মঞ্চনাটক ও ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর চলচ্চিত্র ভাগ্য নাকি ভালো! বিনোদন অঙ্গনে এটা প্রচলিত বলা চলে। ‘মনপুরা’ই এর সবচেয়ে জ্বলজ্বলে উদাহরণ।
মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন কেড়েছেন চঞ্চল। নানান রকম চরিত্রে তার অভিনয়ের মুন্সিয়ানা এবার দেখা যাবে ‘আয়নাবাজি’ ছবিতে। এতে ছয়টি ভিন্ন রূপে পর্দায় হাজির হবেন তিনি। তার মূল চরিত্রের নাম আয়না।
আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাচ্ছে চঞ্চলের নতুন চলচ্চিত্র ‘আয়নাবাজি’। অমিতাভ রেজা পরিচালিত এ ছবির গল্প আয়না চরিত্রকে কেন্দ্র করে। নতুন ছবি প্রসঙ্গে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
বাংলানিউজ: ‘আয়নাবাজি’র প্রচারণায় কেমন ছোটাছুটি করতে হচ্ছে?
চঞ্চল চৌধুরী: খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে ছবিটির প্রচারণার কাজ। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গিয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছি। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে প্রচারণা চালিয়েছি। বুধবার মিরপুর স্টেডিয়ামে গিয়ে দর্শকদের সঙ্গে বসে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ক্রিকেট খেলা উপভোগ করেছি। এ সময় ছদ্মবেশে ছিলাম। ছবিটি মুক্তি পেতে আর মাত্র একদিন বাকি। শেষ দিনের প্রচারণার কার্যক্রম হিসেবে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাব।
বাংলানিউজ: ছবিটির নাম ‘আয়নাবাজি’ কেনো?
চঞ্চল: গল্পটা মূলত আয়না নামের অভিনয় পাগল মানুষকে ঘিরে। সে বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসে। আয়না একজন বহুরুপী মন্দ মানুষের প্রতিনিধি। সেজন্যই এ ছবির নাম ‘আয়নাবাজি’।
বাংলানিউজ: ট্রেলার প্রকাশের পর থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
চঞ্চল: প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। অনলাইনে ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে বেশ আলোচনা লক্ষ্য করছি। গানগুলোও জনপ্রিয় হয়েছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে দর্শকের মধ্যে ছবিটি দেখার প্রতি ব্যাপক আগ্রহ আছে। তারা সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটি দেখলেই আমরা সার্থক। আশা করছি, অনেকদিন পর দর্শক একটি ভালো ছবি দেখবেন। আর প্রতিটি গান এখানে গল্পের একেকটি ঘটনার অংশ।
বাংলানিউজ: ট্রেলারে আপনার চরিত্রটা রহস্যধর্মী মনে হলো?
চঞ্চল: আয়না হলো একজন রহস্যমানব। শুরু থেকে শেষ অবধি ছবিটি এতোটাই রহস্যে ঘেরা যে দর্শক পলকও ফেলতে পারবে না! আসলে আমরা প্রত্যেকেই ভিন্নরুপী। জীবনের ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা সেসব রুপে অভিনয় করি। এজন্য তখন একেকটি চরিত্রের জন্ম হয়। তেমনই কয়েকটি চরিত্র দেখা যাবে ‘আয়নাবাজি’তে। মানুষের জীবনচরিত কিছু ঘটনা রয়েছে এতে। হয়তো ঘটনাগুলো দর্শকদের কারও জানা কিংবা অজানা। আমার মনে হয়, পুরো ছবি দেখলে তারাই রহস্যের জট ছাড়াতে পারবেন।
বাংলানিউজ: ছবির ছয়টি ভিন্ন চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কীভাবে?
চঞ্চল: আমি চরিত্রনির্ভর অভিনেতা। বিভিন্ন চরিত্রে কাজ করাই আমার লক্ষ্য। এটা এক ধরণের ক্ষুধাও বলতে পারেন। আমার প্রতিটি কাজের আগে নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ করি। প্রত্যেকটা চরিত্র আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে চাই। এ ছবির ছয়টি চরিত্র আমার অভিনয়ের ক্ষুধা একটু হলেও মিটিয়েছে। ভিন্ন চরিত্রে প্রবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রুপ সহায়ক হয়েছে। প্রতিটি চরিত্রের রুপসজ্জা আয়নায় দেখে সেটা নিজের মধ্যে ধারণের চেষ্টা করেছি। কলকাতার স্বনামধন্য রূপসজ্জাকর মোহাম্মদ আলী ভাই অসাধারণভাবে আমার চরিত্রগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে সাজিয়ে দিয়েছেন। অনেক পরিশ্রম দিয়ে চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছি। নিজেকে চরিত্রগুলোর সঙ্গে মানানসই করতে ১৫ কেজি ওজন কমাতে হয়েছে। কয়েক মাস ধরে মহড়াও করেছি।
বাংলানিউজ: ‘আয়নাবাজি’র একটি সংলাপ- ‘পৃথিবী আমার মঞ্চ আর আমি একজন অভিনেতা’। কথাটি কতোটা বিশ্বাস করেন?
চঞ্চল: এটি একটি আধ্যাত্মিক ধরণের কথা। এর পেছনে অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আসলেই আমরা প্রতিনিয়ত অভিনয় করছি। পৃথিবীতে সবাই যেন একেকজন অভিনেতা। জীবনসংগ্রামে টিকে থাকতে আমরা রুপ বদলাচ্ছি, এভাবেই একেকটি চরিত্রে প্রবেশ করে অভিনয় করছি।
বাংলানিউজ: শুটিংয়ের কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা মনে পড়ে?
চঞ্চল: এটা বলে শেষ করা যাবে না। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে ছবিটি করতে গিয়ে। একেকটি চরিত্রে অভিনয় করতে যাওয়া আমার জন্য বড় যুদ্ধ ছিলো। এগুলো একেক করে শেষ হলে ভাবতাম একটা যুদ্ধ শেষ করলাম! কারাগারের ভেতরেও ছবিটির শুটিং হয়েছিলো। সেখানে কয়েদিদের সঙ্গে থেকেছি। তাদের সঙ্গে মিশেছি। এমনকি তারা যে ঘরগুলোতে থাকে সেখানে থেকেছি। সব মিলিয়ে বৈচিত্রময় কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে।
বাংলানিউজ: আপনি বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এবার অমিতাভ রেজার সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগলো?
চঞ্চল: তিনি গুণী নির্মাতা। বিজ্ঞাপনচিত্র ও নাটকে অনেকদিন ধরেই মানসম্পন্ন কাজ উপহার দিচ্ছেন আমাদের। তার একটি নাটকে অনেক আগে অভিনয় করেছিলাম। ‘আয়নাবাজি’ অমিতাভ রেজা পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। বিশেষ যত্ন নিযে ছবিটি বানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া চিত্রগ্রাহক হিসেবে ছিলেন রাশেদ জামান। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানের একটি ছবি নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে। দর্শক সিনেমা হলে গিয়ে ছবিটি দেখলে টাকা উঠে আসবে, ফলে নির্মাতারা আরেকটি ভালো কাজ করার সাহস পাবেন।
বাংলানিউজ: ছবিটি নিয়ে আপনি কতোটা আশাবাদী?
চঞ্চল: আমরা রাজধানী ঢাকার মোট ২৫টি প্রেক্ষাগৃহে ‘আয়নাবাজি’ মুক্তি দিতে যাচ্ছি। মুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই এটি পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশা করছি। আমার বিশ্বাস, ছবিটি একবার দেখলে দর্শক আবার দেখতে চাইবেন। সেই সঙ্গে তারা বন্ধুবান্ধবকেও দেখার পরামর্শ দেবেন। একশ্রেণির দর্শক আছেন যারা ভালো ছবি দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। আমি বলবো ‘আয়নাবাজি’ তাদের জন্যই। শতভাগ না, ছবিটি নিয়ে আমি হাজারভাগ আশাবাদী।
বাংলানিউজ: আপনাকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও শ্রোতারা পেয়েছে। গান নিয়ে পরিকল্পনা কী?
চঞ্চল: আমি একজন অভিনেতা। সবাইকে এই পরিচয়টি দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি গান করি শখে। এ ছাড়া ভক্তদের অনুরোধ থেকেও গান করা হয়। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমি একজন অভিনেতা।
আরও পড়ুন>>>
* গ্যালারিতে ছদ্মবেশে ‘আয়নাবাজি’র চঞ্চল
* ‘আয়নাবাজি’ দেখা যাবে আরটিভিতে
* ঈদের পর ‘আয়নাবাজি’
* তিন জনের ‘আয়নাবাজি’ কানে
বাংলাদেশ সময়: ০১২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬
জেএমএস/জেএইচ