অথচ এই প্রাণীটিই আমাদের প্রকৃতির পরম বন্ধু। ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে আমাদের শাক-সবজিক্ষেতে বা আমাদের গাছগাছালিপূর্ণ বাগানে সুরক্ষা দেয়।
এই উপকারী গিরগিটির ইংরেজি নাম Common Garden Lizard এবং বৈজ্ঞানিক নাম Calotes versicolor । এর লেজসহ দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ থেকে ৩৭ সেন্টিমিটার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণি গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, স্থানীয়ভাবে অনেকে এটাকে ‘রক্তচোষা’ বলে। আমরাও ছেলেবেলায় একে জেনে এসেছি এটা রক্তচোষা এবং এর আশপাশ দিয়ে কেউ গেলে তার রক্ত চুষে নিয়ে লাল হয়ে যায়-এ কুসংস্কারের কারণেই লোকজন এটাকে দেখলেই মেরে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, যদিও এ গিরগিটি সারাদেশেই পাওয়া যায় কিন্তু এই কুসংস্কারজনিত হত্যার কারণে এই প্রাণি অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই প্রাণিটির রক্তচোষার ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভুল। এর কোনো প্রকার বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। কোনো প্রাণীই দূর থেকে মানুষের রক্ত চুষতে পারবে না।
রক্তচোষা নামক ভুল নামের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ প্রাণীটির শরীর হঠাৎ করে লালবর্ণের হয় বলে মানুষ ভুলভাবে তার নাম দিয়েছিল রক্তচোষা। এ লাল হয়ে উঠার কারণটি হলো- এই প্রাণীটা যখন কোনো কারণে বিপদগ্রস্থ হয় বা যখন যে চারপাশকে তার হুমকি মনে করে তখন সে খুব দ্রুত তার ঘাড় থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত অবস্থিত মেলামিনগুলোকে পরিবর্তন করে লালবর্ণ ধারণ করে ফেলে। যেহেতু লাল হচ্ছে একটি এলার্মিং কালার; তাই গিরগিটির শরীর দেখে বিভিন্ন শিকারি প্রাণী ওর থেকে দূরে সরে যায়। এই লাল রঙ তৈরি করে সে শত্রুকে ভয় দেখায়।
প্রজনন মৌসুম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রজনন মৌসুমে এক পুরুষ গিরগিটির সঙ্গে অন্য পুরুষ গিরগিটির প্রতিযোগিতা হয়। পুরুষ গিরগিটিরা এভাবে শরীরের ভেতর থাকা মেলামিনগুলোকে লাল রঙে পরিবর্তন করে তার স্ত্রী গিরগিটির কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলে। তার সঙ্গিনীকে ভুলানোর জন্যই প্রজনন ঋতুতে সে তার শরীর লাল করে ফেলে।
এ প্রাণীটিকে দেখে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এটি পুরোপুরিভাবে আমাদের পরিবেশের উপকার করে। এর প্রধান খাবারই হলো পোকামাকড়। ওরা ওইসব পোকামাকড়ই খায় যেগুলো শাকসবজির ক্ষতি করে। এরা পতঙ্গ দমনে বিরাট ভূমিক পালন করে চলেছে-বলেন বন্যপ্রাণি গবেষক ড. কামরুল হাসান।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০১৮
বিবিবি/আরআর