মৌলভীবাজার: লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে পাহাড়ি ছড়া। প্রাণপ্রকৃতির টিকে থাকার একমাত্র জলধারা এটি।
এরই মাঝে মাঝে ঝোপঝাড়। যেখানে লুকিয়ে থাকে নানান স্থানীয় জীববৈচিত্র্য। এই সব ঝোপঝাড়কে প্রাকৃতিকভাবে সাজিয়ে তুলতে জন্ম নেয় নানান প্রজাতির লতাগুল্ম। এর একটির নাম ‘নীল বনলতা’।
ফুলটির সাদা ৫টি পাপড়িযুক্ত অবয়বের ভেতর রয়েছে নীলচে রঙের মৃদু শোভা। এই মৃদু নীলের জন্য হয়তো উদ্ভিদ গবেষকরা এর নামকরণ করেছে ‘নীল বনলতা’। এই মৃদু নীল সহজেই দৃশ্যমান নয়। তবে দৃষ্টির গভীরতায় অবশ্যই দৃশ্যমান। তবে কোনো কোনো ফুলের পাপড়িগুলোতে নীলের অবস্থান একেবারে মৃদু। যা এক পলকে দেখলে সাদাই মনে হয়!
এ জাতীয় গুচ্ছাকার বুনো ফুলগুলোই নীরবে প্রাকৃতিক বনের চির সুস্থতার ঘোষণা দেয়।
পাহাড়ি এই বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার উপরে অপূর্বভাবে ফুটে আছে এই লতানো উদ্ভিদ। ফুলগুলোকে উদ্দেশ্য করেই প্রতিনিয়তই ছুটে আসে উড়ন্ত ক্ষুদ্র প্রাণগুলো। পাহাড়ি ভ্রমরকে দেখা গেল সেই ফুলের মধু সংগ্রহ করতে দ্রুতবেগে ছুটে আসতে। এফুল-ওফুল করে পুরো ঝোপের সবগুলো ফুলের মধু তার সংগ্রহ করা হয়ে গেছে তখন। সত্যি কী অপূর্ব সেই দৃশ্য!
স্থানীয় দায়িত্বরত বন কর্তৃপক্ষ আব্দুল মালেক কথা প্রসঙ্গে জানান, এই ফুলটি কিন্তু কয়েক মাস টিকে থাকে। আমাদের বিট সংলগ্ন বনজঙ্গলে ফুটে আছে। এই ফুলগুলো ফুটলে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। ফুলগুলোর নাম আসলে জানি না।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন, একটি বনে যখন এ জাতীয় উদ্ভিদের ফুলগুলো ফোটে তখন একে কেন্দ্র করে মৌমাছি, প্রজাপতিসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্যরা এর মধু সংগ্রহ করতে ছুটে আছে। অর্থাৎ ওই উড়ন্ত কীটগুলো বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পায় এর ভেতর।
উদ্ভিদ গবেষক জিনিয়া নাসরিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, এ ফুলটির নাম ‘নীল বনলতা’। বাঁশবনে ও পাহাড়ে দেখা যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Thunbergia grandiflora। এরা লতানো উদ্ভিদ। পেন্ডুলামের মতো ঝুলে থাকে। আকারে বড় বলে নাম Grand flora।
তিনি আরও বলেন, এরা বাসরলতা, নীলঘণ্টা ফুল, সুগন্ধি বনলতাদের পরিবারের উদ্ভিদ। Acanthaceae এর পরিবারের নাম। এই পরিবারের অনেক উদ্ভিদ আছে আমাদের দেশে। এটা আমাদের বুনো উদ্ভিদ। পেন্ডুলামের মতো ঝুলে থাকে বলে এদের কমন নাম Clock vine। এর লতা ২০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২৪
বিবিবি/আরএ