ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বন ধ্বংসে বিপন্ন বিরল ‘ফুলমাথা-টিয়া’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৯
বন ধ্বংসে বিপন্ন বিরল ‘ফুলমাথা-টিয়া’ পাহাড়ি বনের মগডালে একাকী বসে আছে ‘ফুলমাথা-টিয়া’। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: সন্ধ্যা নামছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের প্রবেশমুখে একঝাঁক টিয়ার ডাক। নির্জনতা ভেঙে ডেকে ওঠে একত্রে। কমে আসা আলোয় নীড়ে ফিরতে ব্যস্ত ওরা। অন্যান্য সঙ্গীদের অনুসারী হতে চাচ্ছে তাদের কেউ কেউ। তাই তাদের এমন সম্মিলিত শব্দধ্বনি!

পাখিটির নাম ‘ফুলমাথা-টিয়া’। তবে আরও একটি বাংলা নাম হলো হীরামন পাখি।

এর ইংরেজি নাম Blossom-headed Parakeet এবং বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula roseata। ছবিতে প্রকাশিত পাখিটি পুরুষ ফুলমাথা-টিয়া। একই প্রজাতির পাঁচ-দশটি পাখির ছোট দলে এদের দেখা যায়।
 
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ফুলমাথা-টিয়া চা বাগান সংলগ্ন বন আর পাহাড়ি পরিবেশের বিরল পাখি। এটি আপনি অন্য কোথাও পাবেন না। এরা বৃক্ষবহুল এলাকার পাখি। শুধু সিলেট বিভাগের চিরসবুজ ও চা বাগানেই এদের পাওয়া যায়। কৃষ্ণচূড়া, শিমুল প্রভৃতি মোটা মোটা ফুলের রসালো পাপড়ি, বিভিন্ন ফল, কিছু পাতা, কুঁড়ি, ফুলের মিষ্টি রস, শস্যদানা এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে।
 
এদের দৈহিক বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাখিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখিটির মাথা গোলাপি; দেহের প্রায় পুরোটাই ঘাস সবুজ। মাথার চাঁদির সামনের অংশ ও ঘাড় গোলাপি-লাল। ঠোঁটের উপরটা ফিকে-কমলা এবং ঠোঁটের নিচ বাদামি। চোখ হলদে। থুতনি ও গলায় কালো লাইন। আর স্ত্রী পাখিটি ফিকে-ধূষর নীল মাথা ও থুতনি ছাড়া পুরু দেহই সবুজ। তবে গলার পেছনটা হলদে-সবুজ ও ঠোঁট ফ্যাকাসে।
 
পূর্ব থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে ফুলমাথা-টিয়ার বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে বলে জানান ইনাম আল হক।
 
পরিবেশ ধ্বংস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বনের সংখ্যা এমনিতেই কম। এক্কেবারে হাতে গোনা। তারপরও যেটুকু রয়েছে তাও নানাভাবে ক্রমশ উজার ও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই এই ফুলমাথা-টিয়াসহ নানা জাতের পাখি ও বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করতে প্রাকৃতিক বনগুলো যে কোনো মূল্যে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ’
 
সৃজিত বাগান নয়; আমরা বারবার প্রাকৃতিক বনের কথা বলেছি এবং মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। অর্থাৎ বছরের পর বছর ধরে শতসহস্র ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ-লতাগুল্মের মিলিত প্রচেষ্ঠায় গড়ে উঠে প্রাকৃতিক বন। প্রাকৃতিক বন কখনই মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ শুধু পারে এই প্রাকৃতিক বনগুলোকে রক্ষা ও সম্প্রসারণ করতে। মানুষের তৈরি বন হলো সৃজিত বাগান। এই প্রাকৃতিক বনই দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বন থাকলে এই ফুলমাথা-টিয়া পাখিগুলোও থেকে যাবে বলে জানান প্রখ্যাত পাখিবিদ ইনাম আল হক।   
  
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৯
বিবিবি/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।