শাস্ত্রীয়সংগীতে প্রিয়াঙ্কা গোপ পরিচিত মুখ। নিজের চতুর্থ একক অ্যালবাম ‘ঠুমরি-ভলিউম ১’ তিনি সাজিয়েছেন শাস্ত্রীয় ধারার গান ঠুমরি নিয়ে।
বাংলানিউজ: ঠুমরি নিয়ে আমাদের এখানে তেমন একটা কাজ হয় না। এই বাস্তবতায় ঠুমরির অ্যালবাম বের করার উৎসাহ পেলেন কীভাবে?
প্রিয়াঙ্কা গোপ: ঠিক বলেছেন। আমাদের দেশে তো ঠুমরির সিডিই পাওয়া যায় না। ধরতে গেলে আমিই প্রথম এ ঘরানার গানের অ্যালবাম করলাম। আমার স্বপ্ন ছিলো একদিন ঠুমরি গানের অ্যালবাম বের করবো। ভক্তদের কাছ থেকে অনুরোধ পেয়েছি বলেই কাজটি করার সাহস পেয়েছি। অনেক রেওয়াজ করে নিজেকে প্রস্তুত করেছি দীর্ঘ সময় নিয়ে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ঠুমরির একটি নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করা ততো সহজ কাজ নয়। আমার এই অ্যালবামের ব্যাপারে ওস্তাদ সাবিল হোসেন খান ও রওশন আলী খুবই সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া আমার স্বামীও সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন।
বাংলানিউজ: এ অ্যালবামে কী কী থাকছে?
প্রিয়াঙ্কা: শাস্ত্রীয়সংগীতের লঘু শাস্ত্রীয়সংগীত হলো ঠুমরি। কৃষ্ণের প্রতি রাধার বিরহ বোঝানোর জন্যই ঠুমরি গানের প্রচলন হয়। ঠুমরি মূলত মেয়েরাই বেশি গেয়ে থাকে। এ ঘরানার গানগুলোর মাধ্যমে প্রেমিকার বিরহের ভাব প্রকাশিত হয়। ‘ঠুমরি-ভলিউম ১’ অ্যালবামে ছয়টি ঠুমরি গান রয়েছে। ভিন্ন রাগের এই গানগুলোর মধ্যে দাদরা, হরি, গীতসহ মোট ছয়টি আলাদা সুরের গান রয়েছে। এগুলো হলো- ‘রাস কে ভরে তোরে ন্যায়না’, ‘পাহাড়িয়াতে নিকলে’, ‘মোহে মাত মারো শ্যাম’, ‘যেইয়ো তো যেইয়ো’, ‘লাগেরি বান লাগেরি’। আরেকটার কথা মনে পড়ছে না। একই দিনে ছয়টি গানেরই রেকর্ডিং করেছি।
বাংলানিউজ: যেহেতু ঠুমরির তেমন প্রসার নেই, সেক্ষেত্রে অ্যালবামটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
প্রিয়াঙ্কা: আমাদের দেশে অনেকেই ঠুমরি গান করেন। তবে চোখে পড়ার মতো কাজ হয় না। বলতে গেলে এ অ্যালবামই প্রথম। আমরা এখন খুঁজলেও ঠুমরি গানের একটি সিডি পাবো না। এটা খুব দুঃখজনক। এ বাস্তবতায় আমার অ্যালবামটির মাধ্যমে অন্তত বলতে পারছি ভালো কিছুর জন্য চেষ্টা করি। তাছাড়া এ ধরনের গানের শ্রোতা এখনও আমাদের দেশে আছে। আশা করছি, প্রত্যাশা অনেকটাই পূর্ণ হবে।
বাংলানিউজ: আপনারা যে ধরনের সংগীতচর্চা করেন, তা নিয়ে আধুনিক বা ব্যান্ডসংগীতের মতো তেমন উন্মাদনা থাকে না। এ নিয়ে কি আক্ষেপ আছে?
প্রিয়াঙ্কা: না, আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমি শাস্ত্রীয়সংগীতে এতোই ডুবে আছি যে অন্য কোনো সংগীতের উন্মাদনা আমাকে আকৃষ্ট করে না। আসলে যদি একবার শাস্ত্রীয়সংগীতকে নিজের মধ্যে ধারণ করা যায় তাহলে এর মধ্য থেকে বের হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। সংগীতের শেকড়ই হলো শাস্ত্রীয়সংগীত। অনেকেই শাস্ত্রীয় থেকে আধুনিক গানে চলে যান। কিন্তু এটা শেকড় না ধরে রেখে লতাপাতায় ঘুরে বেড়ানো বলে আমি মনে করি।
বাংলানিউজ : আপনি গজল আঙ্গিক, শাস্ত্রীয় ও আধুনিক গান নিয়ে আগের তিনটি একক অ্যালবাম করেছেন। আগামীতে কোন ইচ্ছা আছে?
প্রিয়াঙ্কা: আমার প্রথম অ্যালবাম ‘সুরে সুরে দেখা’ সাজানো হয় গজল আঙ্গিকের গান নিয়ে। এরপর শাস্ত্রীয়সংগীত নিয়ে সাজিয়েছি ‘রাগা ডিলাইটস’। এরপর আধুনিক গান দিয়ে ‘চাঁদ জানালা’ ও সবশেষ ঠুমরি গান ঠুমরি-ভলিউম ১’ সাজানো হয়েছে। আমার চারটি অ্যালবাম চার ঘরানার কিন্তু সবটাতেই শাস্ত্রীয়সংগীতের মেলবন্ধন রয়েছে। এবার হয়তো নজরুলসংগীতের অ্যালবাম প্রকাশের চেষ্টা করবো। ভক্তদের অনুরোধ আমি যেন একটি নজরুলসংগীতের অ্যালবাম করি।
বাংলানিউজ: চলচ্চিত্রের গানের কথা বলুন।
প্রিয়াঙ্কা: ইতিমধ্যে তিনটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছি। এর মধ্যে আকরাম খানের ‘ঘাসফুল’, মাসুদ পথিকের ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ও মোরশেদুল ইসলামের ‘অনিল বাগচীর একদিন’-এ পুরোপুরি শাস্ত্রীয় না হলেও এর কাছাকাছি ছিলো বলে গেয়েছি। আমি যে ঘরানার গান গেয়ে থাকি, মনের মতো তেমন গান পেলে অবশ্যই চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দেবো।
বাংলানিউজ: গান ছাড়া আর কী করেন?
প্রিয়াঙ্কা: গানের পাশাপাশি শিক্ষকতা নিয়েই আমার মূল ব্যস্ততা। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগ ও ছায়ানটের উচ্চাঙ্গসংগীত বিভাগে শিক্ষকতা করছি। শিক্ষকতার মাঝে একরকম আনন্দ কাজ করে। ছাত্রছাত্রীদেরকে কিছু শিখিয়ে তাদেরকে গানে প্রস্তুত করতে পারছি, এই বিষয়টি ভাবলে আপনাআপনি দায়িত্ববোধ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬
জেএমএস/জেএইচ