ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চা-গাছে অনেকক্ষণ থাকা ‘সবুজ সুইচোরা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
চা-গাছে অনেকক্ষণ থাকা ‘সবুজ সুইচোরা’ গাছের ডালে বসে আছে সবুজ সুইচোরা। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: শীত তখনও এতটা জেঁকে বসেনি প্রকৃতিতে। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ি বুনো খরগোশের সন্ধানে।

কেননা, মাথায় মধ্যে বারবারই ঘুরপাক খায় – প্রকৃতির দ্রুতগামী এ প্রাণীটি ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে চা-বাগান এলাকা থেকে। তার অন্তত একটি আলোকচিত্র ধরে রাখা খুব বেশি প্রয়োজন।  ওই তাগিদ থেকেই বুনো খরগোশের উদ্দেশ্যেই মাঝেমধ্যে বেরিয়ে পড়া। সেদিনও তা-ই হলো। হাঁটছি তো হাঁটছি! চা-বাগানের মেঠোপথ পেরিয়ে। নিঃসঙ্গ একাকী। শুকিয়ে যাওয়া বিল পেরিয়ে। অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে চারপাশ ততক্ষণে তন্নতন্ন হয়ে গেছে। প্রতিবারের মতো এবারও শূন্যতার প্রাপ্তি। গভীর প্রাপ্তি!

তবু ধৈর্য হারানো চলবে না কিছুতেই। আজ না হোক! কাল না হোক! এমন কি পরশু না হোক! ‘একদিন না একদিন অবশ্যই তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে’ - সেই বিশ্বাসটুকুকে বুকে ধারণ করেই নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলা। অভিজ্ঞতা থেকে অন্তত এটুকু উপলব্ধিতে যোগ করে নিতে বেগ পেতে হয় না যে, পাখি এবং বন্যপ্রাণীর চিত্রধারণের প্রতিটি অগ্রযাত্রায় ধৈর্য একটি মূল্যবান অর্জন। মননে ক্রোধের ঝড় বয়ে দিয়ে সেই মূল্যবান অর্জনকে হত্যা করা বোকামো ছাড়া আরও কিছুই নয়! এমন নানা ভাবনা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ ‘সবুজ-সুইচোরা’র সঙ্গে দেখা। তবে একটু অন্য জায়গায়। ও একাকী বসেছিল ওই সকালে। সাধারণত একটি স্থানে এত সময় ধরে বসে থাকার পাখি নয়। বেশ চঞ্চল প্রকৃতির পাখি। স্থিরভাবে বসে থাকতে কম দেখা যায়। এবার তাকে চা-বাগানের চা-গাছের একটি ডালে অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকতে দেখা গেল। প্রায় পুরো ২০ মিনিট এই সবুজপাখিময় দৃশ্যের সঙ্গী হয়েছিলাম।



এর কী কারণ থাকতে পারে? এমনও হতে পারে- সঙ্গী তাকে কথা দিয়ে এসেছিল যে, সে আসবে। তার জন্য অপেক্ষা করতে একান্তে। বেচারা, একান্তে বসে বেদনার প্রহর গুনছে! অথবা মান-অভিমানের পর্বকে চাঙা করে তুলতে সে নিজেই একাকীত্ব আর নির্জনতাটুকুর সঙ্গী হয়েছে। কিংবা, পাখিটি উড়ন্ত ক্লান্ত! দৌড়ঝাঁপ দিতে দিতে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। ফলে যন্ত্রণাহীন প্যাঁচাল থেকে মুক্তি পেতেই তার এই একাকী বৈঠক! যে কেউ তার নিজের মতো করে ভেবে নিতেই পারেন এই দৃশ্যটুকুর গভীর সৌন্দর্য।  

‘সবুজ-সুইচোরা’ পাখিটিকে কেউ কেউ ‘সবুজ বাঁশি’ বলে থাকেন। এর ইংরেজি নাম Green Bee-eater এবং বৈজ্ঞানিক নাম Merops orientalis। ‘সবুজ’ শব্দটি তার নামের সাথে জুড়ে দেয়। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, তার পুরো দেহসমেত দৃষ্টিনন্দন সবুজ রঙের সৌন্দর্য ছড়ানো। পুরো দেহ সবুজ। তবে ঘাড়, কাঁধ-ঢাকনি সোনালি রঙের। এর দেহের আরেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, লেজের মাঝখানের পালকটি বেশ সরু এবং লম্বা। মাক্সের মতো লম্বা-কালো-রং চোখ বরাবর চলে গেছে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে নানা আকৃতির ডানাওয়ালা পোকা, ফড়িং, মথ প্রভৃতি। দ্রুত বেগে ডানা ঝাপটে শিকারে এরা বেশ পটু।

‘সবুজ সুইচোরা’ বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। অর্থাৎ এদের উপস্থিতি সারা দেশেই রয়েছে। একটু ভালো করে খেয়ার করলেই এদের চঞ্চলতাময় সৌন্দর্যে সহজেই মুগ্ধ হওয়া যায়। আমাদের প্রতিটি চা-বাগানের সবুজ প্রকৃতিকে এরা গানে গানে ভরিয়ে রাখে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২৪
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।