ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

চলে গেলেন স্বর্ণপামজয়ী আন্দ্রেই বাইদা

বিনোদন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
চলে গেলেন স্বর্ণপামজয়ী আন্দ্রেই বাইদা আন্দ্রেই বাইদা (১৯২৬-২০১৬)

পোল্যান্ডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে অন্যতম আন্দ্রেই বাইদা আর নেই। রোববার (৯ অক্টোবর) রাতে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

তার বয়স হয়েছিলো ৯০ বছর। সম্প্রতি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিলো বলে বিবিসি জানিয়েছে।  

বাইদার মৃত্যুতে ভক্ত, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও রাজনৈতিক নেতারা অনলাইনে বিভিন্ন মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন। চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, পোলিশ চলচ্চিত্র দীর্ঘদিন শোকাচ্ছন্ন থাকবে। পোল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের বর্তমান প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, ‘বাইদা ছিলেন আমাদের বৃন্ত। তার চোখ দিয়ে আমরা নিজেদের ও পোল্যান্ডকে দেখেছি। এভাবে আর কেউই দেশটাকে ভালোভাবে দেখাতে পারেনি। ’

চলচ্চিত্র পরিচালক ও পোলিশ ফিল্মমেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জাসেক ব্রমস্কি টিভিএনটোয়েন্টিফোরকে বলেছেন, ‘আন্দ্রেই বাইদা ছিলেন বিখ্যাত পোলিশ শিল্পী। বিশ্বে সবচেয়ে পরিচিতদের মধ্যেও অন্যতম। পোল্যান্ড ছিলো তার আবেগ। আমাদের নির্মাতা সমাজে তিনি ছিলেন শক্তিমত্তার স্তম্ভ। সবাই তাকে ঘিরে রাখতো। নির্মাতাদের জীবনযাপনে তার অস্তিত্ব ছিলো সবসময়। তিনি ছিলেন পরামর্শদাতা, আমাদের আদর্শ। ’

আন্দ্রেই বাইদার কাজে গুরুত্ব পেয়েছে পোল্যান্ডের সংস্কৃতি ও ইতিহাস। ছয় দশকের চলচ্চিত্র জীবনে ৪০টিরও বেশি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণ করেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ক্যানাল’, ‘ম্যান অব মার্বেল’, ‘ম্যান অব আয়রন’, ‘ক্যাটিন’, ‘দ্য মেইডস অব উইলকো’ প্রভৃতি। এসবের বেশিরভাগই নিজের দেশের যুদ্ধকালীন উত্তাল সময় ও বামপন্থী ইতিহাসে অনুপ্রাণিত। তার শেষ ছবি ‘আফটার ইমেজ’-এ বলা হয়েছে এক চিত্রকরের গল্প। পোল্যান্ডে যুদ্ধ-পরবর্তী স্তালিনবাদী সরকারের সময় নানানভাবে ভুগতে হয়েছে তাকে। বরাবরই শিল্পকলায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি বার্তা দিতে চেয়েছেন তিনি।

১৯৮১ সালে আন্দ্রেই বাইদার ‘ম্যান অব আয়রন’ কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপাম জেতে। এ ছাড়া তার ছবি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রৌপ্যভল্লুক জিতেছে এবং অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছে চারবার। পাঁচ দশকের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০০ সালের ২৬ মার্চ সম্মানসূচক অস্কার দেওয়া হয় তাকে। তার হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন হলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী জেন ফন্ডা।

পোলিশ শহর সুওয়ালকিতে আন্দ্রেই বাইদা জন্মেছিলেন ১৯২৬ সালে। ফিল্ম স্কুলে ভর্তির আগে তিনি চিত্রকলায় পড়াশোনা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিদের দখলে থাকা ওয়ারশর প্রেক্ষাপটে নিজের প্রথম ছবি ‘জেনারেশন’ পরিচালনা করেন তিনি। এরপর ‘ক্যানাল’, ‘অ্যাশেজ’ ও ‘ডায়মন্ডস’ ছবি তিনটি বানিয়েছেন। এগুলোকে বলা হয় পোল্যান্ডের যুদ্ধকালীন জীবনযাপনের ট্রিলজি।  

এর মধ্যে ১৯৫৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ক্যানাল’-এ উঠে এসেছে ওয়ারশ অভ্যুত্থানে গুপ্ত পোলিশ সেনাবাহিনীর সংগ্রাম। বাইদার ১৯৭৫ সালের ছবি ‘দ্য প্রমিজড ল্যান্ড’ বলেছে পোল্যান্ডের অধিবাসীদের কথা। যেখানে এক জার্মান ও এক ইহুদি ঊনিশ শতকে দেশটির প্রাণকেন্দ্রে একটি কারখানা গড়ার চেষ্টা করে। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ম্যান অব মার্বেল’ ছবিটির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে সেন্সরের কাঁচি চালিয়েছেন বামপন্থী কর্তারা। এতে তুলে ধরা হয় পঞ্চাশের দশকের শুরুতে স্তালিনবাদী সরকারের আমলে রাজনৈতিক দুর্নীতির চিত্র।

১৯৯০ সালে পোল্যান্ডে প্রথম অবাধ নির্বাচনের পর দুই বছরের জন্য পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাইদা। তিনি চারবার বিয়ে করেছেন। মৃত্যুর সময় চতুর্থ স্ত্রী অভিনেত্রী ও মঞ্চের শিল্প নির্দেশক ক্রিস্তিনা জ্যাকওয়াতোভিচ এবং তার কন্যা ক্যারোলিনাকে পাশে পেয়েছেন বাইদা।

বাংলাদেশ সময় : ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।