ঢাকা, বুধবার, ৩ পৌষ ১৪৩১, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সুন্দরবন যেন ‘বানরবন’

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
সুন্দরবন যেন ‘বানরবন’

সুন্দরবন থেকে ফিরে: জোটবদ্ধ হয়ে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেরাচ্ছে একদল বানর। ঝাঁকে ঝাঁকে এসব বানরের বাঁদরামি ও চেঁচামেচিতে মুগ্ধ হচ্ছেন পর্যটকরা।

পর্যটকদের দেখামাত্রই খাবারের জন্য ছুটে আসে বানরের দল। কোনো কোনো বানর খাবার না দিলে ক্ষীপ্ত হয়ে পর্যটকদের আক্রমণ করে। সঙ্গে থাকা ব্যাগ বা খাবার ছিনিয়ে নিতেও চেষ্টা করে। অনেক পর্যটক বানরদের বিস্কুট, চিপসসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে থাকেন।

সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী ও কুমির প্রজননকেন্দ্রে এমন দৃশ্য হরহামেশাই দেখা মেলে। কেউ কেউ বানরের আধিক্য দেখে সুন্দরবনকে বান্দরবন বলেন। আবার কেউ কেউ বানরকে সুন্দরবনের মোড়ল বলে অভিহিত করেন।  



সম্প্রতি বাগেরহাটের রামপাল থেকে একঝাঁক বন্ধু ও স্বজনদের নিয়ে ঘুরতে আসা সামিউল হক সামি বলেন, আমি সুন্দরবনে ঘুরতে এসেছি। এত বানর দেখে মনে হচ্ছে সুন্দরবন না বান্দরবনে এসেছি। এটা যে সুন্দরবন কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না। প্রচুর বানর এখানে। এর আগে দুবার এসেছি, এত বানর কখনো দেখিনি।

বঙ্গোপসাগরের পাদদেশে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার পরিধির সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য প্রাণী বানর। বনের কেওড়া, বাইন ও সুন্দরী গাছের ডালে ডালে বিচরণ এ প্রাণীটির। সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি বানর দেখা যায় করমজল, নলিয়ান, জামতলা, কটকা, কচিখালি, কলাগাছিয়া হাড়বাড়িয়াসহ ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলোতে। বনের ভেতরে দুই-একদিন থাকলে চোখে পড়বে হরিণের সঙ্গে বানরের বন্ধুত্বের দৃশ্য। হরিণের জন্য বানর গাছ থেকে বিভিন্ন পাতা ও ফল ফেলে দেয়। নিচে বসে সেগুলো আয়েশ করে খায় হরিণ।



জানা যায়, সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণের পরই এ বনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বানর। চলতি শীত মৌসুমে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রগুলো এখন মুখর পর্যটকদের পদচারণায়। পর্যটকদের দেখলেই খাবার খেতে ছুটে আসে দলবেঁধে বানর। দুষ্টু বানরের দুষ্টামি, চঞ্চলতা, ক্ষিপ্রতা পর্যটকদের খুব সহজেই মুগ্ধ করে।

পর্যটন স্পটগুলোতে আসা বনকর্মী ও ট্রলার চালকরা জানান, মাঝে মধ্যে পর্যটকরা বনে ঢুকলে বানর ট্রলারে ঢুকে তাদের খাবার, পোশাকসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বনের মধ্যে লুকিয়ে যায়। মানুষের উপস্থিতি টের পেলে হরিণ পালিয়ে গেলেও বানর অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে। বানরের সঙ্গে পর্যটকরা দুষ্টামি করলে অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে বানর কামড় দেয়।



করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবীর বাংলানিউজকে জানান, সুন্দরবনে বানরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। করমজলে পর্যটকরা এসে বানরের সঙ্গে মজা করে। মাঝে মধ্যে খাবার দিতে দেরি হলে বানর ক্ষিপ্ত হয়ে পর্যটকদের কামড় বা আঁচড় দেয়।

সুন্দরবনে বানরের সংখ্যা
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) জরিপের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বাংলানিউজকে জানান, সুন্দরবনে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪টি বানর রয়েছে, যা ২০০৪ সালে ছিল মাত্র ৫১ হাজার। যে কারণে বলা যায় সুন্দরবনে বানর বেড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
এমআরএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।