ভারত থেকে আসা জনপ্রিয় গায়িকা শ্রেয়া ঘোষালের আসার খবর জানার পর তার ভক্তদের ঘরে বসে থাকার আর কোনো অবকাশ নেই। তাই ৫ জুন সন্ধ্যা হতেই সবাই ছুটতে থাকে বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটির (নবরাত্রি) হলে।
লাইনের পর লাইন শ্রোতারা ভীড় করে শ্রেয়ার গান শুনতে। লম্বা লাইন ও গাড়ির বহর দেখে যে কেউ জানতে চাইবে, কি হচ্ছে এখানে আজ। শ্রেয়া ভক্তদের উপস্থিতিই বলে দেয় বঙ্গদেশে কতটা জনপ্রিয় তিনি। দর্শকমুখরিত নবরাত্রী হল যেন ভরে হয়ে উঠে উৎসবে। হলের চারপাশ লাইট, নিরাপত্তা প্রহরী দেখে যে কেউ মনে করবে এটা সত্যিই একটি আন্তর্জাতিক মানের হল।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক ৭টা ৩০ মিনিট। স্টেজে এসে শ্রেয়া বাংলায় বললেন, ‘কেমন আছেন সবাই। আজ অনেকগুলো প্রিয় গান করার ইচ্ছে আছে। কোনটা ছেড়ে কোনটা করবো। যাই হোক শুরু করি। ’
শুরু করলেন তার কন্ঠের সব হিট গান। ‘যাদু হে নেশা হে’, ‘তুহি তো মেরি দোস্ত হে’, ‘ক্যাইসে মে তু মিল গায়ে’, ‘সাসো মে’, ‘মারওয়া লাগা’, ‘মে তেনু’। এরপর থামলেন এবং শুরু করলেন ‘পিকু‘ ছবির ‘ধীরে চলনা’ শিরোনামের গানটি। গানটি করার সময় অনুপমের কথাও বলেন। তারই মিউজিকে গানটিতে কন্ঠ দেন তিনি। এরপর ‘অটোগ্রাফ’ ছবির ‘চলো রাস্তা’ শিরোনামের গানে কন্ঠ দেন।
এরপর একটা বিরতি নেন। মঞ্চে উপস্থাপনায় আসেন মুনমুন। এরপর শ্রেয়ার সঙ্গে আসা ভারতীয় সংগীতশিল্পী রিকেশ। কিন্তু শ্রোতারা যেন শ্রেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। তাই আবারো শ্রেয়া শ্রেয়া বলতেই স্টেজে হাজির হলেন হাসৌজ্জল মুখের এই তারকাশিল্পী। আবারো শুরু করলেন গান।
টানা রাত ১০ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ‘ইতনে সে হাসি’, ‘ওরে জিয়া’, ‘তেরে লিয়ে’, ‘রাতভর’, ‘এ ইশক হে’, ‘ঢোল বাজে’, ‘জু্বি জুবি’, ‘বালমা’, ‘উলালা’, ‘চিকনি চামেলি’সহ রুনা লায়লার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ‘সাগর কুলের নাইয়া’ ও ‘সাধের লাউ’ শিরোনামের দুটি গান করেন।
এরপর তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলেন, ‘আমার আজকের অবস্থান আমার বাবা-মা, বড় ভাই, সারেগামা ও ভক্তদের জন্য। ’
মাঝে মাঝে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে দর্শকদের সঙ্গে কথা, নাচও করেন এই গায়িকা। সঙ্গে ছিল ভারত থেকে আসা ছয়জনের টিম। সবশেষে ‘তুজসে রব দেখতা হে’, ‘তেরিও’ ও লতাজির উদ্দেশ্যে ‘আমি যে তোমার’ ও ‘হামকো মিলিহে’ গানগুলো করে স্টেজ থেকে বিদায় নেন এই শিল্পী।
দর্শকদের সারিতে বাংলাদেশের গায়িকা শাকিলা জাফর, ডা, নাশিদ কামাল, কনা, কোনালসহ অনেক রাজনীতিবিদ, প্রশাসনসহ বিভিন্ন মাধ্যমের মানুষকে দেখা যায়।
‘শ্রেয়া ঘোষাল নাইট’ কনসার্টে অংশ নিতে ৫ জুন দুপুর সাড়ে ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন তিনি। এর আয়োজক ‘বে এন্টারটেইনমেন্ট’।
তবে আয়োজক কমিটির কিছু অব্যবস্থপনাও চোখে পড়ে এই জমকালো আয়োজনে। যেমন, সংবাদ সন্মেলন না করে মিডিয়াকর্মীদের যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে রাখা ও প্রবেশের অনুমতিপত্র না পাওয়ায় অনেকে হলত্যাগ করতেও বাধ্য হয়।
টিকেটের মূল্য যথাক্রমে ১০ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার, ৫ হাজার ও সাড়ে ৩ হাজার টাকা রাখা হলেও আসন নিয়ে দর্শকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে অনেকে প্রতারণার অভিযোগও তুলেছেন বে এন্টারটেইনমেন্টের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সন্ধ্যা অবধি আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘শ্রেয়া ঘোষাল লাইভ ইন ঢাকা’ শিরোনামের কনসার্টে আলোকচিত্রীদের কারও ঢোকার অনুমতি নেই। অনুষ্ঠান শুরুর আগে শ্রেয়াকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করেননি আয়োজকরা। এ ক্ষেত্রে ৩১ বছর বয়সী এই গায়িকা অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা।
অনুষ্ঠান শুরুর শেষ মুহুর্তে হঠাৎ জানানো হয় সব সংবাদমাধ্যমের আলোকচিত্রী ঢুকতে পারবেন। এতেই স্পষ্ট হয়েছে আয়োজকদের উদাসীনতা। শ্রেয়া যে আলোকচিত্রী ও টিভি ক্যামেরা ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেননি, এটাই প্রমাণ হলো অবশেষে।
এসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলার জন্য বে এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোনালিসা খান হাসানকে মুঠোফোনে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। আয়োজকদের এসব অসংগতি ছাড়া গানে সুরে বেশ ভালোই স্টেজ মাতিয়েছেন শ্রেয়া।
** শ্রেয়ার কনসার্ট নিয়ে আয়োজকদের প্রতারণা!
বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৫
এমকে