মৌলভীবাজার: সারাক্ষণ তার চঞ্চলতা! এগাছ থেকে ওগাছ। এক-দুই সেকেন্ড যে বিশ্রাম নেবে তার কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশে প্রায় আট প্রজাতি কাঠবিড়ালীর দেখা মেলে। এদের মাঝে একটি বিশেষ প্রজাতি ‘লালপেট-কাঠবিড়ালী’। নির্জন প্রাকৃতিক বনে একাকী নিঃশব্দে হেঁটে যাওয়ার মাঝে গাছের ডাল হঠাৎ শব্দ করে উঠলে তখন হয়তো দেখা যায়! তখনই তার ঘুটঘুটে কালো শরীরের দিকে চোখ গিয়ে পড়ে!
মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ প্রাণীটি সুউচ্চ অবস্থানে বিচরণ। ভাগ্য ভালো থাকলে খুব সহজে দেখা মেলে। নয়তো তাকে লক্ষ্য করে খুঁজতে থাকলে বেলাই গড়াবে, কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে তখন বনের গহীনে। আপন মনে গাছের সুউচ্চ ডালে বিচরণ করে খাদ্য সংগ্রহে ব্যস্ত।
শরীরজুড়ে তার কালো রঙের উজ্জ্বল বৈচিত্র্য। সবুজ প্রকৃতির মাঝে হঠাৎ করে কালো কোনো প্রাণী গাছ বেয়ে ধেয়ে আসার বিষয়টি বহুমাত্রায় হৃদয়ে আনন্দ ছড়ায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক ড. মনিরুল খান বাংলানিউজকে বলেন, এ কাঠবিড়ালীর বাংলা নাম নেই। তবে ‘লালপেট-কাঠবিড়ালী’ অথবা ‘পালাসের কাঠবিড়ালী’ বলা যেতে পারে। এর ইংরেজি নাম Pallas’s Squrrel এবং বৈজ্ঞানিক নাম Callosciurus erythraeus। এ কাঠবিড়ালীর শরীরের ওপরের অংশ কালো হলেও নিচের দিকটি লাল। এই লাল অংশটি সব সময় দেখা যায় না। অনেক মনে করেন এটা কালো কাঠবিড়ালী। আসলে তা ঠিক নয়।
তিনি আরও বলেন, লালপেট-কাঠবিড়ালী দিবাচর এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা গাছের উঁচু ডালেই বিচরণ করে থাকে। উঁচু ডাল থেকে নিচের দিকে নেমে আসে না তেমন একটা। এদের মাথা থেকে দেহের দৈর্ঘ্য ১৬ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার এবং লেজের দৈর্ঘ্য ১১ থেকে ২৬ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। অপ্রাপ্ত এবং প্রাপ্তবয়স্ক ভেদে এদের শারীরিক ওজন ৩১০ থেকে ৪৬০ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে।
এদের খাদ্য তালিকায় কচিপাতা, পাহাড়ি গাছের বীজ, বাদাম এবং বিভিন্ন ফলমূল। মার্চ-সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম। এ প্রাণীটি প্রায় ১৭ বছর পর্যন্ত চিরসবুজ পাহাড়ি প্রকৃতিতে বেঁচে থাকে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) বাংলাদেশের লাল-তালিকা অনুযায়ী লালপেট-কাঠবিড়ালী ‘ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত’ প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২৩
বিবিবি/এএটি