগুলো করেছিলাম সেগুলো কিন্তু শিল্পী হিসেবে আমি করিনি। আমি অভিনেতা হিসেবে মানুষের কাছে একটি পরিচিত মুখ। সেক্ষেত্রে ফোকগানগুলোকে প্রমোট করতে আইপিডিসি যে উদ্যোগগুলো নিয়েছিল আমি শুধু তার সঙ্গে থেকেছিলাম। এই কারণে গাওয়া। আমি যখন গান করি সেটা আমার অভিনয়ের জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করি। তবে হ্যাঁ আইপিডিসির সঙ্গে আমি দুই সিজনে কাজ করেছি। নতুন যে সিজনটা আসছে সেখানেও কিছু গান করেছি। যেমন এই সিনেমা অঙ্গণের অত্যন্ত গুণী মানুষ গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে ট্রিবিউট করে সিজনটা হচ্ছে সেখানে শাওনের সঙ্গে ডুয়েট একটা গান করেছি। তারপর আরো একজন শিল্পীর সঙ্গে ডুয়েট আরেকটা করেছি। এগুলো শ্রদ্ধেয় গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গান।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২৩
এনএটি