ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

ঈদের ছবির প্রতিবেদন-১

‘সম্রাট তো ফাটিয়ে দিলো!’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
‘সম্রাট তো ফাটিয়ে দিলো!’ ‘সম্রাট’ ছবিতে শাকিব খান

রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছে চারটি ছবি। এগুলো হলো ‘শিকারী’, ‘সম্রাট’, ‘রানা পাগলা-দি মেন্টাল’ ও ‘বাদশা-দ্য ডন’।

এগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া আর প্রেক্ষাগৃহগুলোর চিত্র জানানো হবে ধারাবাহিকভাবে। শুরুতে রইলো ‘সম্রাট’ ছবির হালচাল।  

ফেসবুকে অসংখ্য দর্শক প্রোফাইল পিকচারে ‘সম্রাট’ ছবির লোগো ব্যবহার করেছেন। ‘সম্রাটকে শেষ করার কথা শুধু কল্পনাই করা যায়, কিন্তু যায় না’- শাকিব খানের আওড়ানো সংলাপটি এখন ভক্তদের মুখে মুখে।  

বায়েজিদ হোসেন নামের এক দর্শক ৮ জুলাই জানান, প্রথম দিনই বাম্পার রেসপন্স ছিলো। দ্বিতীয় দিনও সফলতার সঙ্গে চলেছে। এদিন হাসান চৌধুরী নামের এক দর্শক রসিকতার সুরে বলেন, ‘ছবি দেখতে আসছে নাকি বিনা দাওয়াতে খেতে আসছে বুঝছি না! সুপারহিট। ’ শাওনের কাছে ঈদের সেরা ছবি ‘সম্রাট’। আবু সায়েদ তুহিন সোমবার (১১ জুলাই) লিখেছেন, “এবারের ঈদের ছবির মধ্যে দেশের প্রেক্ষাপট চিন্তা করলে ‘সম্রাট’ই সেরা। ” 

মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত ‘সম্রাট’ দেশের ৭৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। এর গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি নিজেই। টাইগার মিডিয়া প্রযোজিত ছবিটির ট্যাগলাইন ‘দ্য কিং ইজ হিয়ার’। এশিয়ান টিভির ‘মুভি বাজার’-এর দর্শক জরিপে ঈদের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত ছবি ছিলো এটাই। এর টিজার, ট্রেলার ও গান আলোচিত হয়েছে মুক্তির আগেই। এটি সহ-প্রযোজনা করেছে সিনেমাওয়ালা ও অর্কি প্রোডাকশন্স।

এ ছবিতে সম্রাট চরিত্রে শাকিব, রুহির ভূমিকায় অপু বিশ্বাস আর রাজা চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের হিন্দি ও বাংলা ছবির অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। মুসার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে মিশা সওদাগরকে। প্রতি ঈদেই শাকিব-অপু জুটিকে নিয়ে দর্শকদের আলাদা আগ্রহ থাকে। এই ছবির মাধ্যমে তাদেরকে একফ্রেমে পাওয়া গেছে। দু’জনকেই নতুন লুকে উপস্থাপন করা হয়েছে এতে। ফেসবুকে ভক্তদের মন্তব্য অনুযায়ী, দু’জনকেই লেগেছে টগবগে।  

সবশ্রেণীর দর্শক ছবিটি উপভোগ করছেন বলে জানা গেছে। কবির হোসেন সাদ্দাম নামের এক দর্শক জানিয়েছেন, ঢাকার পান্থপথে বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ‘সম্রাট’ দেখতে অভিজাত শ্রেণীর লোকজনকে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এখানেই ৯ জুলাই ছবিটি দেখে রাসেল আহমেদ রাজ বলেন, ‘অনেকদিন পর ভালো একটি বাংলা ছবি দেখলাম। শাকিব খান অসাধারণ অভিনয় করেছেন। পরিচালককে ধন্যবাদ এতো ভালো ছবি উপহার দেওয়ার জন্য। ’ 

শাকিব খানের অন্য সব ছবির চেয়ে এটি ব্যতিক্রম উল্লেখ করে ইসমাইল হোসেন রোববার (১০ জুলাই) ফেসবুকে মন্তব্য করেন, অনেক মানসম্পন্ন একটি ছবি উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন পরিচালক। সুমন হোসেন মুন্নার মতে, দুই কোটি টাকায় চার কোটি টাকার ছবি উপহার দিয়েছেন পরিচালক। শাহরিয়ার নাঈম নামের এক দর্শকের দাবি, সবার মুখে একটাই কথা- সম্রাট, সম্রাট আর সম্রাট! নাহিয়ান সালেহিন ৮ জুলাই লিখেছেন, ‘সম্রাট তো ফাটিয়ে দিলো!’

শাকিবের ভক্ত শিফানের মন্তব্য, ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে ‘সম্রাট’ সবচেয়ে স্মার্ট ছবি। ক্ষ্যাত টাইপের মানুষের কাছে এই ছবি ভালো লাগবে না! জাকির হোসেনেরও মন্তব্য- ‘সম্রাট’ বাংলাদেশের গতানুগতিক ছবিগুলোর চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। মালিক বাহাদুর অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়েছে, ‘সম্রাট’ শাকিবের স্টাইলিশ ছবি। ’ সেনা অডিটোরিয়ামে ছবিটি দেখে আহমাদ সাজিদ লিখেছেন, ‘আজ পর্যন্ত শাকিবকে এতো স্মার্ট লুকে আর কোনো ফিল্মে দেখা গেছে কি-না জানি না। ’ আমান আহমেদেরও দাবি, “সম্রাট স্মার্ট সিনেমা। রুচিশীল দর্শকদের সিনেমা। সচরাচর বাংলা সিনেমা যেমন হয় ‘সম্রাট’ একেবারে আলাদা। ”

দর্শকদের মন্তব্য, এ ছবির মাধ্যমে নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন শাকিব। তার অভিব্যক্তিগুলোর প্রশংসা হচ্ছে। পুলিশের আইজির মেয়ে রুহির চরিত্রে অপুকে ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ (২০১০) ছবির পর আবার ভালো লাগলো দর্শকের। পোশাক, সাজগোজ, লুক- সব মিলিয়ে অপুকে অসাধারণ লেগেছে তাদের। একেবারে নতুন এক অপুকে পাওয়া গেছে বলে মন্তব্য সবার। এর অন্যতম কৃতিত্ব ডিজাইনার রামীম রাজের।  

সম্রাটের প্রতিদ্বন্দ্বী মুসা চরিত্রে মিশা সওদাগর, সন্ত্রাসীর ছদ্মবেশে রাজার ভূমিকায় ইন্দ্রনীল, দুর্নীতিবাজ পুলিশের চরিত্রে ইমন আর শিমুল খানেরও প্রশংসা করেছেন দর্শকরা। অনেকের মতে, শাকিব ও মিশা পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। ভক্তদের দাবি, মিশার এই ছবি দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া উচিত।  

আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের জীবনচক্র, তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম, অপরাধ জগতে তাদের আধিপত্য ও তাদের ধরতে পুলিশের নানা পরিকল্পনা, ছক, কৌশল- এসব নিয়েই ‘সম্রাট’। ছবিটির গল্প চমৎকার বলে প্রশংসা করেছেন জান্নাতিন নাঈম। আহাদ রাজিবের মতে, অনেক মজবুত গল্পের ছবি ‘সম্রাট’। শিল্প নির্দেশক সামুরাই মারুফের কাজের প্রশংসাও হচ্ছে। এ ছাড়া ইমরানের কণ্ঠে ‘রাতভর’, আরফিন রুমির সুরে ‘নিঃশ্বাস’, ডাব্বুর সুরে শত্রুজিতের গাওয়া টাইটেল সং আর স্যাভির সুরে শাদাব হাশমির কণ্ঠে ‘দুজনে’ গানগুলো শ্রুতিমধুর বলে প্রশংসিত হচ্ছে। টেকনিশিয়ানদের দারুণ কাজের জন্য গানগুলো দেখে চোখের আরাম হয়েছে বলে মন্তব্য সবার। এ ক্ষেত্রে চিত্রগ্রাহক চন্দন রয় চৌধুরীর প্রশংসিত কাজ করেছেন।  

এ ছবিকেই পরিচালক রাজের সেরা কাজ মনে করছেন ভক্তরা। পুরো ছবিতে তিনি স্মার্টনেস ধরে রাখতে পেরেছেন বলে মন্তব্য তাদের। নিঃসন্দেহে তিনি স্টাইলিশ পরিচালক। অযথা কমেডি আর আলগা সুড়সুড়ি দেননি। ছবিটির গল্পে আগাগোড়া মোচড় রেখে দর্শককে চমকে দিয়েছেন তিনি। তিনি ধীরে ধীরে অভিজ্ঞ হয়ে উঠছেন। তার অভিজ্ঞতার ভান্ডার আরও বড় হয়েছে। সেই ছাপ এ ছবিতে স্পষ্ট। তাই ‘সম্রাট’কে দর্শকরা মানসম্মত ছবি বলছেন।  

অবশ্য ছবিটি অনেক ভালো লাগলেও বায়েজিদ সরকার ৮ জুলাই মন্তব্য করেন, মারধরের দৃশ্যগুলো আরও ভালো হলে ‘সম্রাট’ রেকর্ড গড়তো। আরেকজন ছবিটির ছোটখাটো ভুল ধরেছেন। যেমন মিনিট খানেক শাকিবের ঠোঁটে সাজু খাদেমের কণ্ঠ। কারও মতে, প্রথম অংশ একটু ধীরগতির। কেউ বলেছেন, এ ধরনের ছবি দেখে এখানকার দর্শক অভ্যস্ত নন। তাই ধৈর্য ধরে ছবিটি দেখলে ভালো লাগবে বলে মন্তব্য তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।