ছেলেবেলা থেকেই আমাদের সবার—একজন কেউ না কেউ সুপার হিরো থাকে। কারো হিরো সুপারম্যান তো কারো আবার স্পাইডারম্যান।
সুপারম্যান
সুপারম্যানের যাত্রা শুরু আজ থেকে ৭৬ বছর আগে জেরি সিজেল ও জো শুস্টার নামের দুইজন আমেরিকানের হাত ধরে। প্রচণ্ড শক্তি, জেট প্লেনের মতো ওড়ার গতি, তীক্ষ্ণ শ্রবণ শক্তির অধিকারী সুপারম্যান তার পুরো ক্ষমতা প্রয়োগ করে মানুষের কল্যাণে। আকাশ থেকে কোনো বিমানকে মাটিতে পড়তে দেখলে মুহূর্তেই তা থামিয়ে দিতে পারে সুপারম্যান। কিংবা দুর্ঘটনা ঘটার আগেই থামিয়ে দেয় বিদ্যুৎ বেগে ছুটে চলা বুলেট ট্রেন। শুধু কি তাই? দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের শায়েস্তা করতেও জুড়ি নেই সুপারম্যানের।
১৯৩৮ সালে প্রকাশিত সুপারম্যানের প্রথম কমিকসে আছে তার জন্ম বৃত্তান্ত।
ক্রিপটন গ্রহ—ভিলেন সুপার কম্পিউটার ব্রেন ইয়কের কবলে পড়ে ধ্বংস হওয়ার আগ মুহূর্তে সে গ্রহের বিজ্ঞানী জোর এল তার শিশু সন্তান ক্যালএলকে অটোম্যাটিক রকেটে পাঠিয়ে দেয় পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। আমেরিকার এক কৃষক পরিবারে ক্লার্ক কেন্ট নামে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে সে। আর পৃথিবীর আলো বাতাসে হয়ে ওঠে অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী। এই ক্ষমতা মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে সে ডেইলি প্ল্যানেট পত্রিকায় যোগ দেয় সাংবাদিক হিসেবে। তার অতিমানবীয় কাজের কারণে সাধারণ মানুষ তাকে সুপারম্যান নাম দেয়। সেই থেকে ৭৬ বছর ধরে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে সুপারম্যান। বাস্তবে এমন একজন সুপারম্যান থাকলে কি ক্ষতি হতো!
স্পাইডারম্যান
১৯৬২ সালে আবির্ভাব ঘটে স্পাইডারম্যানের। কীভাবে? স্কুলের এক বিজ্ঞান বিষয়ক প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিল ছোট্ট পিটার পার্কার। এই মেলাতেই একটু অসাবধানতায় তেজষ্ক্রিয় মাকড়শার কামড় খেয়ে বসে সে। ব্যাস! এক কামড়েই মাকড়শাদের মতো জাল বোনা ও দেয়াল বেয়ে ওঠার ক্ষমতা পেয়ে যায় পিটার।
ছেলেবেলায় বাবা-মা হারানো স্পার্ক বড় হচ্ছিল তার কাকা-কাকির কাছে। একদিন দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নিহত হয় তার কাকা। এরপর পার্কার সিদ্ধান্ত নেয় নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখে সন্ত্রাসীদের শায়েস্তা করার। শত্রুদের শায়েস্তা করতে বহুতল ভবন থেকে লাফ দেওয়া কিংবা দেয়াল বেয়ে ওঠা দেখে অচিরেই শহরবাসী তাকে নাম দেয় স্পাইডারম্যান!
স্পাইডারম্যানের জনক কমিকস জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব স্টান লি ও স্টিভ ডিটকো।
সুপারম্যানের সঙ্গে স্পাইডারম্যানের একটি মিল আছে, কী সেটা? দুজনেই পেশায় সাংবাদিক!
ব্যাটম্যান
আপনার কাছে সবচেয়ে সেরা সুপার হিরো কে? যেই হোক, সারা দুনিয়ায় কিন্তু শ্রেষ্ঠ সুপার হিরোর শিরোপা জিতে নিয়েছে ব্যাটম্যান। কারণও আছে। অন্যসব সুপার হিরোদের মতো ব্যাটম্যানের কোনো অলৌকিক শক্তি নেই। স্রেফ বুদ্ধির জোর আর কারিগরি দক্ষতা দিয়ে সাংঘাতিক সব শত্রুদের শায়েস্তা করে দেয় সে। এমনকি শত্রুকে সে কখনো গুলিও করে না। আর এসব বুদ্ধিমত্তা ও কারিগরিজ্ঞানই তাকে এনে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ সুপার হিরোর শিরোপা।
ব্যাটম্যানের আড়ালে তার প্রকৃত নাম ব্রুস। ছেলেবেলায় ছিনতাইকারীদের গুলিতে ব্রুসের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বড় হয়ে বাবার রেখে যাওয়া ওয়েন এন্টাপ্রাইজের মালিক হয় সে। তারপর নিজের শহর গুথামকে শত্রু মুক্ত করার শপথ নেয়। বাসার নিচে মাটির তলায় বসে সে অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করে। তারপর রাতের অন্ধকারে বাদুরের বেশে ডানা মেলে উড়ে আসে গথাম শহরের আকাশে। কোমরে রাখা বেল্টের অস্ত্র দিয়ে শত্রু খতম করতে থাকে। ডানা মেলে আকাশে উড়লেও স্থলপথ ও জলপথে চলার জন্য বানিয়ে নেয় মোটরবাইক ও প্লেন-কাম সাবমেরিন।
ব্যাটম্যানের বয়স আজ ৭৫ বছর। এর স্রষ্টার নাম বব কেন।
আয়রনম্যান
কমিকস জগতে আয়রনম্যানের আগমন ১৯৬৩ সালে। নাম শুনে হয়ত ভাবছেন আয়রনম্যানের পুরো শরীরটাই লোহার। আসলে তা নয়। তার পোশাকটাই কেবল লোহার তৈরি। ভেতরে বাস করে টোনি স্টার্ক নামের এক কোটিপতি অস্ত্র ব্যবসায়ী।
অসাধারণ প্রযুক্তি জ্ঞানের অধিকারী স্টার্ক অস্ত্র ব্যবসা করতেন। একবার অপহরণকারীরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে মারাত্মক একটি অস্ত্র বানিয়ে দিতে বলে। সেই অস্ত্র বানানোর ছলে কৌশলে পালানোর ফন্দি করে স্টার্ক। তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বানিয়ে ফেলে লোহার পোশাক। গুলি যে পোশাককে ভেদ করতে পারে না। আবার চাইলে উড়াও যায়। এ পোশাক পরেই অপহরণকারীদের কবল থেকে পালিয়ে আসে সে। তারপর নিজের কোম্পানির টাকা দিয়ে পোশাকটিকে আরো উন্নত করে নেমে পড়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে।
আয়রনম্যানকে নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাও। তাতে অভিনয় করেছেন মার্কিন অভিনেতা রবার্ট ব্রাউনি জুনিয়র।
আয়রনম্যানেরও জনক স্টান লি।
ব্যাটম্যানের মতো আয়রনম্যানও নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করে বলে জনপ্রিয়তাও ব্যাটম্যানের চেয়ে কম নয়।
এক্সমেন
স্টান লি এক্সমেনেরও স্রষ্টা। আজ থেকে ৫১ বছর আগে কমিকস দুনিয়ায় আবির্ভূত হয় এক্সমেনরা। এক্সমেনদের ছবি এঁকেছিলেন জ্যাক কার্বি।
অদ্ভুত সব ক্ষমতার অধিকারী এক্সমেনরা। তাদের কেউ কেউ দেয়াল ভেদ করে চলে যেতে পারে একপাশ থেকে আরেক পাশে। কেউবা আবার চোখে তীব্র লেজার রশ্মির অধিকারী। কেউ আবার নিজের চৌম্বক শক্তি দিয়ে দুমড়ে মুচড়ে দিতে পারে সুবিশাল ভবন। চাইলে আবার রূপ ধারণ করতে পারে যে কারোরই।
তাদের মধ্যে দুটো দল। এক দল মানুষকে শত্রু ভেবে ধ্বংস করতে চায়। আরেক দল মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দিতে রাজি নয়। ফলে অপর দলটিকে আটকানোই তাদের প্রধান কাজ হয়ে ওঠে। এমনই এক অ্যাকশন হিরোদের দল এক্সমেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এএফএ/টিকে
ফিচার
সুপার হিরোদের কার কবে জন্ম
আতিফ আতাউর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।